COP27 বা জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন

COP27 বা জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন

আজ ১৮ নভেম্বর শেষ হচ্ছে COP27 সম্মেলন। ৬-১৮ নভেম্বর ২০২২ মিসরের শার্ম আল শেখে COP27 অনুষ্ঠিত হল। সম্মেলনগুলো প্রতিবারই জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে নানা বিতর্ক, বড় বড় প্রতিশ্রুতি আর চুক্তির মধ্য দিয়ে শেষ হয়। কিন্তু পরিবেশ ও প্রকৃতির তেমন কোনো উন্নতিই হয়নি ।

জলবায়ু সম্মেলনের উৎপত্তি

বিশ্ব পরিবেশ ও জলবায়ু ইস্যুতে প্রথমবারের মতাে ৫-১৬ জুন ১৯৭২ সুইডেনের স্টকহােমে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থা জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP) গঠিত হয়। স্টকহােম সম্মেলনের ২০তম বার্ষিকীতে ৩-১৪ জুলাই ১৯৯২ ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে প্রথম ধরিত্রী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর একে একে অনুষ্ঠিত হয় আরও তিনটি ধরিত্রী সম্মেলন। ১৯৯২ সালের সম্মেলনে আলােচনা আর বিতর্কে মধ্য দিয়ে গৃহীত হয় ৮০০ পৃষ্ঠার এজেন্ডা-২১।

২৭টি নীতিমালা নিয়ে ঘােষণা করা হয় Rio Declaration। এ সম্মেলনে স্বাক্ষরিত United Nations Framework Convention on Climate Change (UNFCCC)। একই সাথে সিদ্ধান্ত হয় জলবায়ু সংক্রান্ত কাজের অগ্রগতি মূল্যায়নে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হবে UNFCCC’র বৈঠক।

আলােচ্য বিষয়

UNFCCC’র বার্ষিক সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের যে বিষয় নিয়ে সাধারণত আলােচনা হয় তা হচ্ছে- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মােকাবিলায় সম্ভাব্য প্রশমন বা নিরসনের পন্থা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের ওপর যেসব অপরিবর্তনীয় প্রভাব সৃষ্টি হয়, তা কাটিয়ে উঠতে অভিযােজন নীতি ও পদ্ধতি গ্রহণ ও উন্নয়নশীল দেশগুলাে যাতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে পারে ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মােকাবিলায় আরও সহনশীল ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে সে লক্ষ্যে ধনী দেশগুলাের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য আর্থিক সহায়তার বিষয় আলােচনা হয়।

আরও পড়ুন :  নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ভর্তি প্রস্তুতি ২০২৪

COP কী?

COP’র পূর্ণরূপ Conference of the Parties। অর্থাৎ কোনাে কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশসমূহের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক। UNFCCC স্বাক্ষরকারী দেশগুলাের বার্ষিক বৈঠকের নামই COP বা জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন। ২৮ মার্চ-৭ এপ্রিল ১৯৯৫ জার্মানির বার্লিনে প্রথম COP অনুষ্ঠিত হয়। এখন পর্যন্ত ২৬টি COP অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (GCF)

৭ ডিসেম্বর ২০০৯-১৮ ডিসেম্বর ২০০৯ ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত COP15 সম্মেলনে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (GCF) গঠনের অঙ্গীকার করা হয়। ২০১০ সালে UNFCCC’র আওতায় GCF গঠিত হয়। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মােকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলাের উদ্যোগে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন :  দেশের প্রথম শুষ্ক নীতি প্রণয়ন

COP এ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি চুক্তি বা প্রটোকল স্বাক্ষর করা হয়। যথা- কিয়োটো প্রটোকল এবং প্যারিস চুক্তি

কিয়োটো প্রটোকল

১-১১ ডিসেম্বর ১৯৯৭ জাপানের কিয়োটো নগরীতে অনুষ্ঠিত হয় COP3। সম্মেলনে গৃহীত প্রটোকলে ১৯৯০ সালের ভূমণ্ডলের স্তরকে ভিত্তিরূপে ধরে উন্নত দেশগুলোর যৌথ নিঃসরণ ৬টি গ্রিনহাউস গ্যাস ২০০৮-২০১২ সালের মধ্যে ৫.২% কমানোর বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

চুক্তি কার্যকরের শর্ত ছিল কমপক্ষে ৫৫টি দেশের অনুসমর্থন, যারা বিশ্বের মোট ৫৫% CO2 নির্গমনকারী। প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের তিন মাস পর কিয়োটো প্রটোকল কার্যকর হবে। ২৩ মে ২০০২ আইসল্যান্ড ৫৫তম দেশ হিসেবে কিয়োটো প্রটোকল অনুমোদন করে এরপর ১৮ নভেম্বর ২০০৪ রাশিয়া কিয়োটো প্রটোকল অনুমোদন করলে শর্তটি পূরণ হয়।

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ কিয়োটো প্রটোকল কার্যকর হয়। ১৭ নভেম্বর ২০০৬ কেনিয়ার নাইরোবিতে প্রথম কিয়োটো প্রটোকল সংশোধিত হয়। ৮ ডিসেম্বর ২০১২ কাতারের দোহায় দ্বিতীয় দফায় সংশোধন করে ২০২০ সাল নাগাদ বর্ধিত করা হয়, যা দোহা সংশোধনী নামে পরিচিত। কনভেনশনের শর্ত অনুযায়ী, ১৪৪টি দেশ কিয়োটো প্রটোকলের সংশোধন অনুসমর্থন না করায় অদ্যাবধি প্রটোকলের দ্বিতীয় পর্যায় কার্যকর হতে পারেনি।

আরও পড়ুন :  ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান

প্যারিস চুক্তি

৩১ ডিসেম্বর ২০১২ কিয়োটো প্রটোকলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোনো রকম আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন যথেচ্ছাচারভাবে বাড়তে থাকে। এরপর দীর্ঘ তিন বছর ধরে আলাপ-আলোচনার পর ৩০ নভেম্বর-১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত COP21 সম্মেলনে গৃহীত হয় প্যারিস চুক্তি।

২২ এপ্রিল ২০১৬ প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। চুক্তির আওতায় পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২° সেলসিয়াসের নিচে রাখতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে ১.৫° সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার জন্য প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়।

চুক্তিটি কার্যকরের জন্য শর্ত ছিল গ্রিনহাউজ গ্যাসের অন্তত ৫৫% নির্গমন করে এমন অন্তত ৫৫টি দেশকে অনুসমর্থন ও ঐসব দেশের পার্লামেন্টে অনুমোদন করতে হবে। প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের ৩০ দিন পর প্যারিস চুক্তিটি কার্যকর হবে। ৫ অক্টোবর ২০১৬ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) চুক্তিটি অনুমোদন করলে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ২০১৬ চুক্তিটি কার্যকর হয়।

Leave a Reply