৯ম-১০ম শ্রেণি

⌘K
  1. Home
  2. Docs
  3. ৯ম-১০ম শ্রেণি...
  4. ইসলাম শিক্ষা...
  5. আকাইদ ও নৈতিক জীবন...
  6. নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশে রিসালাত ও নবুয়ত

নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশে রিসালাত ও নবুয়ত

ইসলাম নীতি-নৈতিকতার ধর্ম। ইসলামের সমস্ত আকিদা-বিশ্বাস, বিধি-বিধান, শিক্ষা-আদর্শ নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ইসলামি জীবনদর্শনে রিসালাত ও নবুয়ত অপরিহার্য বিষয়। নবুয়ত ও রিসালাত হলো নবি-রাসুলগণের দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালার বাণী ও শিক্ষা মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়াকে নবুয়ত ও রিসালাত বলা হয়। মানবজীবনে নৈতিক মূল্যবোধের প্রচার ও প্রসারে নবুয়ত ও রিসালাত প্রধানত দুই ভাবে ভূমিকা রাখতে পারে ।

প্রথমত, নবুয়ত ও রিসালাতের উদ্দেশ্য হলো মানুষকে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব, পরিচয় ও গুণাবলি সম্পর্কে জ্ঞান দান করা। মানুষকে সত্য ও সুন্দরের দিকে পরিচালনা করা। সর্বোপরি ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ ও সফলতার দিকনির্দেশনা প্রদান করা। নবুয়ত ও রিসালাতের শিক্ষা মানুষকে শান্তি ও শৃঙ্খলার দিকে পরিচালনা করে । জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের সকল কাজকর্ম আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পথে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। এভাবে দেখা যায়, যে ব্যক্তি নবুয়ত ও রিসালাতের শিক্ষানুসারে জীবনযাপন করে সেই পরিপূর্ণ মানুষ। এরূপ ব্যক্তি সমস্ত মানবিক গুণের অধিকারী হয়। পশুত্বের অভ্যাস ত্যাগ করে মনুষ্যত্বের অভ্যাস অনুশীলন করে। নবুয়ত ও রিসালাতের চেতনা মানুষের মধ্যকার সমস্ত খারাপ অভ্যাস, অশ্লীলতা ও মন্দকর্মের চর্চা দূর করে দেয়। মানুষ সৎ ও সুন্দর জীবনযাপনে উৎসাহিত হয় । উত্তম চরিত্র ও নৈতিক আচার-আচরণে উদ্বুদ্ধ হয়। এভাবে নবুয়ত ও রিসালাতের শিক্ষায় মানুষ নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত হয় ।

দ্বিতীয়ত, নবুয়ত ও রিসালাত মানুষকে নবি-রাসুলগণের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। নবি-রাসুলগণ ছিলেন নিষ্পাপ। তাঁরা ছিলেন সকল সগুণের অধিকারী । উত্তম চরিত্রের নমুনা ছিল তাঁদের জীবনচরিত । কোনোরূপ অন্যায়, অনৈতিক ও অশ্লীল কাজকর্ম তাঁদের চরিত্রে কখনোই ছিল না। বরং সর্বাবস্থায় নীতি ও নৈতিকতার আদর্শ রক্ষা করাই ছিল তাঁদের অন্যতম দায়িত্ব । আল্লাহ তায়ালা বলেন-

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

অর্থ : “অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আল-আহযাব, আয়াত ২১)

বস্তুত নবি-রাসুলগণ ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী। তাঁদের জীবনী ও শিক্ষা আমাদের জন্য আদর্শ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমি শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি। (ইবনে মাজাহ)

রাসুলুল্লাহ (স.) ছিলেন মানবতার মহান শিক্ষক। তিনি মানুষকে মানবতা ও নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, সাহায্য-সহযোগিতা ইত্যাদির নির্দেশনা প্রদান করেছেন। অত্যাচার, অবিচার ও অনৈতিকতার বদলে সত্য, ন্যায় ও মানবিকতার কথা বলেছেন। মানুষকে উত্তম চরিত্রবান হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। নিজ জীবনে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ অনুশীলনের মাধ্যমে হাতে কলমে মানুষকে নৈতিকতা সমুন্নত রাখতে শিক্ষা দিয়েছেন । তিনি স্বয়ং বলেছেন-

إِثْمَا بُعِثْتُ لِأُتَيَّمَ مَكَارِمَ الْأَخْلَاقِ

অর্থ : “উত্তম গুণাবলির পরিপূর্ণতা দানের জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি।” (বায়হাকি)

বস্তুত নবি-রাসুলগণ সকলেই ছিলেন উত্তম আদর্শের নমুনা। আর আমাদের প্রিয়নবি (স.) ছিলেন তাঁদের মধ্যে সর্বোত্তম। তাঁর চরিত্রে মানবিক সবগুণ পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল ।

নবুয়ত ও রিসালাতে বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা ইসলামি জীবনদর্শনে প্রবেশ করি। অতঃপর নবি-রাসুলগণের জীবনী ও আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ কামনা করি। এভাবে আমাদের জীবন ও চরিত্র উত্তম হয় । নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়। মানবসমাজে পশুত্বের পরিবর্তে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে।