টিপস

শেফ হতে চাইলে যা জানা দরকার

শেফ একটি রোমাঞ্চকর পেশা। এই পেশার মাধ্যমে নিজেকে গোটা বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করা যায়। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর অনুশীলনের মাধ্যমে এতে ক্যারিয়ার গড়া খুব সহজ। রন্ধন-সংক্রান্ত এই পেশার জন্য পড়ালেখাকে বলা হয় ‘কালিনারি আর্টস’। সারাবিশ্বেই এই বিষয়ে শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশেও বেশ কয়েকটি স্বীকৃত ইনস্টিটিউটে পড়াশুনা করে ক্যারিয়ার গড়া যায় ।

কেন আসবেন এই পেশায়

বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেটসহ সারাদেশের পর্যটন স্থানগুলোতে গড়ে ওঠেছে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল-মোটেল এবং ফাস্ট ফুডের রেস্টুরেন্ট। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দক্ষ শেফের চাহিদা। পাশাপাশি বিশ্বের অনেক দেশে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ পেশাটি। তাই দেশি-বিদেশি খাবারের রাঁধুনি তথা কুক বা শেফদের চাহিদা এখন তুমুল ।

কাজের ক্ষেত্র

একজন শেফ তারকা হোটেল ছাড়াও চাকরি পেতে পারেন বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানিসহ ট্যুর ও ট্রাভেল এজেন্সির কুক বিভাগে। আর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ তো থাকছেই । যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড, সাইপ্রাস, দুবাই ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাকরির সুযোগ অফুরন্ত।

যোগ্যতা :

শিক্ষাগত

এইচএসসি পাশের পর হোটেল ম্যানেজমেন্টের ওপর অনার্স শেষ করে এ পেশায় আসা যায়। তাছাড়া এসএসসি বা এইচএসসি পাশের পরও ‘ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রডাকশন’ ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করে কাজ শুরু করা যায়। তবে শুদ্ধভাবে ইংরেজি বলতে পারলে এ পেশায় সাফল্যের দেখা মিলবে সহজেই ।

প্রশিক্ষণ

শেফ বা কুক হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সের একটি অংশ। প্রশিক্ষিত শেফ হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে হলে ‘ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রডাকশন’ কোর্সটি সম্পন্ন করতেই হবে। এ কোর্সের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো— বাংলাদেশি, চাইনিজ, ইটালিয়ান, ইউরোপিয়ান, ইন্ডিয়ান খাবার তৈরির প্রণালি, ডেকোরেশন; হাইজিন অ্যান্ড স্যানিটেশন। এসব বিষয়ে দুই মাসের, ছয় মাসের এবং এক বছরের সার্টিফিকেট কোর্স করে নিজেকে তৈরি করে নেওয়া যায়।

প্রফেশনাল শেফ কোর্স নামের ডিপ্লোমা কোর্সও রয়েছে । মনে রাখতে হবে, চাকরির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি কোর্সগুলো বেশি গ্রহণযোগ্য। মূলত ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আওতায় ৪টি মূল বিষয়ের ওপর ডিপ্লোমা বা শর্ট কোর্স করা যায়। যেমন- ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজমেন্ট, হাউস কিপিং ম্যানেজমেন্ট, কালিনারি আর্টস বা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রডাকশন ও ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট। যাঁরা শেফ হতে চান, তাঁরা বেছে নিতে পারেন কালিনারি আর্টস বা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রডাকশন বেছে নেবেন ।

কোর্সের নানা ধাপ:

৯টি ধাপ পর্যন্ত ‘ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রডাকশন’ বিষয়ে পড়া যাবে। প্রথম ধাপে মূলত কাটিং শেখানো হয়। অর্থাৎ খাবার তৈরির উপকরণগুলো কীভাবে কাটতে হয়, শুরুতেই দেওয়া হবে সেই প্রশিক্ষণ। আরেকটি হলো, খাবার সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া । প্রথম থেকে চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত মূলত ৩টি বিষয়ে পড়ানো হয়- প্রস্তুতি (প্রিপারেশন), রান্না (প্রডাকশন) ও পরিবেশন (প্রেজেন্টেশন)। পঞ্চম থেকে নবম ধাপে এই ৩টি বিষয় সম্পর্কে আরও বিস্তারিত শেখা যায় ।

কোথায় পড়ব

ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট অব কালিনারি আর্টস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০১৭ সালে। প্রতিষ্ঠানটিতে ‘ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রডাকশন’ বিভাগের ৪টি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়া যাবে। ‘মাল্টি কুজিন’ নামের একটি স্বল্পমেয়াদি কোর্স রয়েছে। আরেকটি কোর্সের নাম ‘ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রডাকশন’। এটি সাড়ে ৩ মাসের একটি সার্টিফিকেট কোর্স। ‘বেকিং ও পেস্ট্রি প্রডাকশন’ বিষয়ে ৩ মাসের সার্টিফিকেট কোর্সে অংশগ্রহণ করা যায়। এছাড়া করা যাবে ৯ মাসের প্রফেশনাল শেফ কোর্স ।

আরও যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নেওয়া যেতে পারে-

  • ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, মহাখালী, ঢাকা ।
  • বাংলাদেশ হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, গ্রিন রোড, ঢাকা ।
  • ইনস্টিটিউট অব ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ধানমন্ডি, ঢাকা।
  • বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট, ধানমন্ডি, ঢাকা ।
  • রাজমণি ঈশা খাঁ হোটেল ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং কোর্স, কাকরাইল, ঢাকা ।

প্রতিষ্ঠান-ভেদে খরচ

  • খরচ ১০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ।
  • ডিপ্লোমা ইন প্রফেশনাল শেফ কোর্সে সম্ভাব্য খরচ ১ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button