গারো পাহাড়ের পাদদেশে হাওড়-বাওড় বিলেঝিলে ভরা, জলবাহী নদী ঘেরা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক রুপসমৃদ্ধ জেলা নেত্রকোণা। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮০ সালে নেত্রকোণা মহকুমা সৃষ্টি করা হয়। ৩ জানুয়ারি ১৮৮২ নেত্রকোণা মহকুমার কার্যক্রম শুরু হয়। পাকিস্তান আমলে নেত্রকোণা মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করার জন্য গণদাবী ওঠে।
১৯৬২ সালে তৎকালীন সরকার কেন্দুয়ায় জেলা সদর স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করে। কিন্তু সরকারের সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। ১৭ জানুয়ারি ১৯৮৪ নেত্রকোণা মহকুমাকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ আনুষ্ঠানিকভাবে নেত্রকোণা জেলার কার্যক্রম শুরু হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ নেত্রকোণা জেলাকে ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
নামকরণ
মাছ-ভাতের খনি বলে খ্যাত হাওড়- বাঁওড় সমৃদ্ধ জেলা নেত্রকোণা । নেত্রকোণার পুরোনো নাম কালীগঞ্জ। লোকশ্রুতি রয়েছে, নেত্রকোণা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মগড়া নদীর বাঁকটি চোখের বা নেত্রের কোণের মতো বলে এই এলাকার নামকরণ হয় নেত্রকোণা।
[penci_related_posts dis_pview=”no” dis_pdate=”no” title=”এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন” background=”” border=”” thumbright=”no” number=”4″ style=”list” align=”none” withids=”” displayby=”cat” orderby=”rand”]আবার অনেকের মতে, মগড়া ও কংশ নদী পরিবেষ্টিত এলাকাটি দেখতে অনেকটা চোখের মতো বা নেত্রের কোণসদৃশ ছিল বলে জেলার নাম নেত্রকোণা হয় । তবে অধিক গ্রহণযোগ্য মতবাদ হলো— ইংরেজদের মুখে মুখে উচ্চারিত নাটোরকোণা থেকে নেটরকোণা এবং পরবর্তীকালে নেটরকোণার সংশোধিত সংক্ষিপ্ত রূপায়ণ নেত্রকোণা ।
সাধারণ তথ্য
- প্রতিষ্ঠা : ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪
- সীমানা : উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়, দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ, পূর্বে সুনামগঞ্জ ও পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলা
- আয়তন : ২৭৯৪.২৮ বর্গ কিমি [সূত্র : BBS]
- জনসংখ্যা : ২৩,২৪,৮৫৩ জন
- সাক্ষরতা (৭ বছর ও তদূর্ধ্ব) : ৬৬.২৫%
- ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) : ৮৩২ জন
- প্রধান নদনদী > মগড়া, কংশ, ধনাই খালী, সাইভুলি, ধনু, নিতাই ও সোমেশ্বরী
- আন্তঃসীমান্ত নদী : সোমেশ্বরী।
প্রশাসনিক কাঠামো
- উপজেলা : ১০টি নেত্রকোণা সদর, কলমাকান্দা, কেন্দুয়া, মদন, দুর্গাপুর, পূর্বধলা, আটপাড়া, খালিয়াজুরী, বারহাট্টা ও মোহনগঞ্জ
- থানা : ১০টি
- পৌরসভা : ৫টি (নেত্রকোণা সদর, কেন্দুয়া, দুর্গাপুর, মদন ও মোহনগঞ্জ)
- ইউনিয়ন : ৮৬টি
- জাতীয় সংসদের আসন : ৫টি
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা
- বীর উত্তম : কর্নেল আবু তাহের (১১নং সেক্টর কমান্ডার)
- বীর বিক্রম : আবু ইউসুফ, আবদুস সাত্তার, মোহাম্মদ নিজামউদ্দীন, তারা উদ্দিন
- বীর প্রতীক । মো. শাখাওয়াত হোসেন বাহার, মো. ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, অলিপুর রহমান খান, মোসলেহউদ্দিন আহমেদ, হেলালুজ্জামান পান্না।
শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি
হুমায়ূন আহমেদ, নির্মলেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজ, যতীন সরকার, খালেকদাদ চৌধুরী, কুদ্দুস বয়াতি, চন্দ্রকুমার দে, ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব, বারী সিদ্দিকী।
অন্যান্য ব্যক্তিত্ব
কমরেড মণি সিংহ (কমিউনিস্ট নেতা), বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ (সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি), মোস্তফা জব্বার (প্রযুক্তি উদ্যোক্তা), ওবায়দুল হাসান (বর্তমান প্রধান বিচারপতি), আরিফ খান জয় (ফুটবলার), নাজমুন মুনিরা ন্যাপি (সংগীত শিল্পী)।
উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান
- দুর্গাপুর : বিরিশিরি কালচারাল একাডেমি, চীনামাটির পাহাড়, গারো পাহাড়, কমলা রাণী দিঘী
- বারহাট্টা : সিংগার বিল
- মোহনগঞ্জ : ডিঙ্গাপোতা হাওড়
- মদন : উচিতপুর হাওড়
- খালিয়াজুরী: হেমনগর হাওড়।
জানেন কি : নেত্রকোণা জেলা
- আয়তনে : দেশের ১৯তম
- ময়মনসিংহ বিভাগের : ২য়
- জনসংখ্যায় : দেশের ৩০তম
- ময়মনসিংহ বিভাগের : ৩য়
মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোণা
সেক্টর > ১১নং
হানাদার মুক্ত দিবস—
- ৬ নভেম্বর : মদন
- ৭ ডিসেম্বর : কলমাকান্দা, কেন্দুয়া ও দুর্গাপুর
- ৮ ডিসেম্বর : আটপাড়া, খালিয়াজুরী, বারহাট্টা ও মোহনগঞ্জ
- ৯ ডিসেম্বর : নেত্রকোণা সদর ও পূর্বধলা
GI পণ্য বিজয়পুরের সাদামাটি
নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় বিজয়পুরে সাদামাটির পাহাড় অবস্থিত। চীন দেশের মানুষেরা সর্বপ্রথম এই মাটির ব্যবহার শুরু করে, যে কারণে একে চিনামাটি বলে। এই মাটি মিহি নরম ট্যালকম পাউডারের মতো, যা সিরামিক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। ১৯৫৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম বিজয়পুরে সাদামাটির আবিষ্কার ঘটে এবং ১৯৬৮ সালে মাটি উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ বিজয়পুরের সাদামাটিকে ভৌগোলিক নির্দেশক (GI) হিসেবে স্বীকৃ তির জন্য আবেদন করলে ১৭ জুন ২০২১ এটিকে দেশের চতুর্থ GI পণ্য হিসেবে সনদ দেওয়া হয় ।