• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • ষষ্ঠ শ্রেণি
  • ভাষা ও বাংলা ভাষা
ভাষা ও বাংলা ভাষা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ভাষা ও বাংলা ভাষা

ভাষার রূপবৈচিত্র্য

ভাষার কোনো অখণ্ড বা একক রূপ নেই। একই ভাষা নানা রূপে ব্যবহৃত হয়। ভাষার এসব রূপবৈচিত্র্য নিচে আলোচনা করা হলো।

উপভাষা

একই ভাষা যারা ব্যবহার করে তাদেরকে বলে একই ভাষাভাষী বা ভাষিক সম্প্রদায়। আমরা যারা বাংলা ভাষায় কথা বলি তারা সকলে বাংলাভাষী সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। সকলের বাংলা আবার এক নয়। ভৌগোলিক ব্যবধান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সমাজগঠন, ধর্ম, পেশা ইত্যাদি কারণে এক এলাকার ভাষা থেকে অন্য এলাকার ভাষায় পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। ভৌগোলিক ব্যবধান বা অঞ্চল ভেদে ভাষার যে-বৈচিত্র্য তা-ই হলো উপভাষা। এ-ভাষাকে আঞ্চলিক ভাষা-ও বলা হ। আমাদের প্রতিটি জেলার ভাষাই বৈচিত্র্যপূর্ণ। আমাদের প্রত্যেক জেলার নিজস্ব উপভাষা রয়েছে। উপভাষায় কথা বলা মোটেও দোষের নয়। উপভাষা হলো মায়ের মতো। মাকে আমরা শ্রদ্ধা করি, নিজ-নিজ উপভাষাকে আমাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে হবে। নিচে বাংলাদেশের কয়েকটি উপভাষার পরিচয় দেওয়া হলো।

উপভাষিক এলাকা​
উপভাষার নমুনা
খুলনা-যশোর
অ্যাকজন মার্শির দুটো ছাওয়াল ছিল্।
বগুড়া
অ্যাকজনের দুই ব্যাটা ছৈল আছিল্।
রংপুর
অ্যাকজন ম্যানশের দুইকনা ব্যাটা আছিলো।
ঢাকা
অ্যাকজন মানশের দুইডা পোলা আছিলো।
ময়মনসিংহ
অ্যাকজনের দুই পুৎ আছিল্।
সিলেট
অ্যাক মানুশর দুই পোয়া আছিল্।
চট্টগ্রাম
এগুয়া মানশের দুয়া পোয়া আছিল্।
নোয়াখালী
অ্যাকজনের দুই হুত আছিল্।

প্রমিত ভাষা

একই ভাষার উপভাষাগুলো অনেক সময় বোধগম্য হয় না। এজন্য একটি উপভাষাকে আদর্শ ধরে সবার বোধগম্য ভাষা হিসেবে তৈরি ভাষারূপই হলো প্রমিত ভাষা। এ-ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা, প্রশাসনিক কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পাদিত হয়। দেশের সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এ-ভাষারূপ ব্যবহার করা হয়। উপভাষা ও প্রমিত ভাষার পার্থক্য সুস্পষ্ট:
প্রমিত ভাষার লিখিত ব্যাকরণ থাকে; উপভাষার থাকে না।

  • উপভাষা শিশুকাল থেকে প্রাকৃতিক নিয়মে অর্জন করতে হয়; প্রমিত ভাষা চর্চা করে শিখতে হয়।
  • প্রমিত ভাষা শেখার বিষয়; উপভাষা অর্জনের বিষয়।

কথ্যভাষা

শিক্ষক যখন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেন, কিংবা কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে আমরা বক্তব্য উপস্থাপন করি তখন ভাষা ব্যবহারে সচেতনতা দেখা যায়। তাই বিশেষ পরিবেশ ও প্রয়োজনের বাইরে যখন ভাষা ব্যবহার করা হয় তাকে কথ্যভাষা বলে। অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে বন্ধু কিংবা সহকর্মী বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ-ভাষারূপ ব্যবহার করা হয়।

সাধু ও চলিতভাষা

মানুষ যে ভাষায় কথা বলে সেই ভাষারূপ লিখিত ভাষায় গ্রহণ করা হয় না। মুখের ভাষা স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত হলেও লিখিত ভাষা সে-তুলনায় আড়ষ্ট ও কৃত্রিম। বাংলা লিখিত ভাষা যখন উদ্ভাবিত হয়, তখন উদ্ভাবকরা সেভাবেই বাংলা গদ্যের ভাষাকে তৈরি করেছিলেন। এ-ভাষাই সাধুভাষা বা সাধুরীতি হিসেবে পরিচিত। উল্লেখ করা যায় যে, সাধুভাষার সৃষ্টিতে যাঁরা নিয়োজিত ছিলেন, তাঁরা বাংলা ভাষী হলেও লোকজ মানুষের ভাষারীতিতে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না। তাঁরা সংস্কৃত ভাষার পণ্ডিত ছিলেন। ফলে সেই ভাষার আদলে তাঁরা ভাষার এই রীতি তৈরি করেন। সব পণ্ডিতই যে এ-আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন তা নয়। কিন্তু তাঁদের সে-প্রচেষ্টা পরবর্তীকালে গ্রহণীয় হয় নি। সাধুভাষার পরিচয় গ্রহণ করলে দেখা যায় যে, এ-ভাষায় বেশি পরিমাণে সংস্কৃত শব্দই শুধু নেই, সংস্কৃত ব্যাকরণের বিভিন্ন বিষয় গৃহীত হয়েছে। প্রথম দিকের সাধুভাষা ছিল আড়ষ্ট। এ-ভাষা প্রাঞ্জল হয়ে উঠতে অনেক দিন লেগেছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরই প্রথম এ কাজ করেন। এজন্য তাঁকে বাংলা সাধুভাষার জনক বলা হয়। নিচে সাধুভাষার উদাহরণ দেওয়া হলো:

নদীতে স্নান করিবার সময় রাজদত্ত অঙ্গুরীয় শকুন্তলার অঞ্চলকোণ হইতে সলিলে পতিত হইয়াছিল। পতিত হইবামাত্র এক অতিবৃহৎ রোহিত মৎস্যে গ্রাস করে। সেই মৎস্য, কতিপয় দিবস পর, এক ধীবরের জালে পতিত হইল। ধীবর, খণ্ড খণ্ড বিক্রয় করিবার মানসে, ঐ মৎস্যকে বহু অংশে বিভক্ত করিতে করিতে তদীয় উদরমধ্যে অঙ্গুরীয় দেখিতে পাইল। ঐ অঙ্গুরীয় লইয়া, পরম উল্লসিত মনে, সে এক মণিকারের আপণে বিক্রয় করিতে গেল। [ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: শকুন্তলা]

সাধুভাষার তুলনায় চলিতভাষা বা চলিতরীতি নবীন। সব ধরনের কৃত্রিমতা থেকে লিখিত বাংলা ভাষাকে মুক্ত করাই চলিতভাষা সৃষ্টির প্রেরণা। এ-ভাষা জীবনঘনিষ্ঠ, আমাদের প্রতিদিনের মুখের ভাষার কাছাকাছি। কোনো কষ্টকল্পনা এতে স্থান পায় না। এ-ভাষারীতির শব্দসমূহ স্বভাবতই আমাদের পরিচিত। বাংলা প্রবাদ-প্রবচন খুব সহজে এ-ভাষায় ব্যবহার করা যায়। নিচে বাংলা চলিতরীতির উদাহরণ তুলে ধরা হলো:

সাহিত্যের সহজ অর্থ যা বুঝি সে হচ্ছে নৈকট্য, অর্থাৎ সম্মিলন। মানুষ মিলিত হয় নানা প্রয়োজনে, আবার মানুষ মিলিত হয় কেবল মেলারই জন্যে, অর্থাৎ সাহিত্যেরই উদ্দেশে। শাকসবজির খেতের সঙ্গে মানুষের যোগ ফসল-ফলানোর যোগ। ফুলের বাগানের সঙ্গে যোগ সম্পূর্ণ পৃথক জাতের। সবজি খেতের শেষ উদ্দেশ্য খেতের বাইরে, সে হচ্ছে ভোজ্যসংগ্রহ। ফুলের বাগানের যে-উদ্দেশ্য তাকে এক হিসাবে সাহিত্য বলা যেতে পারে। অর্থাৎ, মন তার সঙ্গে মিলতে চায়- সেখানে গিয়ে বসি, সেখানে বেড়াই, সেখানকার সঙ্গে যোগে মন খুশি হয়। [রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যের তাৎপর্য]

পরবর্তী

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ