উমাইয়া খিলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কাকে বলা হয়? খলিফা আব্দুল মালিক কীভাবে শাসনব্যবস্থা আরবীয়করণ করেন?

Preparation BD
By -
0

সুলতান ইলতুৎমিশ ছিলেন ভারতবর্ষে তুর্কি সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ভারতে একটি সুসংগঠিত কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। এ জন্য তিনি দক্ষতার সাথে প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেন । তিনি প্রচলিত মুদ্রামানেরও সংস্কার করেন।

ক. উমাইয়া খিলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কাকে বলা হয়?
খ. খলিফা আব্দুল মালিক কীভাবে শাসনব্যবস্থা আরবীয়করণ করেন?
গ. উদ্দীপকের উল্লিখিত সুলতানের সাথে কোন উমাইয়া খলিফার সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসন সংস্কার এর আলোকে খলিফা আব্দুল মালিকের শাসন সংস্কার ব্যাখ্যা কর।

ক. খলিফা আব্দুল মালিককে উমাইয়া খিলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।

খ. শাসনব্যবস্থার সকল ক্ষেত্রে আরবি ভাষা ব্যবহার করে খলিফা আব্দুল মালিক শাসনব্যবস্থা আরবীয়করণ করেন। আব্দুল মালিক বিজাতীয় প্রভাব থেকে সাম্রাজ্যকে মুক্ত করা এবং সাম্রাজ্যে একই ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাই আরব জাতীয়তাবাদ ও আরবি ভাষার মর্যাদা ঊর্ধ্বে তুলে ধরার মানসে এবং বিজাতীয় আঞ্চলিক ভাষার বৈচিত্র্য ও জটিলতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার অভিপ্রায়ে সাম্রাজ্যে আরবিকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদান করেন।

প্রশাসনিক সকল কাজে তিনি আরবি ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেন। এছাড়া আরবি বর্ণমালা লিখন, পঠন ও উচ্চারণ পদ্ধতির উন্নতি বিধান করেন এবং রাজ্যে প্রচলিত মুদ্রার পরিবর্তে আরবি মুদ্রা প্রচলন করেন। এভাবে আব্দুল মালিক তার শাসনব্যবস্থাকে আরবীয়করণ করেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সুলতানের সাথে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিকের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। আব্দুল মালিক ছিলেন প্রথম মারওয়ানের পুত্র। মুয়াবিয়া ও মারওয়ানের সংক্ষিপ্ত শাসনকালের পর ৬৮৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ছিলেন উমাইয়া বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। তার সিংহাসন আরোহণের পর উমাইয়া বংশের শাসন সুদৃঢ় হয়। তিনি তার সামরিক দক্ষতাবলে রাজ্যে সংঘটিত বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন করেন এবং রাজ্যের অনেক বিস্তার ঘটান।

তাছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেন। তার এ বিষয়গুলোই উদ্দীপকে চিত্রিত হয়েছে। উদ্দীপকের সুলতান ইলতুৎমিশের মতো আব্দুল মালিক একজন দক্ষ শাসনকর্তা ছিলেন । তিনি ভারতবর্ষে তুর্কি সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। দিল্লি সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি অনেক বিরোধী শক্তিকে দমন করেন। এছাড়া আব্দুল মালিকের মতো দক্ষ সামরিক শক্তিবলে তিনি রাজ্যের অনেক বিস্তার ঘটান।

এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেন। আর এ বিষয়গুলোই উদ্দীপকে চিত্রিত হয়েছে। তিনি নিজ যোগ্যতা ও দক্ষতার মাধ্যমে প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করে ভারতবর্ষের প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেন। তিনি আরবিকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দান করেন এবং আরবি বর্ণমালা লিখন, পঠন ও উচ্চারণ পদ্ধতির অনেক সংস্কার সাধন করেন। তিনি প্রশাসনের সকল কাজে আরবি ভাষা ব্যবহার করেন। এতে আরবে আরবীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় এবং ইসলামি সাম্রাজ্যের পূর্ণ সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়। সুতরাং বলা যায়, সুলতান ইলতুৎমিশ উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

আরো পড়ুন : আল ওয়ালিদ কাকে দামেস্কের পূর্বাস্বলের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন? অবরুদ্ধ কারবালায় ইমাম হোসেনের পরিণতি ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক শাসন সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করেন।

আব্দুল মালিকের শাসন সংস্কারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল রাষ্ট্রকে আরবীয়করণ। বিজাতীয় প্রভাব থেকে সাম্রাজ্যকে মুক্ত করা এবং সাম্রাজ্যে একই ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন করার জন্য তিনি আরবিকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদান করেন। তৎকালীন প্রচলিত মুদ্রার পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে আদ দিনার, আন-নিসঙ্কু, আস-সুদস, দিরহাম এবং ফানুস বা তাম্র মুদ্রার প্রবর্তন করেন। এসব মুদ্রায় কালিমা, তাসমিয়া, কুরআনের আয়াত ও মুদ্রাঙ্কনের তারিখ উৎকীর্ণ করার নির্দেশ দেন। এছাড়া জাতীয় ঢাকশালে বিশেষ পদ্ধতিসহ ত্রুটিমুক্ত মুদ্রাঙ্কন ব্যবস্থা চালু হওয়ায় মুদ্রা জাল করার প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পায়।

উদ্দীপকের সুলতান ইলতুৎমিশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শাসনসংস্কারের দৃষ্টান্ত লক্ষণীয়। তিনি ভারতে একটি সুগঠিত কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। এ লক্ষ্যে তিনি দক্ষতার সাথে প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেন। । তিনি প্রচলিত মুদ্রামানেরও সংস্কার করেন।

ভারতে তিনিই সর্বপ্রথম খাটি আরবি রৌপ্যমুদ্রার প্রচলন করেন। তার এসব সংস্কার সাধনের ফলে ভারতবর্ষে তুর্কি সাম্রাজ্যের উন্নয়ন সাধিত হয়। ঠিক একইভাবে খলিফা আব্দুল মালিকও বহু প্ৰভূত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করেন। তার মুদ্রা সংস্কারের ফলে ইসলামি সাম্রাজ্যে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়।

এছাড়া তিনি আরবি বর্ণমালার লিখন, পঠন ও উচ্চারণ পদ্ধতির উন্নতি বিধান করেন। ফলে শতাব্দীকাল পর হলেও আরবি ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষার মর্যাদা লাভ করে। ডাক ও গোয়েন্দা বিভাগের উন্নতিকল্পে তিনি যোগাযোগকারী সড়কের স্থানে স্থানে বদলি ঘোড়ার ব্যবস্থা করেন। কৃষিব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য তিনি ধর্মান্তরিত মুসলিমদের শহর থেকে গ্রামে ফিরতে বাধ্য করেন এবং রাজ্যের আয় বাড়াতে তাদের ওপর খাজনা ও জিজিয়া কর পুনঃপ্রবর্তন করেন। এভাবে আব্দুল মালিক তার শাসনব্যবস্থায় সংস্কার সাধন করেন।

উপযুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, আব্দুল মালিক ও সুলতান ইলতুৎমিশ নিজ নিজ সাম্রাজ্যে প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের উন্নয়ন বিধান করে যথেষ্ট মৌলিক প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Accept !