রাজা ধর্মপাল রাজস্ব ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় ও সমৃদ্ধ করেছিলেন। তবে তার পুত্র দেবপাল ক্ষমতায় আরোহণ করে রাজ্য বিস্তারে মনোযোগী হন। তিনি পূর্ব ও দক্ষিণে অনেকগুলো সফল অভিযানের মাধ্যমে বিশাল পাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। দেবপালের প্রতিটি অভিযানে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছিলেন তার দুইজন বিশ্বস্ত মন্ত্রী ও কিছুসংখ্যক দক্ষ সেনাপতি।
ক. কাকে আরব বিশ্বের প্রথম রাজা বলা হয়?
খ. খলিফা আবদুল মালিককে ‘রাজেন্দ্র’ বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের রাজা ধর্মপালের সাথে খলিফা আবদুল মালিকের কোন কর্মকাণ্ডের সামগ্রস্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের রাজা দেবপালের মতোই খলিফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক শ্রেষ্ঠ বিজেতা ছিলেন- উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
প্রশ্নের উত্তর
ক. আমির মুয়াবিয়াকে আরব বিশ্বের প্রথম রাজা বলা হয়।
খ. উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের চারজন পুত্র পরবর্তীতে খলিফা হওয়ায় তাকে রাজেন্দ্র বা ঋধঃযবৎ ড়ভ শরহমং বলা হয়। আবদুল মালিকের চার পুত্র আল ওয়ালিদ (৭০৫-৭১৫ খ্রি.), সুলাইমান (৭১৫- ৭১৭ খ্রি.), দ্বিতীয় ইয়াজিদ (৭২০-৭২৪ খ্রি.) এবং হিশাম (৭২৪-983 খ্রি.) পরবর্তীকালে খলিফা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তারা সুযোগ্য নেতৃত্ব দ্বারা উমাইয়া বংশকে সমৃদ্ধির স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দেন। ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি বলেন, ‘আবদুল মালিক এবং তার উত্তরাধিকারী চার পুত্রের শাসনকালে দামেস্কের এ রাজবংশ শৌর্যবীর্য ও গৌরবের চরম শিখরে আরোহণ করে। এ কারণে আবদুল মালিককে ‘রাজেন্দ্র’ বলা হয়।’
গ. উদ্দীপকের রাজা ধর্মপালের কর্মকাণ্ডের সাথে খলিফা আবদুল মালিকের রাজস্ব সংস্কারের সামঞ্জস্য রয়েছে।
খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়ে আবদুল মালিক এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হন। তার শাসনামলে নওমুসলিমরা শুধু যাকাত ব্যতীত অন্য কোনো কর দিত না। তাছাড়া অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য অনারব মুসলমানগণ গ্রাম ছেড়ে শহরে আশ্রয় নেয়। তারা সেনাবাহিনীতে যোগদান করে নিয়মিত ভাতাও পেতে থাকে। এতে চরম অর্থসংকট দেখা দেয়। এর প্রেক্ষিতে আবদুল মালিক রাজস্ব সংস্কার করেন, যার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে উদ্দীপকে।
উদ্দীপকের রাজা ধর্মপাল রাজস্ব ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় ও সমৃদ্ধ করেছিলেন। খলিফা আবদুল মালিকও নিজ সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক দুরবস্থা দূর করার জন্য ব্যাপকভাবে কর ব্যবস্থা সুসংহত করেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রাদেশিক শাসনকর্তা হাজ্জাজ বিন-ইউসুফের পরামর্শ ও সহযোগিতায় কিছু নীতি গ্রহণ করেন। এগুলো হলো- প্রথমত, ইসলাম গ্রহণ করলেও নবদীক্ষিত অনারব মুসলমানদের ভূমি রাজস্ব বা খারাজ দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, যেসব নবদীক্ষিত মুসলমান গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছে তাদের শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে বাধ্য করা হয়। তৃতীয়ত, ভূমিকর যাতে হ্রাস না পায় সে জন্য আরবীয় মুসলমানগণ কর্তৃক মাওয়ালিদের ভূমি ক্রয় নিষিদ্ধ করেন। চতুর্থত, অনুর্বর ও পতিত জমি তিন বছরের জন্য বিনা রাজস্বে কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করার ব্যবস্থা করা হয়। তিন বছর পর ঐ জমির ফসলের ১/২ অংশ রাজস্ব ধার্য হয়। এ আলোচনা থেকে বোঝা যায়, রাজা ধর্মপালের কাজের সাথে খলিফা আবদুল মালিকের কর ব্যবস্থা সংস্কারেরই মিল বিদ্যমান।
আরো পড়ুন : ‘কুব্বাতুস সাখরা’ কী? খলিফা আবদুল মালিক কর্তৃক আরবি ভাষা জাতীয়করন বিষয়ে ধারণা দাও।
ঘ. উদ্দীপকের রাজা দেবপালের মতোই খলিফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক শ্রেষ্ঠ বিজেতা ছিলেন’- উক্তিটি যথার্থ ।
খলিফা আবদুল মালিকের পুত্র আল ওয়ালিদ পিতার মতো একজন সুযোগ্য শাসক ছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে বিজেতা হিসেবে তার নাম স্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি সিংহাসনে আরোহণ করে পিতার বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেন। ফলে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের বহু স্থানে খলিফা ওয়ালিদের ক্ষমতা সম্প্রসারিত হয়। তার এই সম্প্রসারণ নীতির প্রভাব লক্ষ করা যায় রাজা দেবপালের মধ্যে। রাজা দেবপাল ক্ষমতায় আরোহণ করে রাজ্য বিস্তারে মনোযোগী হন।
তিনি পূর্ব ও দক্ষিণে অনেকগুলো সফল অভিযানের মাধ্যমে বিশাল পাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। এক্ষেত্রে তিনি দুইজন বিশ্বস্ত মন্ত্রী ও কিছু সংখ্যক দক্ষ সেনাপতির সহায়তা পেয়েছিলেন। খলিফা ওয়ালিদের ক্ষেত্রেও এমনটি দেখা যায় । তিনি হাজ্জাজ, কোতায়ৰা, ইবনে কাসিম, তারিক। ও মুসার মতো রণনিপুণ সেনাপতির সাহায্য লাভ করেছিলেন তাদের অসাধারণ শৌর্য-বীর্য এবং অক্লান্ত চেষ্টার ফলে বহুস্থানে আরব কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে খলিফা ওয়ালিদের ভাই মাসলামা ও পুত্র আব্বাসের সহায়তায় কোতায়বা মধ্য এশিয়ার বোখারা, সমরখন্দ দখল করেন।
৭১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কাশগড় জয় করে সমগ্র মধ্য এশিয়া দখল করতে সক্ষম হন। এদিকে সিন্ধুর রাজা দাহিরের মনোভাবের কারণে ওয়ালিদের পূর্বাশ্মলীয় শাসনকর্তা হাজ্জাজ বিন অবজ্ঞাসূচক ইউসুফের আদেশে সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাশিম ৭১২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু দখল করেন। অন্যদিকে, সেনাপতি মুসার সাহায্যে নৌপথে আক্রমণ চালিয়ে মেজকা, মিনকা, ইডিকা প্রভৃতি দ্বীপ রোমানদের নিকট হতে জয় করে মুসলিম শাসনভুক্ত করেন।
তাছাড়া খলিফা ওয়ালিদ স্পেন জয় করার জন্য মুসাকে প্রেরণ করেন। তার সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ ৭১২ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের রাজা রডারিককে পরাজিত করে স্পেন জয় করেন। এভাবে ওয়ালিদের সাম্রাজ্য একদিকে আটলান্টিক হতে পিরেনিজ এবং ভারতের সিন্ধু থেকে আরম্ভ করে চীনের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। পরিশেষে বলা যায়, খলিফা ওয়ালিদের সময়ই ইসলামি সামাজ্য সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারিত হয়। এ কারণেই তিনি শ্রেষ্ঠ বিজেতা হিসেবে অধিক পরিচিত।