রশিদপুর গ্রামের যুবকদের আমন্ত্রণে বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা বদিউল আলম এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয় লোকজন তাকে ‘গুড ইভিনিং’ বলে স্বাগত জানান এবং তার হাতে স্বর্ণনির্মিত বেইজ পরিয়ে দেন। কিন্তু মাওলানা সাহেব বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে বেইজ • খুলে ফেলেন। রাতে এলাকার সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের স্বকীয়তা রয়েছে যা আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। যে ব্যক্তি অন্য জাতির অনুকরণ করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। পরে তাঁর নির্দেশনার আলোকে মসজিদের ইমাম সাহেব মুসল্লিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন। যাদের কাজ হবে শিশু ও বয়স্কদের হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়া, পারস্পরিক দায়িত্ববোধ শিখানো এবং এলাকার জনহিতকর কাজে মসজিদকে সম্পৃক্ত করা।
ক. হযরত শাহ মাখদুম (র) কোন অঞ্চলে ইসলামি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটান?
খ. “ইসলামি শিক্ষা একটি সর্বজনীন শিক্ষা”- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের মাওলানা বদিউল আলমের ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মসজিদের ইমাম সাহেবের উদ্যোগে কীসের প্রতিফলন লক্ষণীয়? এর সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ করো।
প্রশ্নের উত্তর
ক. হযরত শাহ মাখদুম (র) রাজশাহী অঞ্চলে ইসলামি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটান।
খ. ইসলামি শিক্ষা একটি সর্বজনীন শিক্ষা যা ইসলামের মূলনীতি, আদর্শ ও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।
ইসলামি শিক্ষা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত নয়। এটি বিশেষ কোনো দেশ, জাতি, অঞ্চল, গোষ্ঠী বা বর্ণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । এটি পৃথিবীর সব স্থানের, সব মানুষের জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ এ শিক্ষা অর্জন করে মুসলিম হিসেবে নিজের জীবন পরিচালনা করতে পারে। আর এ জন্যই বলা হয়, ইসলামি শিক্ষা সর্বজনীন।
গ. উদ্দীপকের মাওলানা বদিউল আলমের ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ ইসলামি সংস্কৃতির চর্চা না করা ।
ইসলামের নীতি-আদর্শ ও মূল্যবোধের আলোকে গড়ে ওঠা সংস্কৃতিই হলো ইসলামি সংস্কৃতি। ইসলামি সংস্কৃতি মুসলিম জাতির স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বহন করে। রাসুল (স.) বলেন- যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে (মুসনাদে আহমদ)। ইসলামি সংস্কৃতি সঠিকভাবে চর্চা করার মাধ্যমে তাকওয়াবান হতে পারলে দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্য নিশ্চিত হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা বদিউল আলম রশিদপুর গ্রামের যুবকদের আমন্ত্রণে এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয় লোকজন তাকে ‘গুড ইভিনিং’ বলে স্বাগত জানান এবং তার হাতে স্বর্ণের বেইজ পরিয়ে দেন। এতে তিনি বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে বেইজ খুলে ফেলেন। ‘গুড ইভিনিং’ বলা ও স্বর্ণের বেইজ পরানো ইসলামি সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত নয়।
[penci_blockquote style=”style-2″ align=”none” author=”রাসুল (স)”]’সালাম বিনিময়ের পরেই অন্যান্য কথাবার্তা’ (মেশকাত)।[/penci_blockquote]স্থানীয় লোকজনের মাওলানা বদিউল আলমকে সালাম না দিয়ে গুড ইভিনিং বলে স্বাগত জানানো এবং স্বর্ণের বেইজ পরানো নিঃসন্দেহে অনৈসলামিক সংস্কৃতির অনুকরণ। এ কারণেই তিনি ক্ষুব্ধ হন ।
ঘ. মসজিদের ইমাম সাহেবের উদ্যোগে ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতিফলন লক্ষণীয়।
ইসলামি সমাজ ও সংস্কৃতিতে একজন ইমামের দায়িত্ব হচ্ছে— শিশু ও বয়স্কদের হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়া, পারস্পরিক দায়িত্ববোধ শেখানো, বিভিন্ন জনহিতকর কর্মকাণ্ডে মসজিদকে সম্পৃক্ত করা, গণশিক্ষা বিস্তার ও নৈশবিদ্যালয় পরিচালনা করা।
এছাড়া জুয়া, সুদ, ঘুষ, চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার, যৌতুক, নারী নির্যাতন প্রভৃতি ইসলামে নিষিদ্ধ। এসব সামাজিক সমস্যা এবং এগুলোর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা ইমামের অন্যতম দায়িত্ব। তিনি এলাকার মানুষকে ইসলামি শরিয়তসম্মত অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের দিক-নির্দেশনাও দেবেন। এ লক্ষ্যে তিনি মসজিদ তহবিলের মাধ্যমে জাকাত সংগ্রহ করে এলাকার দুস্থ ও নিঃস্ব লোকদের মধ্যে সে টাকা ব্যয় করবেন।
উদ্দীপকে উল্লেখিত মসজিদের ইমাম সাহেব শিশু ও বয়স্কদের হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়া, পারস্পরিক দায়িত্ববোধ শেখানো এবং এলাকার জনহিতকর কাজে মসজিদকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে স্থানীয় মুসল্লিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। তার এ কাজের মাধ্যমে মূলত ইসলামি সমাজব্যবস্থায় একজন ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। ইসলামি আদর্শের আলোকে আমাদের সমাজজীবনকে সুশৃঙ্খল ও সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।