দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন প্রধান বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ পাঠ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে গত ১২ সেপ্টেম্বর এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেছেন।’ এতে আরও বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হইবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১১ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর দেশের বাইরে থাকবেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ সময়কালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী অবসরে গেছেন ২৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সে সময় সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় গত ৩১ আগস্ট ছিল তার বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবস।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। টানা ২০ মাস বিচারিক দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার ৬৭ বছর পূর্ণ হয় ২৫ সেপ্টেম্বর। তাই সংবিধান অনুসারে এ দিন তিনি অবসরে গেছেন ।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ড. মো. আখলাকুল হোসাইন আহমেদ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস, এমএসএস ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে জেলা বারের সনদপ্রাপ্ত হন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী এবং ২০০৫ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ১৯৯৬- ২০০১ মেয়াদে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেন। হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালের ৩০ জুন যোগদান করেন। এরপর ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর একজন সদস্য হিসেবে ২০১২ সালের ২৫ মার্চ যোগদান করেন। এরপর ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ কর্মরত থাকাকালীন ১১টি মামলার রায় দেয়া হয়। তিনি ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৯১ সালে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে সিঙ্গাপুরে আইন সম্মেলনে যোগদান করেন এবং আর্জেন্টিনায় আন্তর্জাতিক অপরাধবিষয়ক একটি কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের শেষদিকে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার বিচারকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় যোগদান করেন।
‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র : একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য’ এবং ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ : একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’ নামক দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি।