৯ম-১০ম শ্রেণি

⌘K
  1. Home
  2. Docs
  3. ৯ম-১০ম শ্রেণি...
  4. বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব...
  5. বিশ্বসভ্যতা...
  6. চৈনিক সভ্যতা

চৈনিক সভ্যতা

ভৌগোলিক দিক থেকে দেখলে চীন দেশটির পাঁচ ভাগের প্রায় চার ভাগই জুড়ে আছে বিস্তৃত পাহাড়, পর্বত এবং মালভূমিতে। প্রাচীন চীন সভ্যতা মূলত দুটি বিশেষ রাজবংশীয় শাসনামলের অর্জন। ‘শাং’ এবং ‘চৌ’ যুগের কিছু অর্জনকে আলাদাভাবে তুলে ধরতে পারলেই একঅর্থে প্রাচীন সম্পর্কে আপাত কিছু ধারণা অর্জন করা যেতে পারে। তবে প্রাচীন চৈনিক সভ্যতা দীর্ঘকাল কৃতিত্বের সঙ্গে টিকে থাকার মূল কারণ একাধারে ভৌগোলিক এবং ঐতিহাসিক।

বস্তুত চীন ভৌগোলিকভাবে অন্য যেকোনো দেশের থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এলাকা হলেও নানা দিক থেকে তারা ছিল বেশ সমৃদ্ধ। ফলে খাবার ও বাসস্থান সংকটে চীনাদের সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোযোগ দিতে হয়নি। ভৌগোলিক অবস্থানগতভাবে চীনের সঙ্গে যুক্ত ছিল পার্শ্ববর্তী তিব্বত, সিংকিয়াং, মঙ্গোলিয়া এবং মাঞ্চুরিয়া। বিবর্তনবাদী ইতিহাস গবেষকরা পিকিংম্যান (Sinanthropus Pekinesis) দের দেহাবশেষ প্রাপ্তিকাল থেকে চৈনিক ইতিহাস ও সভ্যতার আলোচনা শুরু করেন।

প্রাচীন চীনে তিনটি অঞ্চল ঘিরে সভ্যতাটি গড়ে উঠেছিল যার কেন্দ্র ছিল পশ্চিমের উচ্চভূমি হতে উৎপন্ন নদীসমূহ। প্রথম সভ্যতা গড়ে ওঠে হোয়াং হো তীরবর্তী অঞ্চলে, দ্বিতীয়টি ইয়াংজেকিয়াং তীরবর্তী অঞ্চলে এবং তৃতীয়টি দক্ষিণ চীনের সুবিস্তৃত ভূখণ্ডে।

হোয়াংহো নদীর ধীর প্রবাহ এর দুতীরে বিস্তীর্ণ পলল ভূমির সৃষ্টি করেছে। তবে বর্ষায় দু-কূল ছাপিয়ে আসা বন্যায় জীবন ও ফসল অনেক সময় ধ্বংস হতো। আর এজন্যই ইতিহাসে হোয়াংহো পরিচয় তৈরি করেছে ‘চীনের দুঃখ”। চীনের দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত ইয়াংজেকিয়াং বিশ্বের অন্যতম বড় নদী। দক্ষিণ চীনের পাহাড়ি অঞ্চল ছিল খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর গড়ে ওঠায় তা বৈদেশিক বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়।

অন্য সব সভ্যতা থেকে আপাত বিচ্ছিন্ন বলে চীনের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকেও সহজে অন্যদের থেকে আলাদা করা যায়।

সভ্যতার অর্জন ও অবদান

‘ইয়াং’ এবং ‘ইন’ নামের দুটো শক্তিকে বৃত্তাকারে ঘিরে থাকা এক বৃত্তের মাধ্যমে সৃষ্টিকুলের পরিচয় হিসেবে দেখে চীনা দর্শন। বৃত্তের এক অংশ ছিল সাদা আর অন্যটি কালো। ঔজ্জ্বল্য, উষ্ণতা, কর্মক্ষমতাকে চীনারা ইয়াং শীর্ষক পুরুষসত্তা আর ঠিক তার বিপরীতে অন্ধকার, নীরবতা, শীতলতা ও কোমলতার প্রতীক হিসেবে ‘ইন’ নামের নারীসত্তাকে কল্পনায় ঠাঁই দিয়েছিল। ওদিকে তাদের হিসেবে এই ইয়াং’ এবং ‘ইন’ এর মিলনে জন্ম নিয়েছিল ‘পানকু’ নামের পৌরাণিক মানব।

তাদের হিসেবে এই পানকুই রূপ নিয়েছিল প্রাচীন পৃথিবীতে। চীনা বিশ্বাসে পানকুর তিনজন সহকারী ছিল টার্টল তথা কাছিম, কুইলিন, ‘ড্রাগন’ ও ‘ফিনিক্স’। পৌরাণিক যুগের শাসক হিসেবে চার হাজার বছর পূর্বে চীনের বিভিন্ন জাতি মিলে নির্বাচিত হুয়াংতি (Huang Ti / Huangdi) এর নাম বলা যায়। তিনি হোয়াংহো নদীর উপত্যকায় রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। ওদিকে হলদে সম্রাট (The Yellow Emperor / Yellow Thearch) নামে পরিচিত হুয়াং তির সময় চীনের লোকেরা গুটিপোকার চাষ, নৌকা ও মালটানা গাড়ি তৈরির পদ্ধতি আয়ত্ত করেছিল। তাদের লিখনপদ্ধতির সূচনাও হয়েছিল তখন। ‘ইয়াও’, ‘সুন’, এবং ‘উ’ এরপর তাদের রাজা হয়েছিলেন।

চীনের রাজারা হোয়াংহো নদীর ভয়াবহ প্লাবনের সময় বন্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় উদ্ভাবন করেছিলেন। এমনকি তারা, লিখনপদ্ধতি, মাছ ধরা, সংগীত, চিত্রকলা, পশুপালন এবং রেশম চাষ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন। ওদিকে কৃষি, বাণিজ্য ও চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কেও তাদের উপযুক্ত ধারণা ছিল দীর্ঘদিন। এছাড়া চৈনিক ইতিহাসের সূত্র হিসেবে হাড়ের উপর লিখিত লিপি পাওয়া যায়।

চীনের হোয়াংহো নদীতে প্রচুর বন্যা হতো। এই বন্যা চীনাদের পাঁচবার রাজধানী স্থানান্তরে বাধ্য করেছিল। অনেকটা আদিম ধরনের কৃষিপদ্ধতি ও উপকরণ ব্যবহার করলেও চৈনিক অর্থনীতির মূলভিত্তিই ছিল কৃষি। গম ও যব প্রধান উৎপাদিত শস্য হলেও কিছু পরিমাণ ধান তারা চাষ করতো। তারা শিকার ও পশুপালনের মাধ্যমে মাংস চাহিদা পূরণ করত। তখনকার সাধারণ মানুষ পশু হিসেবে কুকুর, শূকর, ছাগল, ভেড়া, ষাঁড়, ঘোড়া, হাঁস মুরগি, মহিষ, বানর এবং হাতিও পালন করত। শুকরের মাংসের মতো তাদের খাদ্য তালিকায় কুকুরের মাংসও বেশ জনপ্রিয় ছিল। কৃষি ও পপালনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় শাং জনগোষ্ঠী যাযাবর ছিল না। তারা মাটির ঘর কিংবা গর্তে বাস করত।

যতটুকু জানা গিয়েছে চৈনিক রাজা একাধারে সৈন্যবাহিনী নিয়ন্ত্রণ, বেসামরিক কার্যাবলির তত্ত্বাবধান এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিত। পুরোহিতরা তখন ধর্মীয় দায়িত্ব ছাড়াও জ্যোতিষ শাস্ত্রের চর্চা করত। তারা ক্যালেন্ডার তৈরিতেও ভূমিকা রাখত। পুরোহিতরা অঙ্ক ও গণিতশাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। চৌদ্দ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের শুরুতে চীনারা সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সময় নির্ধারণ করতে পেরেছিল যা ছিল যুগান্তকারী।