• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

বাংলাদেশের স্বাধীনতা

মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বজনমত ও বিভিন্ন দেশের ভূমিকা

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় তাণ্ডব বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেয়। পাকিস্তানি বাহিনী ও স্বাধীনতাবিরোধী তাদের এদেশীয় দোসরদের দ্বারা সংঘটিত লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হয়। বিভিন্ন দেশ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। ২৫শে মার্চের কালরাত্রি তথা জাতীয় গণহত্যা দিবস এবং পরবর্তী সময়ের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত সোচ্চার হয়ে ওঠে। গোটা বিশ্বের জনগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে সমর্থন জানায়।

ভারতের ভূমিকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি সমর্থন জানায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের কালরাত্রির বীভৎস হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী নয় মাস ধরে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী যে নারকীয় গণহত্যা, সুণ্ঠন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, ভারত তা বিশ্ববাসীর নিকট সার্থকভাবে তুলে ধরে। এর ফলে বিশ্ববিবেক জাগ্রত হয়। লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, অস্ত্র সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকিস্তান ভারতে বিমান হামলা চালায়। ভারত ৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী 'যৌথ কমান্ড' গড়ে তোলে। যৌথ বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের ফলে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনাসহ জেনারেল এ কে নিয়াজী নিঃশর্তে যৌথ কমান্ডের নিকট আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার উপস্থিত ছিলেন না।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভূমিকা : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের পর সর্বাধিক অবদান রাখে অধুনা বিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন, বর্তমান রাশিয়া। পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, নারী-ধর্ষণসহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধ করার জন্য সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে আহ্বান জানান। তিনি ইয়াহিয়াকে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্যও বলেন।

সোভিয়েত পত্র-পত্রিকা, প্রচার মাধ্যমগুলো বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কাহিনি ও মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি প্রচার করে বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে সহায়তা করে। জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধবন্ধের প্রস্তাব দিয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন 'ভেটো' (বিরোধিতা করা) প্রদান করে তা বাতিল করে দেয়। কিউবা, যুগোশ্লাভিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি প্রভৃতি তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে সমর্থন জানায়।

গ্রেট ব্রিটেনের ভূমিকা: ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে ব্রিটেনের প্রচার মাধ্যম বিশেষ করে বিবিসি এবং লন্ডন থেকে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকা বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম নির্যাতন এবং বাঙালিদের সংগ্রাম ও প্রতিরোধ, ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের করুণ অবস্থা, পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা এবং মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি সম্পর্কে বিশ্ব জনমতকে জাগ্রত করে তোলে। ব্রিটিশ সরকারও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে খুবই সহানুভূতিশীল ছিল। উল্লেখ্য, লন্ডন ছিল বহির্বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারের প্রধান কেন্দ্র।

তাছাড়া ব্রিটিশ নাগরিক বিখ্যাত সংগীত শিল্পী জর্জ হ্যারিসন পণ্ডিত রবি শংকর ও আলী আকবর খান মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি ও দানসহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' আয়োজন করেন। ব্রিটেন ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান ও কানাডার প্রচারমাধ্যমগুলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত সৃষ্টিতে সাহায্য করে। ইরাক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন জানায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ, প্রচার মাধ্যম, কংগ্রেসের অনেক সদস্য এদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সোচ্চার ছিল। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্বের কোনো কোনো দেশ এদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।

জাতিসংঘের ভূমিকা: বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা জাতিসংঘের মূল সক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা না দিয়ে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান যখন বাঙালি নিধনে তৎপর, তখন জাতিসংঘ বলতে গেলে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে 'ভেটো' ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রের বাইরে জাতিসংঘের নিজস্ব উদ্যোগের পরিসরও খুব সীমিত।