সর্দি-জ্বরের প্রাথমিক চিকিৎসা

সর্দি-জ্বরের প্রাথমিক চিকিৎসা

সর্দি-জ্বর কমন কোল্ড বাংলাদেশের অত্যন্ত পরিচিত রােগ। আমাদের দেশে সম্ভবত এমন লােক খুঁজে পাওয়া যাবে না যার বছরে অন্তত দু’একবার সর্দি-জ্বর হয়নি। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ কিংবা অফিসপাড়ায় প্রায়ই হাঁচি দিতে থাকা অথবা নাকের পানি মুছতে থাকা লােকজন নজরে পড়ে। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, চিকিৎসক-প্রকৌশলী আমরা কেউ এ রােগ থেকে মুক্ত নই। একবিংশ শতকেও এ বিরক্তিকর রােগটি থেকে আমরা রেহাই পাইনি।

কী কারণে সর্দি জ্বর হয়

সর্দি-জ্বর মানব দেহের ঊর্ধ্ব-শ্বাসনালীর ভাইরাসজনিত এক ধরনের সংক্রমণ। ইনফ্লুয়েনজা-এ, ইনফ্লুয়েনজা, এডেনােভাইরাস প্রভৃতি এ রােগের জন্য দায়ী। অনেক ক্ষেত্রে এর সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটতে পারে। ঋতু পরিবর্তনের সময় এ রােগ বেশি মাত্রায় দেখা যায়। একটানা বৃষ্টি, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা এবং এক ঘরে অনেক লােক গাদাগাদি করে বসবাস করলে এ রােগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কম রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতাসম্পন্ন লােকদেরও এ রােগের ঝুঁকি বেশি। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ রােগ একজনের শরীর থেকে অন্য জনের শরীরে ছড়ায়।

লক্ষণসমূহ

লক্ষণ দেখেই এ রােগ নির্ণয় করা যায়। সাধারণত কোনাে ল্যাবরেটরি পরীক্ষার দরকার হয় না। সর্দি-জ্বর হলে প্রথমে নাকে ও গলায় অস্বস্তি লাগে, হাঁচি হয়, নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরতে থাকে। নাক বন্ধও থাকতে পারে। মাথা ব্যথা, মাথা ভারি বােধ হওয়া, শরীরে ব্যথা, হালকা জ্বর (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি নয়), গলা ব্যথা প্রভৃতি উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়। কখনও কখনও চোখ লাল হতে পারে এবং চোখ দিয়ে পানি ঝরতে পারে।

চিকিৎসা ও প্রতিকার

সর্দি-জ্বরের সময় বিশ্রামে থাকতে পারলে ভালাে। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পানি, লেবুর রস, আনারস, পেয়ারা বা আমলকি জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার (আইসক্রিম, ফ্রিজের পানি, কোল্ড ড্রিঙ্কস) পরিহার । করতে হবে। গরম চা বা কফি খাওয়া যেতে পারে। এ রােগের চিকিৎসায় সাধারণত এন্টিবায়ােটিকের প্রয়ােজন হয় না। জ্বর ও ব্যথানাশক প্যারাসিটামল এবং এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ কয়েকদিন খেলেই এ রােগ সেরে যায়। তবে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত এন্টিবায়ােটিক সঠিক মাত্রায় পাঁচ থেকে সাত দিন খেতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে টনিসলের বা ফুসফুসের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে বিধায় রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শমত ওষুধ খাওয়ানাে উচিত।

প্রতিরােধ ও জনসচেতনতা

  • আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকুন।
  • বারবার আপনার হাত দু’টি ধুয়ে নিন।
  • বদ্ধ জায়গায় সতর্ক থাকুন
  • বেশি করে তরল পান করুন।
  • নাক ও চোখ বেশি বেশি ঘষবেন না।
  • বিছানা ছেড়ে ব্যায়াম করুন।
  • আপনার রান্না ঘরের সামগ্রী জীবাণুমুক্ত রাখুন।
  • ভিটামিন ই ও সি খান
  • অ্যালকোহল পরিহার করুন
  • প্রতি রাতে ভাল ঘুম দিন
  • স্বল্প চর্বিযুক্ত মুরগির স্যুপ খান

Leave a Reply