যোগাযোগের একগুচ্ছ প্রকল্প

Preparation BD
By -
0

সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মধ্যে দেশের সড়ক, রেল যোগাযোগ ও অন্যান্য খাতের একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্প চালু হতে যাচ্ছে। গত এক থেকে দেড় দশকে গৃহীত এসব প্রকল্প দেশকে সমৃদ্ধির সোনালি তোরণ উপহার দেবে বলে সরকার আশাবাদী। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

সেতু বিভাগের উদ্যোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাওলা থেকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার উড়াল সড়ক নির্মিত হচ্ছে। ২ সেপ্টেম্বর কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত (সাড়ে ১১ কিলোমিটার) অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটির আরও তথ্য-

  • প্রকল্পটির বিস্তৃতি কাওলা থেকে কুড়িল-বনানী- মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার- কমলাপুর-সায়েদাবাদ- যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত (১৯ দশমিক ৭৩ কিমি)।
  • ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র‍্যাম্পসহ প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় এটি দেশের বৃহত্তম প্রকল্প ।
  • বিনিয়োগকারী কোম্পানির নাম ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেড।
  • মোট ব্যয় ১৬ হাজার কোটি ৭০ লাখ ৭ হাজার ১৫৩ টাকা।
  • টোল সর্বনিম্ন ৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা।
  • নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয় জুন ২০১১। কাজ শেষ হবে জুন ২০২৪।

মেট্রোরেল

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ চালু হয়। আগামী ২০ অক্টোবর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

  • দেশের প্রথম এই মেট্রোরেলের পথটি ‘এমআরটি- ৬’ নামে পরিচিত।
  • নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
  • প্রকল্পটি গৃহীত হয় ২০১২ সালে ।
  • জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর ২০১৩ সালে এবং
  • মূল কাজ শুরু ২০১৭ সালে।
  • মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত অংশ ২০২৫ সালে চালু হবে।
  • প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
  • মেট্রোরেলের বিভিন্ন অংশের দৈর্ঘ্য—
বিভিন্ন অংশদৈর্ঘ্য
উত্তরা-কমলাপুর২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার
উত্তরা-মতিঝিল২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার
উত্তরা-আগারগাঁও১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার
আগারগাঁও-মতিঝিল৮ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার
মতিঝিল-কমলাপুর১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার

নর্দার্ন রুট

প্রধানমন্ত্রী ১৬ সেপ্টেম্বর সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৫ এর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন।

  • এমআরটি লাইন-৫ এর দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার।
  • হেমায়েতপুর থেকে আমিন বাজার এবং নতুন বাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত উড়াল স্থাপনার মোট দৈর্ঘ্য ৬ কিলোমিটার।
  • নগর এলাকায় আমিন বাজার থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে মেট্রোরেল যাবে মোট ১৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার।
  • প্রাক্কলিত ব্যয় ৪১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা।

বঙ্গবন্ধু টানেল

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত (১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে) হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল‘ । ২৮ অক্টোবর এটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

  • প্রকল্পটি অনুমোদিত হয় ২০১৫ সালের নভেম্বরে ।
  • প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর ।
  • নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে ২৪ ফ্রেবুয়ারি।
  • টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার ।
  • চার লেন বিশিষ্ট দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার।
  • সংযোগ সড়কসহ সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার।
  • এটি পতেঙ্গা ও আনোয়ারার যোগাযোগ স্থাপন করবে।
  • জিটুজি পদ্ধতিতে চীন সরকারের ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
  • নির্মাণ ব্যয় ১১ হাজার কোটি টাকা।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের অংশ বিশেষের উদ্বোধন হবে ৭ অক্টোবর।

  • ২০২৪ সালের শেষের দিকে টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হবে।
  • প্রকল্পটি গৃহীত হয় ২০১৭ সালে ।
  • নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয় ২০১৯ সালে।
  • নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং কোরিয়ার স্যামসাংয়ের অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম।
  • টার্মিনালের নকশাকার স্থপতি রোহানি বাহারিন।
  • নির্মাণ ব্যয় প্রায় ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা সরকার দিয়েছে। বাকি অর্থ দিচ্ছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা
  • টার্মিনালটি তিন তলাবিশিষ্ট ।

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নির্মাণাধীন রেলপথ প্রকল্পের উদ্বোধন হতে পারে সেপ্টেম্বরে।

  • ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য ভারত সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে উদ্বোধন হতে পারে।
  • বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে এই আন্তদেশীয় রেললাইন ।
  • নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।
  • প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ।
  • রেলপথের দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশে থাকছে সাড়ে ১০ কিলোমিটার ও আগরতলা অংশে থাকবে ৫ কিলোমিটার।
  • রেলপথটি চালু হলে আগরতলা থেকে কলকাতার দূরত্ব কমবে ১,৭০০ কিলোমিটার।
  • প্রকল্পটি শেষ হবে জুন ২০২৪।
  • প্রকল্প ব্যয় ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
  • বাংলাদেশ অংশে ব্যয় প্রায় ২৪১ কোটি টাকা।

খুলনা-মোংলা রেলপথ

সেপ্টেম্বর শেষে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে রেলওয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প । এটি সম্পন্ন হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

  • রেলপথের দৈর্ঘ্য ৯০ কিলোমিটার
  • নির্মাণ ব্যয় ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা (রেল লাইন ও রেল সেতু নির্মাণসহ)।
  • প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় ২১ ডিসেম্বর ২০১০।
  • প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টার্বো (এই প্রতিষ্ঠান রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ করেছে) এবং ইরকন ইন্টারন্যাশনাল ।

ঢাকা-ভাঙ্গা-যশোর রেলপথ

ঢাকা-ভাঙ্গা-যশোর রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১৭৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথের দৈর্ঘ্য ৮০ কিলোমিটার। সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবরে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে ট্রেন চলাচল চালু হতে পারে। এই অংশে স্টেশন থাকবে ১০টি।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্প

অক্টোবরে চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত রেললাইনের উদ্বোধন হতে পারে।

  • প্রকল্পটির দৈর্ঘ্য ১০২ কিলোমিটার।
  • নির্মাণ ব্যয় ১৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা।
  • প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ।
  • নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয় ২০১১ সালে ।
  • নির্মাণ শুরু হয় ২০১৮ সালে।
  • মোট স্টেশন ৯টি।
  • চীনের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
  • কাজ শেষ হবে জুন ২০২৪।

পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে

দেশের প্রথম ১৪ লেনের মহাসড়ক পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে। যার ৮টি সড়ক এক্সপ্রেসওয়ে। সেপ্টেম্বরে এটি উদ্বোধন হতে পারে

  • সাড়ে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কে থাকবে পাঁচটি অ্যাডগ্রেড ইন্টারসেকশন ।
  • নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
  • প্রকল্পটি পূর্বাচল স্যাটেলাইট শহরকে ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
  • মোট ব্যয় ১০ হাজার ৩২৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ।

বিআরটি প্রকল্প

রাজধানীর এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যান চলাচলের জন্য গৃহীত হয়েছে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প। এটিও চালু হতে পারে অক্টোবরে। ২০১২ সালে গৃহীত প্রকল্পটির ভোগড়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত অংশ প্রাথমিকভাবে চালু হবে। কাজ পুরোপুরি শেষ হবে ২০২৫ সালে ।

রামগড় স্থলবন্দর

দেশের ১৫তম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম স্থলবন্দর খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দর। ইতোমধ্যে এটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। উদ্বোধন হতে পারে সেপ্টেম্বরে।

  • এই বন্দর দিয়েই যোগাযোগ স্থাপন হবে ভারতের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচলের সঙ্গে।

এভাবে উপরিউক্ত প্রকল্পগুলোর নিমার্ণ কাজ পুরোপুরি শেষ হলে দেশে যোগাযোগে নতুন যুগের সূচনা হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !