নয়া মেরুকরণে মধ্যপ্রাচ্য

Preparation BD
By -
0

সৌদি আরবের জেদ্দায় গত ১৯ মে অনুষ্ঠিত আরব লিগের শীর্ষ সম্মেলনে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ যোগ দেন। সেখানে তাঁকে উষ্ণ সম্বর্ধনা জানান সৌদিসহ অন্যান্য আরব দেশের নেতারা। অথচ ১২ বছর আগে সিরিয়াকে আরব লিগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল।

সাত বছর কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন থাকার পর গত ২৪ মে সৌদি আরব ইরানে তাদের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেয় । কুটনৈতিক সম্পর্কহীন এই সময়টায় দেশ দুটি ছিল পরস্পরের প্রতি চরম যুদ্ধংদেহী ।

বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ঘটনা দুটোর তাৎপর্য গভীর। সন্দেহ নেই, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তরাষ্ট্রিক রাজনীতির সবচেয়ে বড় ক্রীড়াঙ্গন হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সেখানে সচল প্রতিটি ক্রীড়নককে পরষ্পরের সঙ্গে বৈরী অবস্থানে দেখতে অভ্যস্ত গোটা বিশ্ব। তাহলে কোন জাদুতে দেশগুলো এভাবে নিজেদের চেনা রূপ পাল্টে পরষ্পরের সঙ্গে শত্রুতা ভুলে মিত্রতার সুতো গেঁথে নিচ্ছে? এই পরিবর্তন কি আদৌ সুবাতাস, নাকি নতুন কোনো যুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিতবহ?

আরো পড়ুন : সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর

মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক এসব পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট জানতে হলে সংঘাতক্ষুব্ধ অঞ্চলটির ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও গুরুত্বের বিষয়টি বোঝা দরকার ।

ভৌগোলিক বিস্তার

সময়ের পথ ধরে মধ্যপ্রাচ্যের সীমানা পরিবর্তন হয়েছে। একসময় পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এলাকাগুলো, বলকান উপদ্বীপ এবং মিসরকে বলা হতো ‘নিকট প্রাচ্য’। এর প্রধান ভাগ পশ্চিম এশিয়া (লেভেন্ট) হলেও উত্তর আফ্রিকার একটি অংশ, এশিয়া মাইনর, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার অংশবিশেষও এই অঞ্চলের রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত। ভাষা ও গোষ্ঠীগত দিক থেকে মূলত আরবি ভাষাভাষী দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যের দাবিদার। তবে সংলগ্ন তুর্কিভাষী অঞ্চলগুলো এবং উত্তর আফ্রিকার অনারব অংশগুলোও ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের ফলে নানা দোলাচলে আবর্তিত হয়েছে বারবার ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মধ্যপ্রাচ্য বলতে পশ্চিমে আফ্রিকার মরক্কো থেকে পূর্বে এশিয়ার ইরাক পর্যন্ত সকল আরব দেশকেই বুঝায় । এর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয় অনারব দেশ তুরস্ক, ইরান, ইসরায়েল, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান।

দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপট

সুদূর অতীত থেকে বিভিন্ন সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র ছিল মধ্যপ্রাচ্য। বৃহত্তর এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল ব্যবিলনীয়, অ্যাসিরীয়, মেসোপটেমীয়, মিসরীয় ও সিন্ধু সভ্যতা। বিশ্বের প্রধান তিনটি ধর্মের পূণ্যভূমিও এখানে অবস্থিত । ভৌগোলিকভাবে এটি সুদূর অতীত থেকে আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধন ও বাণিজ্য-পথ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। বিশ শতকে অঞ্চলটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তেলের খনি আবিষ্কারের পর। সুয়েজ খাল নির্মাণের পর অঞ্চলটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও প্রাধান্যশীল হয়ে ওঠে।

তবে মধ্যপ্রাচ্যে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপট তৈরিতে তুরস্কের অটোমান সুলতানদের পতনের ঘটনার যোগসাজশ দেখেন বিশ্লেষকরা। যেহেতু মধ্যপ্রাচ্য মূলত মুসলিমপ্রধান, একসময়কার প্রবল প্রতাপশালী অটোমানরা ছিলেন এই মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান নিয়ামক শক্তি। আঠারো ও উনিশ শতক থেকেই অবশ্য আরব দেশগুলোতে পশ্চিমা নানা শক্তির মদদে স্থানীয় গোষ্ঠীতান্ত্রিক রাজবংশগুলো ক্ষমতাসীন হয়েছিল । জনগণের সঙ্গে সম্পর্কহীন এসব রাজবংশ মূলত পশ্চিমের স্বার্থ রক্ষা করে নিজেরা ক্ষমতা ধরে রেখেছিল।

তবে কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয় ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অক্ষশক্তির সঙ্গে অটোমানদের যুথবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি। যুদ্ধে পরাজয়ের পর অটোমান সাম্রাজ্য টুকরো টুকরো হয়ে গেলে এর ওপর ব্রিটেন ও ফ্রান্স আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। মিসরের ওপর ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণ ছিল বরাবরই। এরপর তারা ইরাক, জর্ডান, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও সৌদি আরবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। অন্যদিকে ফ্রান্স নেয় লেবানন ও সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ। উত্তর আফ্রিকা আগে থেকেই ছিল তাদের কব্জায় । এসব কারণে মধ্যপ্রাচ্যে জাতিরাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া শুরুতেই হোঁচট খায়।

১৯৪৮ সালে পরাশক্তিগুলোর সহায়তায় জেরুজালেম ঘিরে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের ফলে দুটো ধৰ্ম আদর্শিকভাবে মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। ১৯৪৮, ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে চারটি আরব- ইসরায়েল যুদ্ধও সংঘটিত হয়। পশ্চিমা অস্ত্র ও কৌশলে পরিপুষ্ট ইসরায়েলের সঙ্গে এসব যুদ্ধে পরাজয় ঘটে আরব দেশগুলোর। অনেক দেশই তাদের সীমানা হারায়। সবচেয়ে বেশি বেদনার শিকার হতে হয় ফিলিস্তিনিদের। তারা গত সাড়ে সাত দশক ধরে পরবাসীর জীবন কাটাচ্ছেন।

পশ্চিমের স্থায়ী রণাঙ্গন

মধ্যপ্রাচ্যের লড়াইয়ে বরাবরই রসদ জুগিয়েছে সুন্নি ও শিয়া-প্রাধান্যশীল দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক পরাশক্তি হওয়ার প্রতিযোগিতা এবং বেশিরভাগ দেশে পরিবারতান্ত্রিক বাদশাহী শাসন । অনেক দেশ কখনও-ই পশ্চিমা ধাঁচের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার দিকে পা বাড়ায়নি। বিশ শতকের বিপুল অর্ধাংশ জুড়ে দেশগুলো পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। ১৯৮০ সালে শুরু হওয়া ইরাক-ইরান যুদ্ধ ছিল বিশ শতকের দীর্ঘতম যুদ্ধগুলোর একটি। এটি শেষ হয় ১৯৮৮ সালের ২০ আগস্ট। দু’বছর পর ১৯৯০ সালের আগস্টে ইরাক আরেকটি যুদ্ধ শুরু করে কুয়েতে সৈন্য পাঠিয়ে ।

আশির দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সৈন্যের উপস্থিতির প্রেক্ষিতে পশ্চিমা শক্তিগুলোর মদদে গড়ে ওঠে তালেবান ও মুজাহিদিনসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। মধ্যপ্রাচ্যে উত্থান ঘটে আল-কায়েদা গোষ্ঠীর বিপুল খনিজ সমৃদ্ধ দেশগুলোতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও গণতন্ত্রহীনতার পরিবেশ জিইয়ে রেখে নিজ নিজ বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করেছে পশ্চিমারা। যুক্তরাষ্ট্র নির্মাণ করেছে সামরিক ঘাঁটি। অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে গণতন্ত্রহীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলো দেশে দেশে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলায় বাধা সৃষ্টি করেছে।

নাইন ইলেভেন থেকে আরব বসন্ত

সহস্রাব্দের শুরুতেই, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা করে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দেয়। প্রথমে আফগানিস্তান এবং পরে ইরাকে আক্রমণ চালানো হয়। এর ফলেই পরের দুই দশকে নানা ধরনের সন্ত্রাসী সংগঠনের আবাসভূমি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ইরাকে একাধিক শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। লেবাননে তৈরি হয়েছে ইরান-সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠী হেযবোল্লাহ।

যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ ও ইরাকে আক্রমণের উপজাত হিসেবে আবির্ভুত হয় আইসিস তথা ইসলামিক স্টেট। তারা ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল ভূখণ্ড দখলে নিয়ে গড়ে তোলে তথাকথিত খেলাফত । ২০১০ সালে উত্তর আফ্রিকার ছোট্ট দেশ তিউনিসিয়া থেকে শুরু হয় তরুণদের গণবিক্ষোভ। এরপর সেটি ছড়িয়ে পড়ে বিশেষত সিরিয়া, মিসর ও লিবিয়ায়। পশ্চিমা গণমাধ্যম এর গালভরা নাম দেয় ‘আরব বসন্ত’। এর ফলে বেশিরভাগ দেশেই কয়েক দশকের পুরোনো রাজতন্ত্র বা স্বৈরশাসকদের পতন ঘটে। কিন্তু কয়েক বছর পেরিয়ে গেলে বোঝা যায়, এর গভীরে ছিল ভিন্ন বাস্তবতা।

পশ্চিমা দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যে আধা-সামরিক বা স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে দীর্ঘদিন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মদদ দিয়েছে। কিন্তু কয়েকটি দেশে নিজেদের নীতির পরিবর্তন করতেই আরব বসন্তের হুজুগ তুলে দেওয়া হয়। ফলে এই দেশগুলো সংঘাত ও অস্থিরতার বৃত্ত থেকে আর বেরুতে পারেনি।

সিরিয়া ও ইয়েমেনে যুদ্ধ

সিরিয়ায় আরব বসন্তের প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট আসাদকে উৎখাতের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হয়। সেখানে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে একে একে জড়িয়ে পড়ে আঞ্চলিক শক্তি থেকে শুরু করে বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলো ইরানের অর্থায়নে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ পাওয়া হাজারো শিয়া মিলিশিয়া লড়াই শুরু করে। পশ্চিমারা আসাদবিরোধী সশস্ত্র মিলিশিয়াদের অস্ত্র ও অর্থ জোগান দেয়। দেশটিতে নিয়মিত হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলও । সর্বশক্তি দিয়ে সিরিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করেছে মার্কিন কংগ্রেস । ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় ২০১৫ সালে। সৌদি আরব ইয়েমেন সরকারকে সমর্থন করে সরকারবিরোধী হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে। ওদিকে হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিতে শুরু করে ইরান।

ইরান ইস্যু

২০১৬ সালে সৌদি আরবে এক শিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রেক্ষিতে তৈরি সংকটে দেশ দুটি কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করে। ২০১৭ সালে সৌদি আরব ও মিত্র দেশগুলো কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে জন্ম দেয় আরেকটি আঞ্চলিক সংকটের। দেশগুলোর বক্তব্য ছিল, কাতারও ইরানের মতোই প্রভাবশালী হয়ে উঠতে চাচ্ছে। কুয়েত এবং ওমানের মধ্যস্থতায় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে অবশ্য সেই অবরোধ তুলে নেয় সৌদি জোট। ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একতরফাভাবে ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেন। ফলে চিরবৈরী মার্কিন-ইরান সম্পর্কের আরও অবনমন ঘটে। এটি চূড়ান্তে পৌঁছে ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি- ইরাকের বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলাইমানির হত্যার পর।

নতুন কূটনীতির নানা সমীকরণ

২০২১-২০২২ সাল থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে বরফ গলতে শুরু করে। আরব বিশ্বে কোণঠাসা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে বিভিন্ন দেশে সফরে আমন্ত্রণ জানানোর মধ্যে পরিবর্তন খানিকটা স্পষ্ট হয়। ২০২৩ সালের ৭ মে মিসরের রাজধানী কায়রোতে আরব লিগের সদর দপ্তরে সংস্থার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সিরিয়াকে পুনরায় সদস্য করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সৌদি আরবের জেদ্দায় ১৯ মে আয়োজিত আরব লিগের সম্মেলনে যোগ দেন আসাদ।

অন্যদিকে, চীনের মধ্যস্থতায় গত মার্চেই সৌদি আরব ও ইরান কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। একইসঙ্গে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধের অবসানে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা দেখা দেয়।

মার্কিন নীতির পরিবর্তন নাকি চীনের আধিপত্য

তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে উপস্থিতি ধরে রাখার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহে ভাটা পড়েছে, এটি সুস্পষ্ট। তবে একেবারে যে প্রভাব রাখবে না তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২০২০ সালে সম্পাদিত আব্রাহাম অ্যাকর্ডের অধীনে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো। ইসরায়েলকে আরব দেশগুলোর মেনে নেওয়ার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব বজায় থাকবে, এটিই বর্তমান কৌশল । সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তার পূর্ণ মনোযোগ ঢেলে দেবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায়। কারণ সেখানে চীনের উপস্থিতির ফলে যুক্তরাষ্ট্র পরাশক্তি হিসেবে সেটিকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছে ।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মতো সক্ষমতা চীনের নেই। এ অঞ্চলে ওয়াশিংটনের হাজার হাজার সেনা ও সামরিক ঘাঁটি রয়েছে এবং মিত্রদের রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যদিকে, ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে চীন এ অঞ্চলে ২৭ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ফলে এখানে চীনের প্রভাব স্বয়ংক্রিভাবে বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনও সেটি অর্থনৈতিক। এরই পথ ধরে একসময় চীন নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে পারে।

অন্যান্য প্রধান ক্রীড়নক

মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তনের সুবাতাসে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের শাসক মোহাম্মদ বিন জায়েদকে নেপথ্যের সবচেয়ে বড় কুশীলব বলে বিবেচনা করা হয়। গত কয়েক বছরে কাবুল থেকে তিউনিস, প্রায় গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে নিজের প্রভাব বলয়ে নিয়ে এসেছেন তিনি। আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন তাঁরই উদ্যোগ।

লেবানন, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, লিবিয়া, সুদানসহ বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ ও দ্বিপক্ষীয় বিরোধ সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ছোট্ট দেশ কাতার। সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইরান ও তুরস্কের বিরোধ নিরসনের প্রস্তাব দিয়েছে তারা। আফগান শান্তি প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়টি সম্পন্ন হয়েছে কাতারে । সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের নয়া কূটনীতিতে দেশটির অবদানও কম নয় ।

উপসংহার

বিশ্লেষকরা মনে করেন, পরাশক্তি-নির্ভর মধ্যপ্রাচ্যের চ্যালেঞ্জ আসলে ভিন্ন । গণতন্ত্র, সুশাসন, শিক্ষা, সামাজিক বিন্যাসে সমতা এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বাকি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তেমনটি হলে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ ও বাইরের হস্তক্ষেপমুক্ত এক নতুন মধ্যপ্রাচ্যের দেখা মিলবে। তখন আর কোনো সিরিয়া, আফগানিস্তান বা ইয়েমেন তৈরি হবে না ।

সংগ্রহ : তথ্য সাময়ীকি, আগস্ট ২০২৩

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !