নিঃসরণ (Effusion)

নিঃসরণ (Effusion)

সরু ছিদ্রপথে উচ্চচাপের স্থান থেকে কোনাে গ্যাস নিম্নচাপের স্থানের দিকে সজোরে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে নিঃসরণ বলে। একটি বেলুনকে ফু দিয়ে ফোলাও। এবারে বেলুনের গায়ে এক টুকরা কচটেপ লাগাও। এখন একটি আলপিন দিয়ে কচটেপের উপর দিয়ে বেলুনটিকে ছিদ্র কর। কী দেখলে? বেলুনের ভিতরের সমস্ত বাতাস ছিদ্রপথ দিয়ে সজোরে বেরিয়ে গিয়ে বেলুনটি চুপসে গেছে (স্কচটেপ না লাগিয়ে বেলুনটা ফুটো করার চেষ্টা করলে সেটি সশব্দে ফেটে যাবে)।

বেলুনের ভেতরে বাতাসের চাপ বেশি ছিল এবং বেলুনের বাইরে বাতাসের চাপ কম ছিল। তাই উচ্চচাপের প্রভাবে ছিদ্রপথ পাওয়ার সাথে সাথে বেলুনের বাতাস নিম্নচাপের স্থানের দিকে ধাবিত হয়েছে। এটি মূলত নিঃসরণ। অর্থাৎ সরু ছিদ্রপথে কোনাে গ্যাসের অণুসমূহের উচ্চ চাপের স্থান থেকে নিম্নচাপের স্থানের দিকে সজোরে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াকে নিঃসরণ বলে। তাপ প্রদান করলে ব্যাপনের মতাে নিঃসরণের হারও বৃদ্ধি পায়।

আরও পড়ুন :  অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং

আমরা যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে সিএনজি (CNG: Compressed Natural Gas) ব্যবহার করি। এটি মূলত উচ্চচাপে সংকুচিত মিথেন গ্যাস। যানবাহন চালানাের সময় এটি সিলিন্ডার থেকে সজোরে বেরিয়ে এসে ইঞ্জিনে প্রবেশ করে। অর্থাৎ এখানে নিঃসরণের ঘটনা ঘটে। আবার, বাসাবাড়িতে জ্বালানি হিসেবে সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে মূলত প্রােপেন ও বিউটেন গ্যাসকে উচ্চচাপে সংকুচিত করে তরল অবস্থায় সিলিন্ডারে ভর্তি করা হয়।

আরও পড়ুন :  বিশ্বের ৯টি আশ্চর্যজনক ঘটনা

চুলা জ্বালানাের সময় যখন সিলিন্ডারের মুখ খুলে দেওয়া হয় তখন এটি গ্যাসে পরিণত হয়ে সজোরে বেরিয়ে আসে। অর্থাৎ এতেও নিঃসরণের ঘটনা পরিলক্ষিত হয়।

ব্যাপন ও নিঃসরণ মূলত একই ঘটনা। এদের মধ্যে মূল পার্থক্য হলাে: ব্যাপনের ক্ষেত্রে চাপের প্রভাব নেই কিন্তু নিঃসরণের ক্ষেত্রে চাপের প্রভাব আছে। ব্যাপনের ক্ষেত্রে কোনাে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ উপযুক্ত মাধ্যমে সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে কিন্তু নিঃসরণের ক্ষেত্রে কেবল গ্যাসীয় পদার্থ গ্যাসীয় মাধ্যমে সরু ছিদ্রপথ দিয়ে সজোরে পাত্র থেকে বের হয়ে আসে। রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে আমরা সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করি।

আরও পড়ুন :  মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র

আমরা যদি শুধু সিলিন্ডারের মুখ খুলে দেই এবং আগুন না ধরাই তবে সিলিন্ডার থেকে প্রথমে সরু ছিদ্রপথ দিয়ে গ্যাস বের হয়ে আসবে অর্থাৎ এক্ষেত্রে নিঃসরণের ঘটনা ঘটে। এরপর সিলিন্ডার থেকে বেরিয়ে আসা ঐ গ্যাস ঘরের চারদিকে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে ব্যাপনের ঘটনা ঘটবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রথমে নিঃসরণ তারপরে ব্যাপনের ঘটনা ঘটবে।

Leave a Reply