পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জনবসতির ওপর প্রতিনিয়ত নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে। বাংলাদেশেও স্বাভাবিক কারণেই আবহাওয়ার তথা পরিবেশের পরিবর্তন ঘটছে। ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস, এ প্রেক্ষাপটে বিরূপ আবহাওয়ার নানা কথা নিয়ে আমাদের এ আয়োজন।
আবহাওয়া
আবহাওয়া কোনো স্থানের স্বল্প সময়ের বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা। সাধারণত এক দিনের এমন রেকর্ডকেই আবহাওয়া বলে। আবার কোনো একটি বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে আবহাওয়ার উপদানগুলো যেমন বায়ুর তাপ, চাপ, আদ্রতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ বছরের যে সাধারণ অবস্থা (গড় অবস্থা) দেখা যায় তাকে জলবায়ু বলে।
বিরূপ আবহাওয়ার কারণ
বৃক্ষনিধন, শিল্পকারখানা স্থাপন, দূষণ ও নগরায়ণের ফলে আবহাওয়ায় দীর্ঘস্থায়ী বৈরিতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে বায়ুমণ্ডল তাপ আটকে রাখছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জনবসতির ওপর প্রতিনিয়ত নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যথা— দাবানল, তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি, আকষ্মিক বন্যা ইত্যাদি আঘাত হানছে।
দাবানল
দাবানল বা Wildfire হচ্ছে বনভূমি বা বনাঞ্চলে সংঘটিত অনিয়ন্ত্রিত আগুন। উত্তপ্ত বা শুষ্ক আবহাওয়ায় বনাঞ্চল সমৃদ্ধ যেকোনো স্থানেই দাবানল দেখা দিতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে সাধারণত দুটি উপায়ে দাবানল শুরু হতে পারে। প্রথমত, যদি কোনো শুষ্ক বনভূমির ওপর বজ্রপাত এবং দ্বিতীয়ত, কোনো আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত লাভা অথবা বিভিন্ন পদার্থের জ্বলন্ত টুকরা থেকে। এছাড়া মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণেও দাবানল সৃষ্টি হয়। তবে সাম্প্রতিককালে মানবসৃষ্ট কারণেই দাবানল বেশি ঘটে থাকে।
তাপপ্রবাহ
কোনো জায়গার দৈনিক যে গড় তাপমাত্রা তা থেকে ৫ বেড়ে গেলে এবং পরপর ৫ দিন তা চলমান থাকলে তাকে Heat wave বা তাপপ্রবাহ বলা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৩৬°-৩৭.৯° সেলসিয়াস হয়, তবে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। ৩৮o- ৩৯.৯° তাপমাত্রাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয় যখন তাপমাত্রা ৪০°-৪১.৯° মধ্যে থাকে। যে শহরে খোলা জায়গা ও গাছপালা যত বেশি থাকবে, সেই এলাকার মানুষ তাপপ্রবাহের ক্ষতিকর প্রভাব তত কম অনুভব করবে।
আকস্মিক বন্যা
অল্প সময়ের মধ্যে ভারী বা অত্যধিক বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট একটি বন্যাকে আকষ্মিক বন্যা বলে।
অতিবৃষ্টি
যখন বৃষ্টিপাতের হার প্রতি ঘণ্টায় > ৭.৬ মিমি (০.৩০ ইঞ্চি), বা ১০ মিমি (০.৩৯ ইঞ্চি) এবং ৫০ মিমি (২.০ ইঞ্চি) প্রতি ঘণ্টার মধ্যে হয় তখন তাকে অতিবৃষ্টি বা ভারী বৃষ্টি বলে।
এল নিনো ও লা নিনা
স্প্যানিশ শব্দ ‘এল নিনো’ (El Nino) এর অর্থ Little Boy বা ‘ছোট ছেলে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ থাকে, তখন তাকে এল নিনো বলা হয়। আর এর বিপরীত অবস্থার নাম ‘লা নিনা’ (La Nina), যার অর্থ Little Girl বা ‘ছোট মেয়ে’।
আরো পড়ুন : বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ
পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, তখন তাকে লা নিনা বলা হয়। এল নিনো বন্যা, খরা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যে বছর এল নিনো দেখা দেয়, তার পরের বছরে বেড়ে যায় বিশ্বের উষ্ণতা। ১৬ শতকে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের এক দল জেলে প্রথম খেয়াল করেন এ উষ্ণ সমুদ্রজল। এরপর থেকে দুঃসংবাদের মতো পৃথিবীতে প্রায়ই ফিরে আসে এল নিনো।
ক্লাউড সিডিং
কৃত্রিম বৃষ্টিপাত হলো প্রকৃতির ওপর বৈজ্ঞানিক প্রভাব খাটিয়ে জোর করে বৃষ্টি নামানো। এ জন্য প্রথমে মেঘ সৃষ্টি করতে হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে এ মেঘকে ঘনীভূত করে বৃষ্টিপাতের উপযোগী অবস্থায় নিয়ে আসতে হয় এবং পরিশেষে বৃষ্টি ঝরানো হয়। ক্লাউড সিডিংয়ে সাধারণ রাসায়নিক যেমন— সিলভার আয়োডাইড, পটাশিয়াম আয়োডাইড অথবা শুষ্ক বরফ বা কঠিন কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত ক্লাউড সিডিং অনেক সময় পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাবও ফেলতে পারে। ২০২৪ সালে এপ্রিল মাসে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে মরু শহর দুবাই। আর এই ভারী বৃষ্টির জন্য দায়ী করা হয় ক্লাউড সিডিংকে।
হিট স্ট্রোক
হিট স্ট্রোক এক ধরনের হাইপারথার্মিয়া। হাইপার হচ্ছে অধিক মাত্রা, আর থার্মিয়া মানে তাপ। হিট স্ট্রোক হলো তাপজনিত সবচেয়ে গুরুতর অসুস্থতা। প্রচণ্ড গরমে বা গরম আবহাওয়ার কারণে মানুষের শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে যায়। শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে বা রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে মানুষ অজ্ঞান হয়, খিঁচুনি দেখা দেয়। একে বলা হয় হিটস্ট্রোক।
হিটক্র্যাম্প
হিট ক্র্যাম্প একটি সাধারণ সমস্যা। এই অসুস্থতার ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা, যারা গরমে কায়িক পরিশ্রম করেন বেশি। ঘাম শরীরের লবণ এবং আর্দ্রতার মাত্রা হ্রাস করে। পেশীতে লবণের কম মাত্রা বেদনাদায়ক ক্র্যাম্প সৃষ্টি করে। হিট ক্র্যাম্পও তাপক্লান্তির লক্ষণ হতে পারে। পেটে, বাহুতে বা পায়ে পেশীর ক্র্যাম্প, ব্যথা বা খিঁচুনি হিট ক্র্যাম্পের লক্ষণ।
হিট র্যাশ
হিট র্যাশ হলো গরম, আর্দ্র আবহাওয়ায় অতিরিক্ত ঘামের কারণে ত্বকের জ্বালা। এতে শরীরে পিম্পল বা ছোট ফুসকুড়ি দেখা যায়।
হিট অ্যালার্ট
হিট ওয়েভ বা তাপপ্রবাহ হলো অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া। আর এই তাপপ্রবাহ সম্পর্কে যে সতর্কতা জারি করা হয় সেটাই মূলত হিট অ্যালার্ট (Heat alert ) বা হিট ওয়েভ অ্যালার্ট। তাপপ্রবাহ চরম মাত্রায় বাড়লে আরও বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেওয়ার শঙ্কাও তৈরি হয়। তাছাড়া মানুষের সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে হতে পারে মৃত্যুর কারণ
তাপক্লান্তি
শরীর অতিরিক্ত পরিমাণে পানি এবং লবণ হারিয়ে ফেলার কারণে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে অত্যধিক ক্লান্ত লাগা। বয়স্ক ব্যক্তি, যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, যারা গরম পরিবেশে কাজ করেন তাদের এমনটা হতে পারে।
মহাদেশভিত্তিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
মহাদেশ | তাপমাত্রা (°C) | স্থান/দেশ | সাল |
এশিয়া | ৫৪ | ইরান | ২০১৭ |
ইউরোপ | ৪৮.৮ | ইতালি | ২০২১ |
আফ্রিকা | ৫৫ | তিউনিশিয়া | ১৯৩১ |
উত্তর আমেরিকা | ৫৬.৭ | যুক্তরাষ্ট্র | ১৯১৩ |
দক্ষিন আমেরিকা | ৪৮.৯ | আর্জেন্টিনা | ১৯০৫ |
ওশেনিয়া | ৫০.৭ | অস্ট্রেলিয়া | ১৯৬০ |
এন্টার্কটিকা | ২০.৭ | সেইমোর আইল্যান্ড | ২০২০ |
আপডেট ৫ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত
জানেন কি
বিষয় | বিশ্বে | বাংলাদেশে |
উষ্ণতম স্থান | মৃত উপত্যাকা, যুক্তরাষ্ট্র | লালপুর, নাটোর |
শীতলতম স্থান | ভারখয়ানস্ক, রাশিয়া | লালাখাল, সিলেট |
সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত | মৌসিনরাম, মেঘালয়, ভারত | লালাখাল, সিলেট |
সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত | আতাকামা মরুভূমি, চিলি | লালপুর, নাটোর |
তাপমাত্রার যত রেকর্ড
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
- বিশ্বে : ৫৬.৭°C বা ১৩৪.১°F, ১০ জুলাই ১৯১৩; যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ফার্নেস ক্রিক (গ্রিনল্যান্ড র্যাঞ্চ)।
- বাংলাদেশে : ৪৫.১°C বা ১১৩.২°F, ৩০ মে ১৯৭২; রাজশাহী।
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
- বিশ্বে : -৮৯.২°C বা -১২৮.৬°F, ২১ জুলাই ১৯৮৩; অ্যান্টার্কটিকায়।
- বাংলাদেশে : ২.৬°C বা ৩৬.৬৮°F, ৮ জানুয়ারি ২০১৮; তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়।
# পৃথিবীর সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৭.০১°C বা ৬২.৬২°F), ৩ জুলাই ২০২৩।
# বাংলাদেশে সবচেয়ে ভারী শিলার আকার ১.০২ কেজি বা ২.২৫ lb; গোপালগঞ্জ ১৪ এপ্রিল ১৯৮৬।
অতিরিক্ত গরমের প্রভাব
- শরীরে অস্বস্তিবোধ
- পানিশূন্যতা
- প্রচণ্ড মাথা ব্যথা
- খাবারে অরুচি
- চামড়ায় ক্ষত
- কিডনি ও ফুসফুসে সমস্যা
- শ্বাসকষ্ট
- হার্টের সমস্যা
- হিট স্ট্রোক
- হিট ক্র্যাম্পস
অতিরিক্ত গরমে করণীয়
- বেশি করে পানি পান করুন
- পাতলা, আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন
- যথাসম্ভব ঠাণ্ডা স্থানে থাকুন
- নিয়মিত এবং প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করুন
- চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
- বাইরে ছাতা ব্যবহার করুন
- মৌসুমী ফল ও শাক- সবজি গ্রহণ করুন
- পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিন।
- চোখের যত্নে রোদে সানগ্লাস ব্যবহার করুন
- ত্বকের যত্নে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
- পানিশূন্যতা পূরণে খাবার স্যালাইন গ্রহণ করুন
- অ্যাজমা রোগে আক্রান্তরা যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করুন
অনুচ্ছেদ রচনা | |
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী | |
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য | |
ইসলাম ধর্ম | |
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি | |
এইচএসসি | |
এসএসসি | |
ওয়েব ডিজাইন | |
কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি | |
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স | |
গ্রন্থ-সমালোচনা | |
চাকরি-বাকরি | |
জীবনযাপন | |
জীববিজ্ঞান | |
জেলা পরিচিতি | |
টিপস | |
দেশ পরিচিতি | |
তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি | |
নৈতিকতা মূল্যবোধ ও সুশাসন | |
পদার্থ বিজ্ঞান | |
পিডিএফ ডাউনলোড | |
পৌরনীতি ও নাগরিকতা | |
প্রতিষ্ঠান পরিচিতি | |
প্রবন্ধ আলোচনা | |
প্রশ্ন সমাধান | |
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং | |
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য | |
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি | |
বাংলা রচনা সম্ভার | |
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় | |
বাংলাদেশ বিষয়াবলী | |
বিসিএস প্রস্তুতি | |
ভাইভা প্রস্তুতি | |
ভাবসম্প্রসারণ | |
ভূগোল পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা | |
লেখক পরিচিতি | |
সাধারণ জ্ঞান | |
সাধারন বিজ্ঞান | |
সামাজিক বিজ্ঞান | |
স্বাস্থ্য টিপস |