‘ক’ একটি পুরাতন গ্রাম। গ্রামের মসজিদের আঙিনায় একটি ঘর। এখানে জনাব মাওলানা আজিম সাহেব সকালবেলা শিশুদেরকে কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা দেন। তাছাড়া শিশুদের নামাজ আদায় করার নিয়ম, পরস্পর দেখা হলে সালাম দেওয়া, কাজের শুরুতে বিস্ মিল্লাহ বলা, খাওয়ার পর আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা ইত্যাদি বিষয় শিক্ষা দেন, যাতে গ্রামের শিশুরা ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসেবে জীবন গড়তে পারে ।
- ইসলাম শব্দের অর্থ কী?
- জ্ঞানান্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ- ব্যাখ্যা করো।
- উদ্দীপকে বর্ণিত গ্রামের মসজিদের ঘরটি তোমার পঠিত কোন বিষয়ের সাথে তুলনীয়? ব্যাখ্যা করো।
- জনাব মাওলানা আজিম সাহেবের শিক্ষায় যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে তার সামাজিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
প্রশ্নের উত্তর
ক. ইসলাম শব্দের অর্থ— আনুগত্য করা, আত্মসমর্পণ করা, শান্তির পথে চলা ইত্যাদি ।
খ. ইসলামের বিধিবিধান এবং মহান আল্লাহর ইবাদতের পদ্ধতি ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানার জন্য ইসলামের মৌলিক জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য অবশ্যকর্তব্য।
দীনি ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে ফরজের বিধান দুই ধরনের। যথা- ফরজে আইন বা অবশ্যই পালনীয় ফরজ এবং ফরজে কিফায়া বা সামষ্টিক বাধ্যবাধকতা। উল্লিখিত হাদিসের মাধ্যমে দীনের মৌলিক জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ করা হয়েছে। এটি না করলে ব্যক্তিগতভাবে গুনাহগার হবে। দীনের গভীর জ্ঞানার্জন করা সবার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। প্রত্যেক সমাজের কিছু লোক দীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন ও এ নিয়ে গবেষণা করতে হবে। অন্যথায় সমাজের সবাই গুনাহগার হবে।
[penci_related_posts dis_pview=”no” dis_pdate=”no” title=”এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন” background=”” border=”” thumbright=”no” number=”4″ style=”list” align=”none” withids=”” displayby=”cat” orderby=”rand”]গ. উদ্দীপকে বর্ণিত গ্রামের মসজিদের আঙিনার ঘরটি আমার পঠিত মক্তবের সাথে তুলনীয়।
আরবি ‘মক্তব’ শব্দের বাংলা অর্থ হলো— লেখার স্থান, বিদ্যালয় বা শিক্ষাকেন্দ্র। এটি ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞানার্জনের একটি আদর্শ স্থান। সাধারণত মসজিদের বারান্দায় বা মাদরাসার সাথে এটি গড়ে তোলা হয়। এখানে মুসলিম শিশুদের কুরআন তেলাওয়াত, হাদিস, ওজু, গোসল, নামাজ, রোজা, শিষ্টাচার ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়; যা উদ্দীপকে বর্ণিত ঘরটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উদ্দীপকে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ক’ নামে একটি গ্রামের মসজিদের আঙ্গিনায় একটি ঘর রয়েছে। মাওলানা আজিম সাহেব সেখানে সকালবেলা শিশুদেরকে কুরআন তিলাওয়াত ও নামাজের নিয়ম শিক্ষা দেন। এছাড়াও ইসলামি সংস্কৃতির ব্যাবহারিক বিভিন্ন দিক সম্পর্কে শিক্ষা দেন। এসব কর্মকাণ্ড থেকে বোঝা যায়, ‘ক’ গ্রামের ঐ ঘরটির সাথে মক্তবের মিল রয়েছে। মুসলিম শিশুদের সামাজিকীকরণ, প্রাথমিক শিক্ষা ও মানসিক বিকাশে মক্তব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঘ. জনাব মাওলানা আজিম সাহেবের শিক্ষায় ইসলামি সংস্কৃতির ব্যাবহারিক দিক ফুটে উঠেছে।
ইসলাম অনুমোদিত ও কুরআন-হাদিসে নির্দেশিত মুসলমানদের জীবনপদ্ধতিই হলো ইসলামি সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতির মাধ্যমে মুসলিম জাতির স্বতন্ত্র অস্তিত্ব প্রকাশ পায়। পরস্পর দেখা হলে সালাম দেওয়া, ভালো কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা, খাওয়ার পর আল্লাহর শোকরিয়া করা প্রভৃতি ইসলামি সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবহারিক দিক; যা মাওলানা আজিম সাহেবের শিক্ষায় লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকের মাওলানা আজিম সাহেব গ্রামের শিশুদেরকে কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি নামাজ আদায়ের নিয়ম, পারস্পরিক সাক্ষাতে সালাম দেওয়া, কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা ও খাওয়ার পর আল্লাহর শোকরিয়া করার শিক্ষা দেন। এগুলো ইসলামি সংস্কৃতির ব্যাবহারিক দিক। ইসলামি সংস্কৃতির গুরুত্ব অপরিসীম। পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতে সালাম বিনিময় করলে সুসম্পর্ক তৈরি হয় এবং সৌহার্দ ও সম্প্রীতি গড়ে ওঠে।
আল্লাহর নাম নিয়ে কোনো ভালো কাজ শুরু করলে সে কাজে আল্লাহ তায়ালা বরকত দান করেন। খাওয়ার পর আল্লাহর শোকর করার মাধ্যমে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়। এতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে রিজিক বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে মানুষ সমাজের অপর মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে শেখে। এতে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয় ।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবনে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে সুশৃঙ্খল ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা যায় ।