• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

আল-কুরআন- Al-Quran

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

আল-কুরআন- Al-Quran

আল-কুরআনের পরিচয়- Introduction to Al-Quran

পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহ তায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মানুষের ভোগ, ব্যবহার, সুখ-শান্তি, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য তিনি পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে:

هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا.

অর্থ: তিনিই আল্লাহ, যিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন (সুরা আল-বাকারা: ২৯)।

মানুষকে আল্লাহ অসীম নিয়ামত দান করেছেন। পৃথিবীতে তাকে নিজের খলিফা মনোনীত করে সম্মানিত করেছেন। তাই এখানে তাদের দায়িত্ব হলো মহান আল্লাহর দেওয়া বিধান মেনে চলা ও সে বিধান বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ তাঁর নবি-রাসুলদের কাছে নাজিল করেন বিধি-বিধান সম্বলিত আসমানি কিতাব। হযরত আদম (আ)-এর মাধ্যমে এ ধারা সূচিত হয়ে মুহাম্মদ (স) এর মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে। মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন যুগে নবি-রাসুলদের কাছে যেসব আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন তার মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব হলো আল-কুরআন।

আভিধানিক পরিচয়

'আল-কুরআন' এর বিষয়গত তাৎপর্য ও অন্তহীন গুরুত্বের জন্য আরবি ভাষাবিজ্ঞানীগণ এর নামটিকেও বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিশ্লেষণ করেছেন। কেননা, সর্বশেষ আসমানি কিতাবের এ নাম স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত। তাঁরা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে আল-কুরআনের নামকরণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপস্থাপন করেছেন।

الْقُرْآنُ )কুরআন) শব্দটি দুটি শব্দমূল থেকে গঠিত হয়েছে:

১. الْقُرْآنُ শব্দটি قَرْءٌ শব্দমূল থেকে গঠিত। পূর্ত শব্দের অর্থ: পাঠ করা, আবৃত্তি করা ইত্যাদি। আসমানি কিতাবগুলোর মধ্যে কুরআন সর্বাধিক পঠিত, বিধায় একে কুরআন বলে নামকরণ করা হয়েছে।

২. আবার الْقُرْآن শব্দটি ভর্ত শব্দমূল থেকে গঠিত। ভর্ত শব্দের অর্থ: মিল, সামঞ্জস্য, একত্র করা ইত্যাদি। কুরআনের একটি আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের মিল বা সম্পর্ক আছে বিধায় একে কুরআন বলা হয়।

আশআরীয় ধর্মতত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা আবুল হাসান আল আশআরী (র)-এর মতে, আরবদের উত্তি قَرَأْتُ

(কারাতুশ শাইআ বিশ শাই-ই) বা 'আমি একটি বস্তুকে অপরটির সাথে মিলিয়ে দিয়েছি' অংশের পূর্ত (কারাতু) থেকে الْقُرْآنُ রূপান্তরিত হয়েছে। এ মহাগ্রন্থে পার্থিব ও পরকালীন জীবনাচারের সমন্বয় এবং সুরা, আয়াত, শব্দ ও বর্ণের মিলন লক্ষ করা যায়।

বেশিরভাগ ভাষাতত্ত্ববিদ ও মুফাস্স্সিসরের মতে, اَلْقُرْان শব্দটি নিজেই বাবে فَتَحَ - يَفْتَحُ থেকে قَرْءَ )কারা আ

ক্রিয়ার মাসদার বা ক্রিয়ামূল। কাজেই আল-কুরআন অর্থ: পাঠ করা। কিন্তু এখানে শব্দটি مَقْرُومٌ বা পঠিত অর্থে ব্যবহৃত হয়। জিবরাইল (আ) মহানবি (স)কে এ মহাগ্রন্থটি পাঠ করে শোনাতেন। তাছাড়া এটি বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ। সুতরাং সাধারণ বিবেচনায় اَلْقُرْآن )আল-কুরআন) শব্দটির মধ্যে আভিধানিকভাবে একত্র করা, সংগ্রহ করা, পাঠ বা আবৃত্তি করা প্রভৃতি অর্থের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

পারিভাষিক পরিচয়

মুফাস্সিরগণ বিভিন্নভাবে আল-কুরআনকে সংজ্ঞায়িত করেছেন।

মিশরের ইসলামি গবেষক আল্লামা যারকানী (র) বলেন, 'কুরআন মাজিদ হলো সে কালামসমষ্টি যা মুতাওয়াতির বা অবিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণিত, যা তিলাওয়াত করা হয় এবং যার তিলাওয়াত আল্লাহর ইবাদত হিসেবে গণ্য।'

ভারতীয় মুসলিম পণ্ডিত আশরাফ আলী থানবী (র) বলেন, 'আল-কুরআন হলো শব্দ ও অর্থ উভয়ের সমষ্টি, এটি মহান আল্লাহর সে কালাম যা তাঁর থেকে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর ওপর নাজিল হয়েছে এবং হযরত মুহাম্মদ (স)-এর কাছ থেকে সংশয়হীন পদ্ধতিতে মাসহাফে লিখিত হয়ে আমাদের কাছে পৌঁছেছে।'

আল্লামা আবুল বারাকাত আন-নাসাফী বলেন-

هُوَ الْكِتَبُ الْمُنَزَّلُ عَلَى الرَّسُولِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَكْتُوبُ فِي الْمَصَاحِفِ الْمَنْقُولُ عَنْهُ نَقْلًا مُتَوَاتِرًا بِلَا شُبْهَةٍ.

অর্থ: আল-কুরআন হলো আসমানি কিতাব যা হযরত মুহাম্মদ (স)-এর ওপর নাজিল করা হয়েছে। এটি মাসহাফে লিখিত এবং সন্দেহাতীত পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে সংকলিত হয়েছে। আর এটি শব্দ ও অর্থের সমন্বিত নাম।

মীযানুল আখবারের রচয়িতা, বায়তুল মুকাররমের তৃতীয় খতিব মুফতি আমীমুল ইহসান বলেন, 'কুরআন মাজিদ এমন এক আসমানি কিতাব যা আমাদের বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (স)-এর ওপর নাজিল হয়েছে। এ গ্রন্থের ছোট্ট একটি সুরার মুকাবিলা করতে সারা দুনিয়ার মানুষ অক্ষমতা প্রকাশ করেছে।'

বস্তুত কুরআন মাজিদ আল্লাহর বাণী। এটি লাওহে মাহফুজ থেকে জিবরাইল (আ)-এর মাধ্যমে নবুয়তের দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে মহানবি (স)-এর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে; যা সন্দেহাতীত প্রক্রিয়ায় অদ্যাবধি অবিকল ও অবিকৃত অবস্থায় সুরক্ষিত হয়ে আসছে এবং যার শব্দ, অর্থ, মর্ম, উপস্থাপনা, বিন্যাস সবই আল্লাহ তায়ালার নিজস্ব।

সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিচয়

আল-কুরআনে ১১৪টি সূরা, ৫৫৪টি রুকু ও ৬২৩৬টি মতান্তরে ৬৬৬৬টি আয়াত আছে। নাজিলের সময় বিবেচনায় কুরআনের সুরাসমূহকে মক্কি ও মাদানি নামে বিন্যস্ত করা হয়েছে। ৮৬টি সুরা মন্ধি আর অবশিষ্ট ২৮টি সুরা মাদানি।

অন্য একটি মতে, মক্কি সুরা ৯২টি এবং মাদানি সুরা ২২টি।

জুয: জুষ (১) অর্থ অংশ। পবিত্র কুরআন ৩০টি সমান অংশে বিভক্ত। এর প্রতিটি অংশকে একেকটি জুয বলা হয়।

জুষকে পারাও বলা হয়।

মানজিল: মানজিল (খ) অর্থ- অবতরণস্থল। কুরআন মাজিদকে সাত দিনে খতম (একবার পড়ে শেষ করা) করার

সুবিধার্থে সাতটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। এর প্রতিটি ভাগকে একেকটি মানজিল বলা হয়।

কুরআনের সাতটি মানযিল নিম্নরূপ:

  • মানজিল-১: সুরা ফাতিহা থেকে সুরা নিসার শেষ পর্যন্ত।
  • মানজিল-২: সুরা মায়িদার শুরু থেকে সুরা তওবার শেষ পর্যন্ত।
  • মানজিল-৩: সুরা ইউনুসের শুরু থেকে সুরা নাহলের শেষ পর্যন্ত।
  • মানজিল-৪: সুরা বনি ইসরাইলের শুরু থেকে সুরা ফুরকানের শেষ পর্যন্ত।
  • মানজিল-৫: সুরা শুআরার শুরু থেকে সুরা ইয়াসীনের শেষ পর্যন্ত।
  • মানজিল-৬: সুরা সফফাতের শুরু থেকে সুরা হুজুরাতের শেষ পর্যন্ত।
  • মানজিল-৭: সুরা কাফ এর শুরু থেকে সুরা নাসের শেষ পর্যন্ত।

শব্দ সংখ্যা: কুরআন মাজিদের শব্দ সংখ্যার ব্যাপারে তিনটি মত পাওয়া যায়। কতিপয় মনীষীর গণনা মতে, কুরআনের শব্দ সংখ্যা ৭৭৪৩৪টি। অন্যদের গণনা মতে, কুরআনের শব্দ সংখ্যা ৭৭২৭৭টি। আবার কেউ কেউ গণনা করে বলেছেন, এর শব্দ সংখ্যা ৭৭৪৩৭টি।

সুরা ফাতিহা আল-কুরআনের প্রথম সুরা। আর শেষ সুরা আন-নাস। কুরআনের সর্ববৃহৎ সুরা আল-বাকারা। এটি আল-কুরআনের দ্বিতীয় সুরা। এতে ৪০টি রুকু ও ২৮৬টি আয়াত আছে। এ সুরার ২৮২ নম্বর আয়াত কুরআনের সর্ববৃহৎ আয়াত। কুরআনের ১০৮তম সুরা আল-কাওসার হলো ক্ষুদ্রতম সুরা। এর ৭৩তম সুরা মুয্যাম্মিলের ২০ নম্বর আয়াত হলো একমাত্র রুকু যা এক আয়াতসম্বলিত।

আল-কুরআনের ৯ম সুরা আত-তাওবা হলো এমন সুরা যার শুরুতে তাসমিয়াহ (বিসমিল্লাহ) লিখিত হয়নি। আর ২৭তম সুরা আন-নামল হলো একমাত্র সুরা যাতে দুবার তাসমিয়ার উল্লেখ রয়েছে।

কুরআন মাজিদে সুরাসমূহের ক্রমধারা ও বিন্যাস ওহি (৫১) দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে। আর একে মানজিল ও জুযে বিন্যস্ত করা হয়েছে হাদিসের আলোকে। পরবর্তীতে প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে কুরআনে ই'রাব ও উচিহ্ন সংযো হয়েছে।

অধীত বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ

পবিত্র কুরআনের-

  • মোট সুরা-১১৪টি, মক্কি সুরা ৮৬টি, মাদানি সুরা-২৮টি।
  • মোট মানজিন ৭টি, পারা বা অংশ ৩০টি।
  • সিজদার আয়াত- ১৪টি।
  • প্রথম হাফিজ- হযরত মুহাম্মদ (স)
  • আল-কুরআনে মুহাম্মদ (স) এর নাম আছে ৪ বার। যথা- ১. আলে ইমরান: ১৪৪; ২, আহযাব: ৪০; ৩. মুহাম্মদ: ২; ৪. ফাতহ: ২৯।

জেনে রাখো:

আল-কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত সংখ্যা:

  • জান্নাতের ওয়াদা-১০০০,
  • জাহান্নামের ভয়-১০০০
  • আদেশ-১০০০,
  • নিষেধ-১০০০
  • উদাহরণ-১০০০,
  • কাহিনি-১০০০
  • হালাল-২৫০,
  • হারাম-২৫০
  • আল্লাহর পবিত্রতা-১০০,
  • বিবিধ-৬৬

আল-কুরআনে উনিশ সংখ্যাটির মুজিযা: কুরআন শরিফের প্রত্যেক সুরার শুরুতে 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' আয়াতটি আছে (সুরা আত তাওবা ছাড়া)। সুরা 'আত-তাওবার শুরুতে বিসমিল্লাহ না থাকলেও সুরা নামলে যেহেতু এই বাক্য দু'বার আছে তাই এর সংখ্যা সুরার সংখ্যার মতো সর্বমোট ১১৪ই থেকে গেলো।

এই আয়াতটি ৪টি শব্দ এবং ১৯ অক্ষর দিয়ে গঠিত। শব্দ ৪টি হচ্ছে- 'ইসম', 'আল্লাহ', 'রহমান,' এবং 'রহিম'। সমগ্র কুরআনে 'ইসম' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১৯ বার, যা ১৯ দিয়ে ভাগ করা যায়। 'আল্লাহ' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২৬৯৮ বার, তাও ১৯ দিয়ে ভাগ করা যায়। 'রহমান' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৫৭ বার, একেও ১৯ দিয়ে ভাগ করা যায় এবং 'রহিম' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১১৪ বার, তাকেও ১৯ দিয়ে ভাগ করা যায়। 'বিসমিল্লাহ'-এর আয়াতটিতে একই অক্ষরের পুনরাবৃত্তি বাদ দিলে মোট বর্ণ থাকে ১০টি। ১৯ সংখ্যায় ব্যবহৃত অংক দু'টির যোগফল ১+৯=১০।

একক কাজ: শিক্ষার্থীরা আল-কুরআনের পরিচয় সম্পর্কে ৫টি বাক্য লিখবে এবং তা শ্রেণিশিক্ষককে দেখাবে।

পূর্ববর্তীপরবর্তী