পদ্মা সেতু রচনা, পদ্মা সেতু,রচনা পদ্মা সেতু, স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা, রচনা পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব, পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা পদ্মা সেতুর গুরুত্ব, বাংলা রচনা পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু বাংলা রচনা, অনুচ্ছেদ রচনা পদ্মা সেতু, স্বপ্নের পদ্মা সেতু, padma bridge পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, অনুচ্ছেদ রচনা পদ্মা বহুমুখী সেতু, পদ্মা সেতু অনুচ্ছেদ, পদ্মা সেতু রচনা ২০২২, পদ্মা বহুমূখী সেতু, পদ্মা সেতুর ভূমিকা
পদ্মা সেতু রচনা
ভূমিকা : বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নয়নশীল দেশ। নদীমাতৃক এই দেশে দেশি-বিদেশি অনেক নদী নেটওয়ার্কের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। স্বভাবতই এ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সেতুটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের তিনটি প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা। এর মধ্যে যমুনা ও মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। রয়ে গেল শুধু পদ্মা নদী। রাজধানী ঢাকায় আসা-যাওয়ার জন্য দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে পদ্মা নদী পার হতে হয়। তাই বর্তমান সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রচেষ্টা চালিয়েছে। পদ্মা সেতু অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে উপকৃত করবে। নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রতি টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ আয় করবে দুই টাকা।
পদ্মা সেতুর ইতিহাস: পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের অন্যতম রাজনৈতিক ইশতেহার। সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ পদ্মা থেকে নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করে। সেতু এ কারণে বিশ্বব্যাংক, এডিবি (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) এবং জাইকার মতো সংস্থাগুলো আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায় বিশ্বব্যাংক। একই সঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণ দেওয়া থেকে সরে আসে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। বেশ কিছু বিতর্কের পর, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্র্যান্ড জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন এবং প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর জন্য স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। ২০২২ সালের ২৫ জুন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন: ২০২২ সালের ২৫ জুন আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে সেতুটির উদ্বোধন করেন। দেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলি আলোকিত করা হয় এবং রাতে আতশবাজি দিয়ে দিনটিকে স্মরণ করা হয়। এছাড়াও, সকল দেশী-বিদেশী অতিথি এবং পদ্মা সেতুর অর্থায়নের ষড়যন্ত্রকারীদেরও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এটি সরকারের উদারতা দেখায় এবং বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেয় যে বাংলাদেশ যা খুশি তাই করতে পারে।
পদ্মা সেতুর বর্ণনা: দৈর্ঘ্য 6.15 কিমি, প্রস্থ 18.18 মিটার। মোট স্তম্ভের সংখ্যা ৪২টি। ৪০টি নদীর মধ্যে ২টি সেতু দ্বারা সংযুক্ত। পাইলের সংখ্যা 264টি। নদীর অভ্যন্তরে 40টি পিয়ারে মোট 240টি পিয়ারের জন্য 6টি এবং সেতুর উভয় পাশের দুটি পিয়ারে 24টি পাইলের জন্য 12টি করে মোট 24টি পিয়ার থাকবে। পিলারের ওপর বসানো হচ্ছে ৪১টি স্প্যান।
পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যয়: প্রথমে ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে। ২০১১ সালে সংশোধিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০,৫০৭ কোটি টাকা। 2016 সালে, পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল 28,793 মিলিয়ন রুপি।
আরো পড়ুন
- পদ্মা সেতু রচনা [PDF সহ পড়ুন]
- কম্পিউটার
- একুশে ফেব্রুয়ারি বা ভাষা আন্দোলন
- একটি বর্ষনমুখর রাত
- এইডসঃ এ যুগের ঘাতক ব্যাধি
- জাতীয় পাখি দোয়েল
- বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ
- জাতীয় গাছ আমগাছ
- জাতীয় ফল কাঁঠাল
- জাতীয় ফুল শাপলা
পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব: পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্য বদলে দেবে। এছাড়া রাজধানী ঢাকার আড়াই কোটি বাসিন্দাকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে। দেশের জিডিপি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাবে।
দারিদ্র্য বিমোচন: 1971 সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় 80 শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার 23.24 শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার 12.9 শতাংশ। সরকারের লক্ষ্য পদ্মা সেতু নির্মাণ ও অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ২১টি জেলার সঙ্গে কম খরচে ঢাকায় পণ্য পরিবহন করা যাবে। ফলে ওইসব এলাকায় পণ্যের দাম আগের তুলনায় বাড়বে। তখন মানুষ উৎপাদনে উৎসাহিত হবে এবং দারিদ্র্য দ্রুত হ্রাস পাবে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি: প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমরা প্রায়ই দেখি পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া, মাওয়া, জাজিরা ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেমে থাকে শত শত বাস ও ট্রাক। তবে পদ্মাসেতু কম সময়ে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব করবে। এ ছাড়া পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ থাকবে, যা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল ও সহজ করবে।
কৃষিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কৃষিতে বেশ উন্নত। যেমন: যশোরের ফুলের চাষ প্রতিবেশী দেশসহ সারাদেশে বিখ্যাত। বরিশালে প্রচুর ধান উৎপাদিত হয়। ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জে প্রচুর পাট উৎপন্ন হয়। এসব পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ দুটোই বেশি। অনেক সময় কৃষিপণ্যের পাঁচশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। কৃষকরা উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। তবে পদ্মা সেতুর সুবাদে কৃষি উৎপাদন দ্রুত বাড়বে।
শিল্প: শিল্পের বেশির ভাগ কাঁচামাল পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে আসবে। ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের শিল্প-কারখানাগুলো কাঁচামালের সংকটে পড়বে না। কাঁচামাল সরবরাহের খরচ অনেক গুণ কমে যাবে। দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে।
পদ্মা সেতুর রাজনৈতিক গুরুত্ব: বর্তমান সরকারের জন্য পদ্ম সেতু রাজনৈতিকভাবে খুবই লাভজনক। পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভোটের পরিসংখ্যান আওয়ামী লীগের জন্য সুবিধাজনক প্রমাণিত হতে পারে। সরকার হিসেবে আওয়ামী লীগ দেখাতে পারে পদ্মা সেতু সফল।
বৈশ্বিক ভূমিকা: ‘পদ্মা সেতু’ হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেতু। বিশ্বের প্রথম ১০টি সেতুর মধ্যে নাম থাকবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। ঋণ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিরোধ বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়। সেতুর কাজ শেষ করে বর্তমান সরকার তার সক্ষমতা ও সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে, অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের সমালোচনা বাড়ছে। এদিক থেকে বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য স্বীকৃত হবে বলে আশা করা যায়।
পদ্মা সেতুর নেতিবাচক প্রভাব: পদ্মা সেতুর বেশিরভাগ ইতিবাচক দিক থাকলেও এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ফেরি ডকের দুই পাশের মানুষের কর্মসংস্থান বিলুপ্ত হয়ে যাবে। লঞ্চ, স্টিমবোট ও ফেরি মালিকদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেতুর উভয় পাশে নতুন শহর গড়ে উঠবে, যা বিশৃঙ্খলার কারণ হতে পারে। ওই এলাকার দরিদ্রদের কর্মসংস্থান বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে আশা করি সরকার তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে।
উপসংহার: পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প, গার্মেন্টস ও গুদামঘর গড়ে তুলবে। বিদেশিরা সেসব খাতে বিনিয়োগ বাড়াবে। গতিশীল হবে অর্থনীতির চাকা। ব্যবসায় একটি নতুন উদ্দীপনা আসবে। দেশের উন্নতি হবে, সে এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেবে এমন একটি বাঙালি স্বপ্নের নাম পূরণ হবে।
পদ্মা সেতু : উন্নয়ন ও সম্ভাবনা রচনা
সূচনা:
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর একটি সেতু। এই সেতুটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে উত্তর-পূর্ব অংশের সাথে সংযুক্ত করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এখন এই সেতুর স্বপ্ন দেখে। এই পদ্মা সেতু দেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনবে বলে সবার আশা; মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি হবে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।
ভৌগলিক গুরুত্ব:
বাংলাদেশ একটি উপকূলীয় দেশ। এদেশের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য নদী। এ কারণে পরিবহনের জন্য আমাদের সবসময় নৌপথের আশ্রয় নিতে হয়। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিলম্ব ও ধীরগতি পরিলক্ষিত হয়। এই পরিবহন ব্যবস্থাকে গতিশীল করতে সেতু দরকার। সেতু হলে নদীর দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন উন্নত হয়, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়।
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গ:
পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। এ কারণে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে তাদের দাবি বাস্তবায়নের কথা বিভিন্ন সরকারকে জানিয়ে আসছে এ অঞ্চলের মানুষ। অবশেষে এই সেতুর সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে ১৯৯৮ সালে প্রথম সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরিদর্শন শেষে ২০০১ সালে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে সেতুটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। পরবর্তীতে 2007 সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে 2011 সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এই সেতুর সাথে রেলপথ সংযুক্ত করে।
বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতা ও সক্ষমতা:
পদ্মা সেতু স্বাধীনতা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এই প্রকল্পটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়েছে। ২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করার পর তাদের সঙ্গে ১.২ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক ২০১২ সালে ঋণ চুক্তি বাতিল করে; অনিশ্চয়তার মুখে পদ্মা সেতু প্রকল্প। পরে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়। ষড়যন্ত্রের বাধা অতিক্রম করে পদ্মা সেতুর কাজ অব্যাহত; দৃশ্যমান হচ্ছে স্বপ্নের স্ব-অর্থায়নের পদ্মা সেতু।
পদ্মা সেতুর বর্ণনাঃ
পদ্মা সেতু সম্পূর্ণরূপে স্ব-অর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশের বৃহত্তম কাঠামো। সেতুটির দৈর্ঘ্য 6.15 কিলোমিটার। সেতুটির একটি অংশ মুন্সীগঞ্জের পদ্মা নদীর মাওয়া প্রান্তের সাথে এবং অন্য অংশ শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের সাথে সংযুক্ত। এই সেতুটি দোতলা, এর উপরে যানবাহন চলাচল করে এবং নীচে ট্রেন চলাচল করে। এই 72-ফুট চওড়া, চার লেনের সেতুটির স্থল স্তরে একটি রেলপথ। সেতুটি কংক্রিট ও স্টিলের তৈরি। সেতুর দুই পাশে ১২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। মূল সেতুর নির্মাণকাজ করেছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট ও কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন সেতুটির নির্মাণ তদারকির দায়িত্বে ছিল। মূল সেতুটিতে 42টি পিলার থাকবে যার মধ্যে 40টি নদীতে এবং দুটি তীরে। নদীতে মোট 240টি পাইল থাকবে, 40টি নদীর স্তম্ভের প্রতিটিতে 6টি করে। উপরন্তু, সেতু সংযোগ করার জন্য উভয় পাশে 12টি পিলারে 24টি পাইল রয়েছে। পিলারের ওপর বসানো হবে একচল্লিশটি স্প্যান। সেতুটি 100 বছরের দরকারী জীবনকে বিবেচনা করে ডিজাইন করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয়:
2016 সালে, পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় দ্বিতীয়বার পর্যালোচনা করা হয়। সম্ভাব্য খরচ 28,793 মিলিয়ন টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, আইডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গেলে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। পদ্মা সেতু ও সংশ্লিষ্ট সকল অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। সেই অর্থের মাত্র এক তৃতীয়াংশ মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে নদী ব্যবস্থাপনা, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, পুনর্বাসন প্রকল্পসহ অন্যান্য খাতে।
পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ
পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। এই সেতু নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার বাসিন্দাদের ভাগ্য বদলে যাবে। কারণ এ সেতুর মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের সরাসরি যোগাযোগের ফলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। নিচে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব তুলে ধরা হলো।
ক. শিল্পে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব:
পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে এ অঞ্চলে ধীরে ধীরে নতুন শিল্প গড়ে উঠবে। দক্ষিণ-পশ্চিম এছাড়া এই সেতুকে ঘিরেই গড়ে উঠবে পায়রা সমুদ্রবন্দর। ফলে ব্যবসার সুবিধার্থে নতুন নতুন কারখানা গড়ে উঠবে।
খ. কৃষিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্বঃ
বর্তমানে, উত্তর-পূর্ব অঞ্চলটি দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সাথে ভালভাবে সংযুক্ত নয়, যা দাম দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়। সেতুটি নির্মাণের ফলে এ অঞ্চলের মানুষের ফসলি জমিতে যাতায়াত ব্যবস্থা চালু হবে। ফলে ওই অঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত ফসল সহজেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে। এতে করে কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে। তাছাড়া কৃষিতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সহজ হবে। ফলে উৎপাদন বাড়বে।
গ. দারিদ্র্য বিমোচনে পদ্মা সেতুর প্রভাব:
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনে পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ সেতু নির্মাণের ফলে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং সেখানে গড়ে উঠবে শিল্প প্রতিষ্ঠান। ফলে অনেক লোক চাকরি পাবে। তাছাড়া ওই অঞ্চলের লোকজন সহজেই অন্য জায়গায় কাজ করতে যেতে পারে। এতে বেকারদের কর্মসংস্থান হবে।
পদ্মা সেতুর নেতিবাচক প্রভাব:
পদ্মা সেতুর অনেক ইতিবাচক দিক থাকলেও এর কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে নদীর দুই পাড়ের কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ অবস্থায় নদী পারাপারে নিবেদিত নৌযান মালিকদের ব্যবসা বিলীন হয়ে যাবে। তা ছাড়া সবাই সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ায় ছোট ব্যবসায়ী, দোকানদার, কুলি ইত্যাদির ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দেবে। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়াও সরকার ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলে পদ্মা সেতুর নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পদ্মা সেতুর ভূমিকা:
পদ্মা সেতু প্রকল্পের কারণে নদীর দুই পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় নদীর তীর বাঁধা পড়েছে। ফলে ওই এলাকায় নদী ভাঙন রোধ হবে। এ ছাড়া নদীর দুই পাশে ও সংযোগ সড়কের দুই পাশে গাছ লাগানো হচ্ছে। এতে এসব এলাকার পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সবুজায়ন এলাকাটিকে মরুকরণ থেকে রক্ষা করবে। আর আজ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করে এবং অবাধে বন উজাড় হয়। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাধ্যমে এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া সহজ হবে। এতে মানুষের জ্বালানির চাহিদা মেটাবে। ফলে বন উজাড় কম হবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে।
সামাজিক প্রভাব:
এই সেতুটি স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুবিধার মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। সম্প্রদায়গুলিকে সংযুক্ত করে সামাজিক সংহতি বাড়ান। বন্যার সময় বিচ্ছিন্নতা হ্রাস করে, জরুরি পরিষেবাগুলিতে অ্যাক্সেস নিশ্চিত করে।
সামগ্রিক সাফল্য:
পদ্মা সেতু দক্ষিণ বাংলাদেশের সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগের দীর্ঘস্থায়ী চাহিদা পূরণ করে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হয়েছে। এর সুবাদে মানুষের যাতায়াতের সময় ও যাতায়াত খরচ অর্ধেক কমে গেছে। দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা সহজেই রাজধানীর বর্ধিত সুযোগ-সুবিধা থেকে উপকৃত হয়, যা জনজীবনকে ব্যাপকভাবে উপকৃত করে।
উপসংহার:
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের নাম, যা বদলে দেবে দেশের অর্থনীতির চেহারা। এই সেতুর ফলে ব্যাপক শিল্প, গার্মেন্টস, গুদামঘর ইত্যাদি গড়ে উঠবে। দেশের দক্ষিণ অংশে। ব্যবসায় একটি নতুন উদ্দীপনা আসবে। নানা অনিশ্চয়তা কাটিয়ে বাঙালির নিজস্ব অর্থ থাকার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হওয়ার পথে। এই সেতু অচিরেই দেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করবে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা
ভূমিকা
পদ্মা নদীর উপর নির্মিত পদ্মা সেতু, বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রশস্ত এবং শুষ্কতম, বাংলাদেশের জন্য একটি অবিশ্বাস্য অর্জন এবং একটি নতুন “জাতীয় ব্র্যান্ড”। এই সেতুটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করেছে। বাংলাদেশেরই নির্মিত পদ্মা সেতু নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে এবং মানুষের জীবন হবে উন্নত ও সুখী। পদ্মা সেতু এদেশের মানুষের উদ্যম ও সামর্থ্যের প্রতীক। পদ্মা সেতু গৌরব, অহংকার ও আত্মমর্যাদার এক উজ্জ্বল প্রতীক।
পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে বয়ে গেছে অনেক নদী। এ কারণে আমাদের পরিবহন ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত নৌপথের সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রলক্সিটি এবং মন্থরতা তৈরি করে। এটি চালু করার জন্য সেতু প্রয়োজন। পদ্মা বাংলাদেশের বৃহত্তম নদী। এ নদী পারাপারের মানুষের কষ্ট, কষ্ট ও দুর্ভোগের সীমা ছিল না। তাই দীর্ঘদিন ধরে এ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দারা পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। অবশেষে এই সেতুর সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে ১৯৯৮ সালে এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমীক্ষা যাচাইয়ের পরে, এই সেতুর প্রথম পাথর 2001 সালে স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থের অভাবে তা কিছু সময়ের জন্য স্থগিত রাখা হয়। ২০০৯ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন আবার শুরু হয়।
অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা
পদ্মা নদীর উপর মাল্টি-স্প্যান পদ্মা সেতুর নির্মাণ, যেটির নকশা করা হয়েছে 2011 সালে এবং 2013 সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পুরো প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছিল $2.92 বিলিয়ন। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি জাইকা এবং আবুধাবি ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ এর নির্মাণে ঋণ সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংক 29 জুন, 2012-এ পরামর্শক নিয়োগে কথিত দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে $1.2 বিলিয়ন ঋণ বাতিল করে। অন্যান্য উন্নয়ন সহায়তা সংস্থাগুলি পরে পিছিয়ে যায়। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পদ্মা সেতুর ভাগ্য। কিছুকাল এদেশের মানুষ বেদনা, ক্ষোভ ও হতাশায় নিমজ্জিত ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখা ও অর্জনের প্রতীক। তারা সাহসী এবং যোদ্ধা। নিরন্তর লড়াই করে বেঁচে থাকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এ দেশের মানুষ তখনই ঘুরে দাঁড়ায়। আমাদের সরকারও বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্র বুঝে ইউ-টার্ন করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রফুল্ল কণ্ঠে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। তার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী, অনন্য ও সাহসী।
পদ্মা সেতু প্রকল্প
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। AECOM সেতুটির নকশা করেছে। এটি মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া প্রান্তকে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা প্রান্তের সাথে সংযুক্ত করেছে। ডাবল ডেকার ব্রিজটি সম্পূর্ণ কংক্রিট ও স্টিলের তৈরি। যানবাহন উপরে এবং নীচে ট্রেন চলাচল করে। প্রধান চার লেনের সেতুটি 6.15 কিলোমিটার দীর্ঘ এবং 22 মিটার চওড়া। সেতু ভায়াডাক্ট 3.18 কিমি এবং সংযোগ সড়ক উভয় প্রান্তে 12 কিমি. নদীর উভয় তীরে ১৪ কিলোমিটার নদী ব্যবস্থাপনার কাজ করা হয়েছে। মূল সেতুর মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি, মোট স্প্যান ৪১টি এবং মোট পাইলের সংখ্যা ২৬৪টি। এর উচ্চতা ১৮ মিটার।
পদ্মা সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 4 জুলাই, 2001 তারিখে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই সেতুর মূল কাজটি 26 নভেম্বর, 2014 তারিখে শুরু হয় এবং 23 জুন, 2022-এ শেষ হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করা হয়। 25 জুন, 2022-এ এবং 26 জুন, 2022-এ সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়।
পদ্মা সেতুর খরচ
প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হয়েছিল যে পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ১০,২৬২ মিলিয়ন রুপি। ২০১১ সালে সেতু নির্মাণে ব্যয় বেড়ে হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। 2016 সালে, ব্যয় আবার 8,286 কোটি টাকা বেড়েছে। অবশেষে, মোট ব্যয় 1,400 কোটি টাকা বেড়ে 30,193 কোটি টাকা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন
বিশ্বের ইতিহাসে পদ্মা সেতু একটি যুগান্তকারী। বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন পদ্মাপদকে পরিণত করেছে জনসমুদ্রে। মুহূর্তের মধ্যে এলাকা জুড়ে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’। বাতাসে রঙ দেখা দেয়, উড়োজাহাজ রঙিন ধোঁয়া দেয়, হেলিকপ্টার থেকে রঙিন জরি পড়ে, “থিম সং” শিল্পীদের কণ্ঠ জীবনের আবেগ স্পর্শ করে। হৃদয়ে নাচের ছন্দপ্রতিটি মানুষের কারণ, চেহারায় গৌরবের আবেগ; প্রত্যেকের পোশাক এবং সাজসজ্জায় এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি। 25 জুন 2022 রাত 11:58 মিনিটে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইচ টিপে এবং ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন।
তিনি ফলকের জায়গায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যুরাল উন্মোচন করেন। করতালি ফেটে পড়ে সর্বত্র। জাজিরা যাওয়ার পথে, তিনি সেতুতে নেমে প্রায় 15 মিনিট ধরে বিমান ও হেলিকপ্টারের উড়ন্ত দৃশ্য উপভোগ করেন। এ সময় মাননীয় সরকারপ্রধান মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের প্রদর্শনও উপভোগ করেন। তিনি জাজিরা প্রান্তে পৌনে ১২টা ৩৫ মিনিটে পদ্মা সেতুর ফলক আবিষ্কার করেন। বেলা ১২টা ৫১ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং লাখ লাখ মানুষের শুভেচ্ছায় সাড়া দেন এবং তাদের ইতিবাচক ও কৃতজ্ঞতাপূর্ণ ভাষণ দেন।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব
বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব, তাৎপর্য ও উপযোগিতা অপরিসীম। নিচে পদ্মা সেতুর আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে তুলে ধরা হলো। গুরুত্ব নিম্নরূপ হাইলাইট করা হয়:
যোগাযোগ করুন:
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দারা খুব সহজে ও স্বল্প সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে যাতায়াত করতে পারবেন। তারা সহজেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ করতে পারে। পায়রা ও মংলা সমুদ্রবন্দর এবং পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংযোগের গেটওয়ে হবে পদ্মা সেতু। এছাড়া বেনাপোল, ভোমরা ও দর্শনা স্থলবন্দরের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার মধ্যে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
পর্যটনে:
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হবে সেরা পর্যটন কেন্দ্র। ছুটি কাটালে কুয়াকাটা, সুন্দরবন, ছয় গম্বুজ মসজিদ, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেখতে ভিড় করবেন মানুষ।
শিল্প ও বাণিজ্যে:
পদ্মা সেতুকে ঘিরে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় গড়ে উঠছে ছোট-বড় বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকার অলিম্পিক ভিলেজ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি, হাই-টেক পার্ক, আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার, বিমানবন্দর ইত্যাদি প্রকল্পের কথাও ভাবছে। পদ্মার চর অঞ্চলে। শেখ হাসিনার তাঁতপল্লী পদ্মা সেতুর কাছে নির্মিত হলে খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে দ্রুত বিকাশ ঘটবে জাহাজ নির্মাণ শিল্প। এসএমইর জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ চালু করা হয়েছে। বস্ত্র শিল্প ও কৃষি-খাদ্য শিল্পের উন্নয়ন প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
কৃষিতে:
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষিকাজে জড়িত কৃষক, জেলে, তাঁতি ও অন্যান্য ব্যক্তিদের মানসম্পন্ন কৃষিপণ্য চাষ, আহরণ ও উৎপাদনে উৎসাহিত করা হবে। ব্যবসায়ীরা সহজেই বরিশাল, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, খুলনা ও সাতক্ষীরা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছ ও অন্যান্য কৃষিপণ্য সরবরাহ করতে পারেন। এ ছাড়া নড়াইল, যশোর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুর ন্যায্যমূল্যে আম, লিচু, কালোজিরা, ধনে, তিল, তিসি, সরিষা, পেঁয়াজ, মধু, দই ও ঘি জাতীয় কৃষিপণ্য উৎপাদনে আরও বেশি আগ্রহী হবে।
দারিদ্র্য বিমোচনে:
পদ্মার ওপারের বিস্তীর্ণ এলাকার দরিদ্র মানুষ কৃষি ও শিল্প পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেয়ে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তৎপর হয়ে উঠেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসা তৈরি করে তারা আর্থিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ তৈরি করছে। মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে এলাকার মানুষ তাদের দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারবে। এভাবে পদ্মা সেতু দারিদ্র্য বিমোচনসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
জিডিপি
সামগ্রিকভাবে, পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় জিডিপিতে বছরে 1.26 শতাংশ যোগ করবে। এটি আঞ্চলিক জিডিপিতে 3.5 শতাংশ যোগ করবে। পদ্মা সেতুতে রেলপথ চালু হলে জাতীয় জিডিপিতে ১ শতাংশ যোগ হবে। প্রতি বছর, দক্ষিণবঙ্গে দারিদ্র্য 1.04 শতাংশ হ্রাস পাবে। জাতীয় পর্যায়ে তা কমবে ০.৮৪ শতাংশ।
উপসংহার
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তি, প্রকৌশল উৎকর্ষতা এবং সামগ্রিক দক্ষতার প্রতীক এবং একটি জাতি হিসেবে আমাদের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার একটি স্প্রিংবোর্ড। কীর্তিনাশা পদ্মার উপর নির্মিত এই সেতুটি বাংলাদেশের একটি অবিশ্বাস্য কীর্তি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার পথে এটি একটি মাইলফলক। নকশার জটিলতা, নির্মাণশৈলী এবং শারীরিক পরিশ্রমের পরিমান বিবেচনা করে এই সেতুটি ইতিমধ্যেই সবচেয়ে বেশি ব্রিজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।