একটি দৃশ্য কল্পনা করা যাক। কৃষক রাতে ঘুমিয়ে আছেন। এ অবস্থায় স্বনিয়ন্ত্রিত একটি রোবট প্রোগ্রাম করা মানচিত্র অনুসরণ করে জমিতে ঢুকে প্ৰয়োজনীয় কাজগুলো শেষ করে ঘরে ফিরে গিয়েছে। হ্যাঁ, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এমন স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে যাচ্ছে। এতে প্রযুক্তির সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যোগ হয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক পরিবর্তন আসবে। ফলে এমন সব স্মার্ট যন্ত্রপাতি ও সিস্টেম তৈরি হবে যা বিশ্বে টেকসই পরিবর্তনের সহায়ক হবে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কী
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কথাটি বোঝাতে ‘4IR’ অথবা ‘Industry 4.0’ এভাবেও লেখা হয়। এ দিয়ে মূলত বোঝানো হয় একঝাঁক পরিবর্তনকে, যা মানবজাতি আগে কখনও প্রত্যক্ষ করেনি। রোবটের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন ধরনের মেশিন, যা মানুষের কায়িক শ্রমের পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তাকেও প্রতিস্থাপন করার ক্ষমতা রাখে। ফলে পরিবর্তনগুলো হচ্ছে গাণিতিক হারে— যা আগে কখনো হয়নি। পাল্টে যাচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া, ব্যবস্থাপনা, এমনকি রাষ্ট্র চালানোর পদ্ধতিও।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ভিত্তিমূলে আছে আগের তিনটি শিল্প বিপ্লব। প্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডে, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে। সূচনাটি ঘটেছিল হস্তচালিত যন্ত্রের মাধ্যমে। নদীর স্রোত ছিল এসব মেশিনের চালিকা শক্তি। ১৭৬৯ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কারের ফলে কারখানাগুলো বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এর সঙ্গে হাত ধরাধরি করে আসে রেলপথ, যা পণ্য ও কাঁচামাল স্থান্তান্তরে বৈপ্লবিক সুযোগ এনে দেয়। এ সময়টা মোটামুটি ১৭৬০ সাল থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত ৷
প্ৰথম শিল্প বিপ্লবের কারণে উৎপাদিকা শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। মানুষের কায়িক শ্রমের বড় অংশ যান্ত্রিক শক্তি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হওয়ায় উৎপাদনশীলতায় গুণগত পরিবর্তন আসে। উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে শুরু হয় দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সময়কাল। বিদ্যুত ও রাসায়নিকের ব্যবহার ছিল এই সময়ের চালিকা শক্তি। বাষ্পীয় ইঞ্জিনের জায়গা দখল করে বিদ্যুৎচালিত ইঞ্জিন।
[penci_related_posts dis_pview=”no” dis_pdate=”no” title=”এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন” background=”” border=”” thumbright=”no” number=”4″ style=”list” align=”none” withids=”” displayby=”cat” orderby=”rand”]প্লাস্টিক, কৃত্রিম রাবার, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ঔষধ ইত্যাদি উৎপাদনের ক্ষেত্রে তুমুল বিপ্লব ঘটে যায়। একইসঙ্গে লোহা উৎপাদনের জন্য কুপার চুল্লীর উদ্ভাবন, ইস্পাত উৎপাদনে বেসেমার পদ্ধতির প্রবর্তন, পেট্রোলিয়াম উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, মোটর গাড়ির উদ্ভব, টেলিফোনের আবিষ্কার, টেলিযোগাযোগ এবং জাহাজ শিল্পের বিকাশ ছিল এই সময়ের অর্জন সময়টি বিস্তৃত মোটামুটি বিশ শতকের প্রথমার্ধ্ব পর্যন্ত।
১৯৫০-এর দশকে কম্পিউটার আবিষ্কার হয়। ষাটের দশকের শেষে এলো ইন্টারনেট। সত্তর ও আশির দশকে কম্পিউটারের বিপুল উন্নতি তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের উন্মেষ ঘটায়। নব্বইয়ের দশকে মোবাইল ফোনের সঙ্গে ইন্টারনেটের সংযোগ বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের চিত্র পুরোপুরি পাল্টে দেয়। ইন্টারনেটের তথ্যপ্রবাহে সাধারণ মানুষের অবাধ সুযোগপ্রাপ্তি সামাজিক ও উৎপাদনের জগতে যে বদল ঘটায় তাকে তৃতীয় শিল্প বিপ্লব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
ধারণাটি যেভাবে এলো
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জার্মান অর্থনীতিবিদ ও প্রকৌশলী ক্লউস সোয়াব। ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা বই ‘দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুল্যুশন’। সেটিতে তিনি চলমান প্রযুক্তির উৎকর্ষের ভবিষ্যৎ চিত্র আঁকতে গিয়ে একে ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগ’ হিসেবে অভিহিত করেন।
[penci_blockquote style=”style-2″ align=”none” author=”জার্মান অর্থনীতিবিদ ও প্রকৌশলী ক্লউস সোয়াব”]পূর্বের যেসব শিল্প বিপ্লবের পথ ধরে নতুন বিপ্লবটি ঘটে চলেছে, সেটি বৈশ্বিক আয়ের স্তরে বৃদ্ধি ঘটিয়ে বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনমানে উন্নতি ঘটাবে।[/penci_blockquote]সোয়াবের মূল কৃতিত্ব কেবল চলমান প্রযুক্তি বিপ্লবের নামকরণে নয়— বরং একে বিচারের দৃষ্টিভঙ্গি ও এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতির আলোচনা খুলে দেওয়ার মধ্যেও। এই সহস্রাব্দের শুরু থেকেই— অথবা আরও ষ্পষ্ট করে গত এক কী দেড় দশকে আমরা চারপাশে এক মহাবিপ্লবের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। কেউ চান কী না চান, তাকেও ঢুকে পড়তে হয়েছে এই মহাসমুদ্রের স্রোতে। কিন্তু এর অনিবার্য পরিণতিতে মানবজাতির ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে আলোচনা খুব জরুরি ছিল। সোয়াবকে এজন্য পুরো কৃতিত্ব দিতে হবে।
যে ১০ প্রযুক্তির হাত ধরে বিপ্লব
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কথাটি খানিকটা জটিল মনে হলেও একে বোঝার সহজ উপায় হলো চালিকা শক্তিগুলো চিনে নেওয়া। ১০ ধরনের প্রযুক্তির হাত ধরে পরিবর্তনগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে। যেমন :
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) : আজকাল এটির নাম শোনেনি এমন লোক পাওয়া মুশকিল হতে পারে। এআই হলো সেই সিস্টেম যা মানুষের মতো ‘ভাবতে পারে’। মানুষের মস্তিষ্কের মতো করেই কাজ করে এটি। যেমন— জটিল বিষয় বোঝা, তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সারসংক্ষেপ তৈরি ও সুপারিশ প্রদান। তবে এআই এ কাজগুলো করে মানুষের চেয়ে হাজার গুণ বেশি দ্রুততায়।
ওয়েব৩ : ইন্টারনেটের জগত গত আড়াই দশকে খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে। এটি এখন প্রবেশ করেছে তৃতীয়
অবতারের যুগে। প্রথম অবতার তথা ‘ওয়েব১’-এর হাত ধরে মানুষ ইয়াহু বা গুগলের মতো ওয়েবসাইটে ঢুকে তথ্য জেনে নিত। এরপর এলো ‘ওয়েব২’-এর যুগ। এই যুগে ব্লগ, উইকিপিডিয়া এবং ইউটিউব- ফেসবুক-টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার আগমন ঘটে। এগুলোর মাধ্যমে মানুষ তথ্যের ওপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায়। এরপর আসে ‘ওয়েব৩‘। এই অবতারের হাত ধরে তথ্য অনেক বেশি বিকেন্দ্রীভূত।
ব্লকচেইন : এটি হলো ডাটা রেকর্ড ও শেয়ারিংয়ের সবচেয়ে নিরাপদ, বিকেন্দ্রীভূত ও স্বচ্ছ পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভর করার প্রয়োজনই পড়ে না। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচতি ব্লকচেইন অ্যাপ্লিকেশন হলো বিটকয়েন।
দ্রুতগতির কম্পিউটার : নতুন কম্পিউটেশনাল প্রযুক্তিগুলো স্মার্ট কম্পিউটার তৈরি করছে। ফলে বিশাল তথ্যভান্ডার থেকে দ্রুত তথ্য প্রক্রিয়া করা যাচ্ছে। যেমন ক্লাউড প্রযুক্তি। এর সাহায্যে ইন্টারনেট যোগাযোগের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসেই নিজস্ব তথ্যের ভান্ডারে অবাধে প্রবেশ ও সংরক্ষণ করা যায়। এজন্য কোনো ধরনের হার্ড ড্রাইভ বা সার্ভার সংরক্ষণেরও প্রয়োজন হয় না।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি : ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) মানুষকে বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে ভৌত ডিজিটাল প্রযুক্তির স্বাদ দেয়। অন্যদিকে, অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) হলো ডিজিটাল ও (ফিজিক্যাল) দুনিয়ার একীভূতকরণ। এর বাস্তব উদাহরণ হলো, গুগলের ‘ট্রান্সলেট ফোন’ অ্যাপ। এই অ্যাপের সাহায্যে ব্যক্তি যেকোনো ভাষায় লেখা পথনির্দেশ বা মেন্যু অনুবাদ করে নিতে পারেন।
জৈবপ্রযুক্তি : জৈবপ্রযুক্তিতে সেলুলার ও বায়োমলিক্যুলার প্রযুক্তিকে একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। ফলে শিল্প- উৎপাদনের ক্ষেত্রে আরও দক্ষ প্রক্রিয়ার উদ্ভব হয়। জ্বালানির উৎগুলো হয়ে ওঠে আরও পরিবেশবান্ধব।
রোবোটিকস : ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য রোবটের ডিজাইন, উৎপাদন ও ব্যবহারের বিদ্যা হলো রোবোটিকস। শিল্প-উৎপাদন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রোবোটিকসের বিপুল ব্যবহারের সুযোগ ইতোমধ্যেই বিদ্যমান। সামনে এমন একটি যুগ আসবে যখন প্রত্যেক ঘরে রোবট সহকারীদের দেখা যাবে।
দ্য ইন্টারনেট অব থিংস (The IoT): প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে আমাদের রোজকার জীবনের সব কিছুই এক তারে বাঁধা পড়বে। আর একেই বলা হচ্ছে ‘ইন্টারনেট অব থিংস’। যেমন, আপনি যদি একটি চিকিৎসা সরঞ্জাম পরে রাখেন, তবে সেটি স্বয়ক্রিয়ভাবেই আপনার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেবে। এভাবে ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে যাবে সব কিছুই। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এর অন্যতম সুবিধা হলো, ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ক্রেতার চাহিদা ও পছন্দ বুঝে সেইমতো পণ্য উৎপাদন সম্ভব।
থ্রিডি প্রিন্টিং: শিল্পউৎপাদনের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির ব্যবহার অভাবনীয় পরিবর্তন আনবে। কারখানাগুলোর উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা আসবে, খরচ কমবে, অনেক গুণ দ্রুততার সঙ্গে উৎপাদন হবে এবং কাস্টমাইজেশন সহজ হবে।
আরও যত প্রযুক্তি : এই তালিকায় রাখা যায় উদ্ভাবনী নানা যন্ত্রপাতি ও সবুজ জ্বালানি সংক্রান্ত বিষয়াদিকে। উৎপাদন, নির্মাণ খাত ও স্বাস্থ্য সেবায় এসব প্রযুক্তি তুমুল ঝাঁকুনি দিতে প্রস্তুত। অন্যদিকে, পরিবেশবান্ধব জ্বালানির জন্য নব নব উদ্ভাবনের ফলে পণ্য উৎপাদনে নতুন বিপ্লবের সূচনা হবে।
চ্যালেঞ্জ যেগুলো
শ্রমবাজারের পরিবর্তন : চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে রুটিন ও পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলো রোবোটিক্স, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিংয়ের দখলে চলে গেলে বেকারত্ব বাড়বে। তাই প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পের নতুন ধারায় কর্মসংস্থানের বৈচিত্র্য দেখা দেবে। সেজন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন জরুরি।
ডেমোগ্রাফিতে পরিবর্তন : স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা পরামর্শ ও জীবনমান উন্নত হলে মৃত্যুহার হ্রাস ও আয়ু বৃদ্ধি পায়। তাতে বিশেষ করে প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ে। এর ফলে জনসংখ্যায় নতুন অভিঘাতের সৃষ্টি হবে। প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন তরুণরা। তাই জনশক্তির আকার বয়সভিত্তিক চাহিদায় পরিবর্তন আনতে হয়।
নগরায়ন : শিল্পের উন্নয়নের ফলে অবধারিতভাবে বাড়ে নগরায়ন। তাই অবকাঠামো উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য এবং সামাজিক সেবা সরবরাহের মতো বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হয়।
শিক্ষার যুগোপযুগীকরণ: শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও নতুন পেশা সৃষ্টির মতো বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি। এজন্য বিদ্যমান উচ্চশিক্ষা কাঠামোর সম্প্রসারণ করে সৃজনশীল মানবসম্পদ তৈরির সুযোগ বাড়াতে হবে।
শিল্প-বাণিজ্যে পরিবর্তন : উৎপাদন পদ্ধতি ও বাজারে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ই-কমার্স, মোবাইল মার্কেটিং, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম, ভার্চুয়্যাল বাণিজ্য ইত্যাদি বিষয় যেসব সুযোগ তৈরি করছে, তা গ্রহণে মানবসম্পদকে চলতে হবে তাল মিলিয়ে।
নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা: নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সংক্রান্ত নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। তাই এ সংক্রান্ত নীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় উন্নতি ঘটাতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। তাই সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতাও জরুরি।
কর্মসংস্থান : রোবোটিক্স, স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি, বারকোড ইত্যাদি প্রযুক্তির প্রয়োগ নতুন চাহিদা সৃষ্টি করছে। তাই উদ্ভাবনী দক্ষতায় উন্নয়নও জরুরি হয়ে পড়েছে।
সামাজিক পরিবর্তন : সামাজিক পরিবর্তনে বিপুল প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে সোশ্যাল মিডিয়া। ফলে প্রোগ্রামার, ডিজিটাল মার্কেটার, ইথিক্যাল হ্যাকার, ব্লগারের মতো পেশা তৈরি হচ্ছে।
সমাজের অন্তর্ভুক্তি : শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবা উন্নত হওয়ার ফলে সমাজের অন্তর্ভুক্তি বাড়ছে। এতেও নতুন ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আশঙ্কা নাকি নতুন সুযোগ
প্রশ্ন উঠেছে, এক অবিস্মরণীয় সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা কি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারব? এসব পরিবর্তন কি পৃথিবীর জন্য এক মহান সম্ভাবনার হাতছানি নাকি এক দুর্যোগের ঘনঘটা?
প্রথম ও দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সময়ও শ্রমজীবী মানুষের চাকরি হারানোর চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু ওই সময়েই শ্রমিক শ্রেণির জন্য সবচেয়ে বড় অগ্রগতি ছিল দৈনিক সর্বোচ্চ ৮ শ্রমঘন্টার স্বীকৃতি আদায়। কারণ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটায় গতি ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে শ্রমঘণ্টায় শৃঙ্খলা আনা জরুরি ছিল।
একইভাবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবও নতুন সুযোগের ক্ষেত্র তৈরি করবে। তাই চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। উন্নয়নের পথ নকশায় বিচিত্র মানুষ ও সামাজিক গোষ্ঠীগুলোকে পাশে নিয়ে কল্যাণের কাজে লাগাতে হবে। আগের তিনটি শিল্প বিপ্লব থেকে যেসব ক্ষত তৈরি হয়েছে— যেমন পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা, ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান, মারণাস্ত্রের ব্যবহার— এগুলো নিয়ন্ত্রণের এক অপূর্ব সুযোগও তৈরি হতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে।