অনলাইনে কিভাবে আয় করা যায় এই প্রশ্নটা বর্তমান তরুণদের মাঝে কমন একটি প্রশ্ন। এছাড়াও কোভিড-১৯ তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শিক্ষক সমাজও কিছুটা আর্থিক সংকটে পড়ে যায়। এমতাবস্থায় এরকম বিরূপ পরিস্থিতী থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে অর্থ উপার্জনের পথ হিসেবে অনেকে অনেক রকম পথ অবলম্বন করছে। আর অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো অনলাইন।
তাই অনলাইনে কিভাবে আয় করা যায় এটি জানার জন্য আমরা বিভিন্ন রকম বাংলা টিপস ইন্টারনেটে খুঁজে থাকি। আজকের এই পোস্টটি তাদের জন্যই বেশি উপকারক হবে, যারা ঘরে বসেই অনলাইনে কাজ করে টাকা আয় করতে চান। কারণ এখানে অনলাইন ইনকামের বেশ কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলো আপনি আপনার বাস্তব জীবনে প্রয়োগের মাধ্যমে অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে সক্ষম হবেন।
এই ক্ষেত্রে আপনাকে দুটি বিষয় মেইক সিউর করতে হবে। এগুলো হলো:
- শেখার মানসিকতা থাকতে হবে।
- অবিরত কাজ/প্র্যাক্টিসে লেগে থাকতে হবে।
উপরোক্ত দুইটি বিষয়কে নিজের মধ্যে মেইক সিউর করতে পারলে অবশ্যই অবশ্যই আপনি অনলাইনে টাকা আয় করতে পারবেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, কিভাবে অনলাইনে আয় করবেন? কোন উপায়ে আয় করবেন? এসব প্রশ্নের উত্তর একটি বা দুইটি বাক্যে দেওয়া সম্ভব নয়। অবশ্যই এর উত্তর শোনার জন্যও পর্যাপ্ত ধৈর্য থাকা দরকার। যেমনটি কাজে লেগে পড়ার পর দরকার।
আরো পড়ুন : হালাল উপায়ে ফেসবুক থেকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়?
এখানে আপনি যে সেক্টরেই যান না কেন, প্রথমেই আপনাকে সেই সেক্টর সম্পর্কে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করত হবে। তারপর পর্যাপ্ত পরিমাণ অনুশীলন করতে হবে। এভাবে ধারাবাহিকভাবে কাজ করার পর আপনাকে সার্ভিস প্রোভাইড করতে হবে অথবা এই সেক্টরে নিজেই নিজের কাজ ব্যবসার ন্যায় করে লভ্যাংশের একটা অংশ উঠাতে হবে।
এই আর্টিকেলে আমরা এমন কিছু ক্ষেত্র তুলে ধরবো, যেগুলো নিজের মধ্যে আয়ত্ত করে অনলাইনে আয় করতে পারবেন। চলুন তাহলে, ধীরে ধীরে সেই কাঙ্খিত উপায়গুলো জানা যাক।
অনলাইনে কিভাবে আয় করা যায়
অনলাইনে বিভিন্ন উপায়ে ইনকাম করা সম্ভব। যার মধ্যে ব্লগিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ছবি তোলা এবং ইউটিউবিংসহ আরো অনেক সহজ উপায় রয়েছে। নিচে আমরা প্রতিটি বিষয় আলাদা আলাদা ভাবে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি।
১. ব্লগিং করে অনলাইনে আয়
ব্লগিং করে আয় করা হচ্ছে অনলাইনে টাকা ইনকাম করার সবচেয়ে সহজ এবং অনেকের নিকট তা আকর্ষণীয় একটি উপায়। এর অনেকগুলো যুক্তিসঙ্গত কারণও রয়েছে। ব্লগিং আপনি অনেক কিছু নিয়েই করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আমরা আপনাকে প্রেপার করবো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্লগিং করতে ।
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্লগিং করতে আপনাকে প্রথমে আপনার লক্ষ্য ঠিক রাখতে হবে। এই ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হবে জাস্ট কয়েকটি জিনিস। প্রথমে ব্লগিং সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা নিয়ে নিবেন। অর্থাৎ ব্লগিং এর জন্য যেকোনো একটি ভালো নিশ চয়েজ করবেন। এরপর বিভিন্ন কোম্পানী থেকে থেকে নিশ রিলেটেড একটি ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করবেন।
ধারাবাহিকভাবে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করার পর সাইটের জন্য হোস্টিং ক্রয় করবেন। এভাবে সব কিছু হয়ে গেলে সুন্দরভাবে একটি ওয়েবসাইট ডিজাইন করবেন। এবার নিশ অনুযায়ী রিসার্চকৃত কিওয়ার্ডের উপর ডিপেন্ড করে প্রতিনিয়ত পোস্ট দিয়ে যাবেন। আপনার সাইটের আর্টিকেল যখন র্যাঙ্ক করবে তখন আপনার সাইটে যথেষ্ট পরিমাণ ট্রাফিক যাবে। তখন গুগল অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে আপনি অনলাইনে আয় করতে পারবেন।
গুগল অ্যাডসেন্সই নয়, আপনি অন্য সব অ্যাড নেটওয়ার্কগুলোও ব্যবহার করতে পারবেন। পাশাপাশি দেশের সুনামধন্য কিছু কোম্পানির স্পন্সরশিপের মাধ্যমে আপনার ব্লগ সাইটের ব্লগিং এর মাধ্যমে অ্যাড থেকে টাকা ইনকাম করা সম্ভব। ভালোভাবে পোস্ট করলে এবং এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল হলে গুগল র্যাঙ্ক করতে বেশি সময় লাগে না।
ট্রাফিক যতো বেশি, ব্লগিং সাইটে ততো আয়। আর এটাই হলো ব্লগিং করে টাকা আয় করার সহজ মাধ্যম। সুতরাং, যদি এই পদ্ধতিটি আপনার পছন্দ হয় পাশাপাশি ব্লগিং করতে ইচ্ছুক হোন, তাহলে আশা করা যায় খুব সহজেই আপনি ব্লগিং করে টাকা আয় করতে পারবেন।
২. অ্যাফিলিয়েট করে অনলাইনে আয়
অনলাইনে আয়ের আরেকটি সহজ উপায় হলো অ্যাফিলিয়েট করে আয়। এটাও প্রায় ব্লগিং করার কাছাকাছিই। কিন্তু ব্লগিং নয়। এই ক্ষেত্রেও আপনাকে ওয়েবসাইট কিংবা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে কাজ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুক এবং ইনস্ট্রাগ্রাম অন্যতম। এছাড়াও আছে লিংকডিনসহ আরো অনেক মাধ্যম।
যেগুলোর মাধ্যমে আপনি অ্যাফিলিয়েট করতে পারেন। সবচেয়ে সেরা এবং নিরাপদ উপায় হলো একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট করা। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট করতে চাইলে প্রথমে আপনাকে ব্লগ সাইটের ন্যায় একটি লো কম্পেটিটিভ নিশ খুঁজে নিতে হবে। তারপর সেই নিশে কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে।
এরপর ঐ নিশের কিওয়ার্ডে ওপর ভিত্তি করে আর্টিকেল পাবলিশ করে যেতে হবে। ওয়েবসাইটে আপনি প্রোডাক্ট প্রিপার করবেন আপনার কাঙ্খিত ভিজিটরদের। এতে করে ভিজিটররা আপনার ওয়েবসাইট হয়ে যখন প্রধান সাইট থেকে কোনো একটি বা একাধিক পণ্য ক্রয় করবে, তখন তারা আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ একটি অর্থ দিবে। মূলত এটাই হলো অ্যাফিলিয়েট করার মূল বা রুট ধারণা।
তবে সবচেয়ে ভালো খবর হলো এই ক্ষেত্রেও মোবাইল দিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা সম্ভব। যদিও তা একটু কঠিন হয়ে যাবে এবং কিছু কিছু কাজ করা সম্ভব হবে না। যেমন বিভিন্ন রকম টুলসের সহায়তা নেয়া অথবা কীওয়ার্ড রিসার্স করা ইত্যাদি। তবে অধিকাংশ কাজই মোবাইল দিয়েই সম্ভব।
৩. ছবি তুলে অনলাইনে আয়
ছবি তুলেও অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করা যায়। প্রথমে অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তবে তা অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু এটা কীভাবে? যদিও এই ক্ষেত্রে কিছুটা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। যেমন কিছু ক্ষেত্রে ছবি ইডিট, ছবি তোলাসহ আরোও অনেক কিছু জিনিস আছে। বর্তমানে ইচ্ছা করলে আপনি আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনটি দিয়েই এই কাজটি করতে পারেন।
প্রথমে আপনি আপনার মোবাইল ফোন অর্থাৎ স্মার্টফোন দিয়ে ছবি তুলবেন। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী ছবিটিকে যতটুকু দরকার মোবাইল সফটওয়্যার বা পিসিতে ফটোশোপ/ইলাস্টেটর দ্বারা ইডিট করবেন। এতে করে স্মার্ট ফোন দ্ধারা তোলা ছবির কোয়ালিটি আরোও হাই হবে পূর্বের থেকে।
এবার আপনার তোলা ছবিগুলো ইন্টারনেটে থাকা বিভিন্ন স্টক টাইপ সাইটে আপলোড করে দিতে হবে। এর আগে অবশ্যই আপনাকে ঐ সাইটগুলোতে একটি করে একাউন্ট খুলে রাখতে হবে। একাউন্ট খুলে আপনার ইডিট করা ছবিগুলোকে অ্যাফিলিয়েট লিংকসহ আপলোড করতে হবে।
এখন এ ছবিগুলো যদি মানুষ ঐসকল ওয়েবসাইট থেকে ক্রয় করে, তার বিনিময়ে আপনি ঐ ছবির মালিক হিসেবে নির্দিষ্ট একটি লভ্যাংশ পাবেন। এখন ইন্টারনেটে এরকম বহু সাইট রয়েছে। যার মধ্যে Shutterstock সাইটটি ছবি বিক্রির সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়প্লটফর্ম। এখানে আপনি আপনার ইচ্ছানুযায়ী যেকোনো কোয়ালিটিফুল ছবি আপলোড করে রাখতে পারবেন।
এতে করে দেখা গেল যখন অন্য একজন ব্যক্তি আপনার তোলা ছবিটি দেখে অবাক হয়ে গেল এবং তাঁর কোনো একটি কাজে এই ছবিটি বেশ উপযোগী হবে, তখন তারা ছবিটি ক্রয় করে নিবে। শুধু মাত্র Shutterstock সাইট নয়, এছাড়াও রয়েছে 500PX এবং Envato নামক বড় বড় বেশ কয়েকটি সাইট।
এই সাইটগুলো থেকে নিজের তুলা ছবি বিক্রি করে অনলাইনে টাকা আয় করা সম্ভব। তাই হাতে যদি একটি সামান্য একটি স্মার্টফোন থাকে, তাহলে আজই এই কাজটি শুরু করে অনলাইনে আয় করা শুরু করুন।
৪. ইউটিউবিং করে অনলাইনে আয়
ইউটিউবিং করে আয় করা হলো বর্তমানে ট্রেন্ডিং একটি টপিক। ধারাবাহিকভাবে অন্যসব প্লাটফর্মের মতোই ইউটিউব হলো একটি সামাজিক ভিডিও কন্টেন্ট প্লাটফর্ম। এখানেও আপনি ইনকামের একটি সোর্স তৈরি করতে পারেন। ইউটিউবের ক্ষেত্রে আপনি কয়েকভাবে আয় করতে পারেন।
প্রথমত হলো ভিডিও আপলোড করে গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে টাকা আয় এবং দ্ধিতীয়টি হলো অ্যাফিলিয়েট করে টাকা আয়। আবার একই সময়ে আপনি দুইভাবেই ইনকাম করতে পারেন। নিয়মিত ভিডিও আপলোড করার মাধ্যমে আপনার চ্যানেলকে গ্রো করতে পারেন। এভাবে ধারাবাহিকভাবে চ্যানেল গ্রো করলে মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ একটি স্মার্ট ইনকাম করা সম্ভব।
এই ক্ষেত্রেও প্রথমে আপনাকে একটি নিশ সিলেক্ট করে ক্রমান্বয়ে প্রতিনিয়ত ভিডিও আপলোড করে যাবেন। সেখানে অনেক প্রোডাক্টের ভিডিও থাকবে। প্রোডাক্টের ভিডিওগুলোতে অ্যাফিলিয়েট লিংক ইউজ করবেন। যাতে ট্রাফিক ঐ লিংকের মাধ্যমে প্রোডাক্ট ক্রয় করে আর আপনি এতে নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা পারসেন্টেজ আয় করতে পারেন।
অন্যদিকে ইউটিউবে ভিডিও ভিউর উপর ভিত্তি করে এবং অ্যাড ক্লিক এর উপর ভিত্তি করে আপনি গুগল থেকেও কিছু অর্থ আয় করতে পারেন। মূলত এভাবেই ইউটিউবে ভিডিও এর মাধ্যমে কিছু টাকা আয় করতে পারেন।
শেষ কথা
এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে অনলাইনে কিভাবে আয় করা যায় সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করলাম। মূলত উপরের বর্ণিত এই ৪ টি উপায়ে আপনি অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে পারেন। তবে একটি জিনিসের প্রতি নজর রাখতে হবে। সেটি হলো টাকা ইনকামের পূর্বশর্ত হলো অত্যধিক পরিশ্রমী হওয়া। যেমনটি অনলাইনে টাকা আয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
যদি আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই অনলাইনে আয় করা সম্পর্কে মোটামোটি একটি ধারণা পেয়েছেন। উপরোক্ত শর্তসহ কাজগুলোর যেকোনো একটি যদি আপনি আপনার নিজের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পারেন, তাহলে কাজ শিখে আজ থেকেই শুরু করতে পারেন অনলাইনে আয় করা।