এন্টিবায়োটিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আপনার জানা দরকার

এন্টিবায়োটিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আপনার জানা দরকার

এন্টিবায়োটিক সম্পর্কে জানুনঃ আমরা যখন রােগে ভুগি তখন সাময়িক উপশমের জন্য দেদারসে ওষুধ গিলি। কিন্তু বেশিরভাগই এন্টিবায়ােটিকের কোর্স শেষ করি। আবার কয়েকমাস পর একই উপসর্গ দেখা দিলে সহজে কিন্তু ডাক্তারের কাছে যাই না; আগের ওষুধটা নিজে নিজে খেয়ে ফেলি। কখনও কখনও পরিচিতদের পরামর্শে নিজেরাই ডাক্তার বনে যাই- ‘অমুক ভাই’ উপকার পেয়েছেন বলে আমরাও আশ্বস্ত হই এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ খাই।

মূল সমস্যাটা হলাে আমাদের অতিরিক্ত ওষুধ নির্ভরতা। ডা. জন রবিন্স এ অবস্থার জন্যে চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে রােগীদের ভ্রান্ত ধারণাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, এরা মনে করে যে, সুস্বাস্থ্য বা নিরাময় ডাক্তার, ড্রাগস্টোর বা হাসপাতালে রয়েছে। ডাক্তার তাদেরকে ধন্বন্তরী ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা ইনজেকশন দিয়ে ভালাে করে দেবেন। এ আশায় রােগীরা ডাক্তারের পর ডাক্তার আর ওষুধের পর ওষুধ বদলায়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের অবস্থা দিনের পর দিন একই থাকে।

আসলে রােগ ও অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য প্রথম প্রয়ােজন দৃষ্টিভঙ্গি বা জীবন চেতনার পরিবর্তন। অপনাকে জানতে হবে যে, নিরাময়ের ক্ষমতা আপনার নিজের ভেতরেই আছে, ডাক্তার কেবল সহায়ক শক্তি মাত্র। যতক্ষণ নিজে বিশ্বাস করতে না পারছেন যে আপনিও সুস্থ হতে পারেন ততক্ষণ কোনাে চিকিৎসাই আপনাকে সুস্থ করতে পারবেনা।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, শতকরা ৭৫ ভাগ রােগের কারণই হচ্ছে মনােদৈহিক। অর্থাৎ কোনাে ঘটনার প্রেক্ষিতে আপনার মানসিক প্রতিক্রিয়াই ৭৫ ভাগ রােগ সৃষ্টির কারণ। শতকরা ১৫ ভাগ রােগের কারণ হচ্ছে ইনফেকশন, ভাইরাস আক্রমণ, ভুল খাদ্য গ্রহণ ও ব্যায়াম না করা।

শতকরা ১০ ভাগ রােগের কারণ হচ্ছে দৈহিক আঘাত, ওষুধ ও অপারেশনের প্রতিক্রিয়া। তাই শতকরা ৭৫ ভাগ রােগই শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে সুস্থ জীবনদৃষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে নিরাময় হতে পারে। অন্যান্য রােগ নিরাময়েও ওষুধ, সার্জারির পাশাপাশি সুস্থ জীবনদৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবার গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় ” এন্টিবায়ােটিক” সম্পর্কে জানুনঃ

আরও পড়ুন :  বিসিএস পরীক্ষার জন্য সাধারণ বিজ্ঞান থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

এন্টিবায়ােটিক কী?

এন্টিবায়ােটিক হচ্ছে সেই সব ঔষধ যা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা পরজীবী ধ্বংস করে অথবা এদের বিষক্রিয়াকে নষ্ট করে। ব্যাকটেরিয়াজনিত বিভিন্ন রােগে এন্টিবায়ােটিক একটি বহুল ব্যবহৃত সফল ঔষধ।

এন্টিবায়ােটিক রেজিস্টেন্স কী?

এন্টিবায়ােটিক রেজিস্ট্যান্স বলতে বােঝায় এন্টিবায়ােটিকের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়া অর্থাৎ যদি এমন কোন ঔষধের বিরুদ্ধে। জীবাণুর প্রতিরােধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে যার প্রতি একসময় জীবাণুটি সংবেদনশীল ছিল (মানে ঔষধটি জীবাণুর বিষক্রিয়া নষ্ট করতে পারত) কিন্তু ওই জীবাণুর বিপক্ষে এটি এখন আর কাজ করতে পারছে না। অর্থাৎ কোনাে বিশেষ জীবাণুর জন্য যেসব গুণাবলী ওষুধে থাকার কথা তা ঠিক রয়েছে এবং তা সঠিকভাবে সংরক্ষণও করা হয়েছে। কিন্তু সবকিছুর পরও ওই জীবাণুর বিপক্ষে এটি আর কাজ করতে পারছে না!

যদি কোন জীবাণু এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্ট হয়ে যায়, তখন তাকে সহজ ভাষায় বলা যায় ড্রাগ রেজিস্টেন্ট হয়ে যাওয়া। এর মানে হচ্ছে, তখন সেই জীবাণুর উপর সাধারণ কোন ঔষধ কাজ করতে পারবে না। এখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসবে কেন রেজিস্টেন্ট হয়ে যায়।

এন্টি বায়ােটিক আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে বিভিন্ন জীবাণু বা ভাইরাস তার বিরুদ্ধে এন্টিবডি উৎপন্ন করে মানে জীবাণু গুলাে এন্টিবায়ােটিক এর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ ব্যাবস্থা গড়ে তােলে। ফলে তারা সাময়িক ভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং আমাদের শরীর সুস্থ হতে শুরু করে। কিন্তু জীবাণু বা ভাইরাস কিন্তু তখনাে শরীরে থেকে যায় এন্টিবডির মাধ্যমে। এখন আমরা যদি ওই অবস্থায় এন্টিবায়ােটিক খাওয়া বন্ধ করে দেই তাহলে জীবাণু গুলাে পুনরায় আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে এবং আবার রােগ সৃষ্টি করে।

আরও পড়ুন :  ভিডিও কনফারেন্সিং কী? “বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদে ড্রাইভিংপ্রশিক্ষণ সম্ভব"- বুঝিয়ে লিখ।

কিন্তু সমস্যা হল আপনি যদি এখন আবার ওই এন্টি বায়ােটিক খান তাহলে কিন্তু তা আর কাজ করবেনা। কারণ কী জানেন? ওই যে আপনার শরীরে আগের এন্টিবডি গুলাে থেকে যায় তাই। তখন জীবাণু গুলাে প্রথম থেকেই এন্টিবায়টিক এর বিপরীতে প্রতিরােধ গড়ে তােলে তখন আর ঐ গ্রুপের এন্টিবায়ােটিকে কাজ হয় না। এমনকি ওই এন্টিবায়ােটিক আপনার শরীরে আর কোনােদিন কাজ করবেনা। তাই আমাদের করনীয় হল যখনই এন্টিবায়ােটিক দেওয়া হবে, অবশ্যই পুরাে কোর্সটি সম্পন্ন করতে হবে।

এই জীবাণুরা ড্রাগ রেজিস্টেন্ট হয়ে গেলে কী ক্ষতি হবে জানেন?

  1. সাধারণভাবে ব্যবহৃত এন্টিবায়ােটিক এদের উপর আর কাজ করবেনা।
  2. নতুন ড্রাগ তৈরী করতে হবে যা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং সমগ্র চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য হুমকি।
  3. চিকিৎসা হয়ে যাবে ব্যয়বহুল এবং জটিল, অনেকক্ষেত্রে সাধারণের হাতের নাগালের বাইরে।
  4. চিকিৎসা ফলপ্রসূ হবে না, রােগী দীর্ঘদিন যাবত সংক্রমিত থাকতে পারে, অন্যকে সহজে সংক্রমিতও করতে পারে।
  5. বড় বড় সার্জারি, অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট যা এখন অনায়াসে হচ্ছে, সেগুলাে হয়ে যাবে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ।

এন্টিবায়ােটিকের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার কারনঃ

কারণ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বিনা প্রয়ােজনে যখন তখন এন্টিবায়ােটিক সেবন। এন্টিবায়ােটিকের ব্যবহার যখন ঠিকমত হয় না অর্থাত্ সঠিক ডােজ না হওয়া বা সঠিক এন্টিবায়ােটিকের ব্যবহার না করা বা প্রয়ােজন না থাকা সত্ত্বেও এন্টিবায়ােটিকের ব্যবহার করা। তখন জীবাণু সেই এন্টিবায়ােটিকের বিরুদ্ধে এমন কিছু পরিবর্তন নিজের মাঝে আনে সেজন্য আর ওই এন্টিবায়ােটিক কার্যকরী হয় না।

আরও পড়ুন :  বিসিএস প্রস্তুতিতে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে প্রশ্ন ও সমাধান

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, একটা বা একজন মানুষের শরীরের জীবাণুতে যে পরিবর্তন আসে, একটা এলাকার সব জীবাণুতেই কি সেই পরিবর্তন আসবে? এলেও তা কীভাবে? এর উত্তর হচ্ছে, সেই পরিবর্তনটি এলেই হবে। কেননা, যে জীবাণু নিজের জেনেটিক কোডে পরিবর্তন এনে রেজিস্ট্যান্ট হয়, সেই জীবাণু বিভিন্নভাবে অন্য জীবাণুর মাঝে এই জেনেটিক কোড ছড়িয়ে দিতে পারে অথবা একটি এক্সট্রা জেনেটিক কোড ছড়িয়ে দিতে পারে পরিবেশে, পরবর্তী সময়ে পরিবেশের অন্যান্য জীবাণু সেই কোড গ্রহণ করে রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যেতে পারে।

WHO-এর পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের করণীয়

  • ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রে উল্লিখিত ডােজ ও সময় অনুসারে এন্টিবায়ােটিক ব্যবহার করুন।
  • ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করুন কোন এন্টিবায়ােটিক দেয়া হয়েছে।
  • সর্দি-কাশি এবং আধিকাংশ ডায়রিয়ার চিকিৎসায় এন্টিবায়ােটিক প্রয়ােজন হয় না, এর জন্য তরল পানীয় ও বিশ্রামই যথেষ্ট।
  • অতীতে অসুস্থতার জন্য দেয়া এন্টিবায়ােটিক চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আবার ব্যবহার করা যাবে না।

সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

ডায়রিয়া : আপনি কি জানেন এন্টিবায়ােটিক গ্রহণের ফলে আপনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন? আমাদের বডি সিস্টেমের মধ্যে ভালাে এবং খারাপ উভয় ব্যাকটেরিয়া আছে। এন্টিবায়ােটিক শুধু খারাপ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে না সঙ্গে কিছু ভালাে ব্যাকটেরিয়াও ক্ষতিগ্রস্তও হয় আর আমাদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল নালীর মধ্যে ভালাে এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বিপর্যস্ত হলে এন্টিবায়ােটিক সংশ্লিষ্ট ডায়রিয়া দেখা দেয়।

বমি বমি ভাব : সাধারণত সব ওষুধেই এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তাই এখন থেকে কম ওষুধ খাবেন। অবশ্যই জটিল অসুখের ব্যাপারটা আলাদা। কিন্তু সামান্য অসুখে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে যাওয়াটা ঠিক নয়। সেক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস বা জীবনাচার পরিবর্তন আপনাকে সুস্থ করে তুলতে পারে।

Leave a Reply