ভূমিকা
শ্রম—এটি কেবল একটি শব্দ নয়, বরং জীবনধারার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অলসতার ঘুমে চোখ ঢেকে না রেখে, সক্রিয়ভাবে কোনো কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখার নামই শ্রম। সকল জীবই নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে শ্রম করে, তবে মানুষ তার মেধা, মনন ও কর্ম দিয়ে সেই শ্রমকে মহিমান্বিত করেছে। ইতিহাসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে মানুষের কঠোর পরিশ্রমের কাহিনি। অণু থেকে অট্টালিকা, চাষের ক্ষেত থেকে মহাকাশযান—সবই শ্রমের ফল।
পবিত্র কুরআনেও বলা হয়েছে—
“মানুষের জন্যে শ্রম ব্যতীত কিছুই নেই।”
এই বাক্যই মানবজীবনের বাস্তবতায় প্রতিধ্বনিত হয়। জ্ঞানীর জ্ঞান, বিজ্ঞানীর আবিষ্কার, ধর্মপ্রাণ সাধকের আত্মানুসন্ধান, ধনীর ঐশ্বর্য কিংবা যোদ্ধার বিজয়—সবই এসেছে নিরলস পরিশ্রম থেকে। তাই পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। প্রকৃত পরিশ্রমী ব্যক্তি-ই নিজের ভাগ্য নিজ হাতে গড়তে পারে। কবির ভাষায়:
“কৃষকের পুত্র কিংবা রাজার কুমার
সবারই রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার।”
শ্রমের গুরুত্ব
মানুষ নিজেই তার ভাগ্য নির্মাতা, আর এই নির্মাণের প্রধান উপকরণই হলো পরিশ্রম। কর্মই সাফল্যের সোপান। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই সংগ্রামময়, আর সেই সংগ্রামে জয়ী হতে হলে চাই অবিচল শ্রম ও অধ্যবসায়। এ পৃথিবী এক বিশাল কর্মশালা, আর জীবনের প্রতিটি ধাপ একেকটি কর্মমঞ্চ।
পরিশ্রম ছাড়া উন্নতি যেমন অসম্ভব, তেমনি আত্মপ্রতিষ্ঠাও দুর্লভ। যে শ্রমকে শ্রদ্ধা করে, সেই-ই সুখ, সমৃদ্ধি ও সম্মানের অধিকারী হয়। এ কারণেই আইনস্টাইন বলেছেন—
“A hard-working street cleaner is a better man than a lazy scholar.”
কর্মের সুফল
জীবন মানেই কর্মক্ষেত্র—নানা পেশার মানুষ, নানা কাজে নিয়োজিত। কৃষক জমিতে লাঙ্গল চালায়, তাঁতি তাঁতের সুতোয় বোনে স্বপ্ন, জেলে ফেলে জাল নদীতে—এই দৃশ্য গৌরবের, লজ্জার নয়। শ্রম মানুষের চরিত্র গড়ে, কর্ম মানুষকে মহৎ করে তোলে। কবির ভাষায়:
“চাষি খেতে চালাইছে হাল,
তাঁতি বসে তাঁত বোনে, জেলে ফেলে জাল,
বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার।”
প্রত্যেক শ্রমজীবী মানুষের জীবন হলো সাধনার প্রতীক। কর্মের মাধ্যমেই তার ব্যক্তিত্ব প্রস্ফুটিত হয়। কর্মঠ মানুষই গড়ে তোলে সুখী সমাজ, উন্নত দেশ।
পরিশ্রমই খুলে দেয় জাতির অগ্রগতির সিংহদ্বার।
শ্রমের প্রকারভেদ
শ্রম মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত— কায়িক শ্রম ও মানসিক শ্রম। কায়িক বা দৈহিক শ্রম বলতে সেইসব কাজকে বোঝায়, যেখানে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন হাত-পা ব্যবহার করতে হয়। যেমন— কৃষিকাজ, নির্মাণশ্রম, জেলেদের জাল টানা ইত্যাদি। অন্যদিকে, মানসিক শ্রম বলতে বোঝায় মস্তিষ্কের ব্যবহারজনিত কাজ, যেমন— শিক্ষকতা, গবেষণা, পরিকল্পনা প্রণয়ন, বিচারকার্য ইত্যাদি।
এই দুটি প্রকারের শ্রম একে অপরের পরিপূরক। কেবলমাত্র শারীরিক শ্রম দিয়ে যেমন উন্নয়ন সম্ভব নয়, তেমনি মানসিক শ্রমের মাধ্যমে নীতিগত উন্নতি ঘটলেও বাস্তব প্রয়োগে শারীরিক শ্রম অপরিহার্য। একটি দেশের উন্নতির জন্য তাই এ দুই ধরনের শ্রমের সমন্বয় অপরিহার্য।
যদি কায়িক শ্রমকে অবহেলা করা হয়, তবে দেশের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার মানসিক শ্রমকে অগ্রাহ্য করলে দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নৈতিক কাঠামো ধসে পড়ে। ফলে কোনো জাতির প্রকৃত অগ্রগতি তখন সম্ভব হয় না।
শ্রম ও সভ্যতা
সভ্যতার ইতিহাস মূলত শ্রমের ইতিহাস। মানবসভ্যতার প্রতিটি স্তরের অগ্রগতির পেছনে রয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের নিঃস্বার্থ, নিরলস শ্রম।
আজকের এই একবিংশ শতকের বিস্ময়কর প্রযুক্তি ও নগরায়নের পেছনেও রয়েছে অগণিত শ্রমজীবী মানুষের ঘাম ও কষ্ট। ইতিহাস তাদের নাম মনে না রাখলেও তাদের শ্রম গেঁথে রয়েছে সভ্যতার প্রতিটি ইটে, প্রতিটি ধাপে।
কেউ পাহাড় ভেঙে পথ নির্মাণ করেছে, কেউ নদীর দু’তীরকে এক করেছে সেতু নির্মাণ করে। কেউ মাঠে সোনার ধান ফলিয়েছে, কেউ বস্ত্র বুনেছে, কেউ আবার জীবনকে সুস্থ ও সুন্দর করতে তৈরি করেছে চিকিৎসা, প্রযুক্তি ও বিলাসপণ্য।
সভ্যতা আসলে মানুষের পরিশ্রমের সম্মিলিত রূপ— এক মহাকাব্যিক সৃষ্টি যার প্রতিটি অক্ষরে শ্রমের ছাপ।
বাংলাদেশে শ্রম সম্পর্কে ধারণা
বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে শ্রমের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ছিল বিভাজনমূলক। বর্ণব্যবস্থার ছায়ায় কায়িক শ্রমকে হীনজ মনে করা হতো। উচ্চবর্ণের মানুষ শ্রম এড়িয়ে চলতো, আর নিম্নবর্ণের মানুষ সব ধরনের কাজের ভার বহন করতো।
এই মানসিকতা আমাদের সমাজে শ্রমকে অবমাননার চোখে দেখার একটি ঐতিহাসিক অভ্যেস তৈরি করেছে। তবে আধুনিক সময়ের শিক্ষা ও সচেতনতা মানুষকে এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করছে।
ব্যক্তিগত জীবনে শ্রমচেতনা
আমাদের সমাজে এখনো অনেকের মধ্যে এই ধারণা রয়েছে যে কায়িক শ্রম মর্যাদাহানিকর। অথচ বাস্তবতা হলো— পরিশ্রম কখনো আত্মসম্মানের পরিপন্থী নয়, বরং এটি আত্মপ্রতিষ্ঠার শ্রেষ্ঠ উপায়।
যে ব্যক্তি পরিশ্রমকে ভালোবাসে, সে-ই প্রকৃত সফলতা অর্জন করতে পারে। সমাজে তার অবস্থান হয় দৃঢ় ও সম্মানজনক। তাই প্রত্যেক মানুষকে নিজের কর্মক্ষেত্রে শ্রমনিষ্ঠ হওয়া উচিত।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়—
“ভদ্র মোরা শান্ত বড় পোষমানা এ প্রাণ,
বোতাম আটা জামার নিচে শান্তিতে শয়ান।”
এই পঙ্ক্তির মাধ্যমে কবি শ্রমবিমুখ ভদ্রতার কৃত্রিমতাকে বিদ্রুপ করেছেন।
জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব
একটি দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে যদি দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তবে তারা সমস্যার পরিবর্তে শক্তিতে পরিণত হবে। যেমন চীন তার বিপুল জনসংখ্যাকে পরিণত করেছে এক শক্তিশালী কর্মশক্তিতে, যার ফলে তারা অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে। আমাদেরও উচিত কঠোর পরিশ্রমী হয়ে উঠা।
যদি উৎপাদন ও বন্টনে মানসিক এবং শারীরিক শ্রম নিবিড়ভাবে বিনিয়োগ করা যায়, তবে ভোগের অধিকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্জিত হবে। জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব অস্বীকার করে কোনো আধুনিক সভ্যতা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
প্রতিভা বিকাশের হাতিয়ার
শ্রমই সৌভাগ্যের মূল এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষের প্রতিভা বিকশিত হয়। কঠোর পরিশ্রমের ফলেই মানুষ উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য শহর, নগর, এবং নানা ধরনের যন্ত্র ও যানবাহন আবিষ্কৃত হয়েছে।
এ সব আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে পরিশ্রম এবং সাধনার গূঢ় প্রভাব। সুতরাং, পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষের প্রতিভা বিকশিত হয়ে উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
উন্নত দেশে শ্রমের মর্যাদা
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শ্রমের প্রতি যে শ্রদ্ধা ও মর্যাদা রয়েছে, তা তাদের সমৃদ্ধির মূলমন্ত্র। এসব দেশে, কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী সম্মান বা অসম্মান নির্ধারিত হয় না; বরং প্রতিটি শ্রমকেই সম্মানিত এবং মূল্যবান হিসেবে গণ্য করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া, চীন, মিসর, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ইত্যাদি দেশের মানুষ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ উন্নত ও সুসভ্য জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। শ্রমের মর্যাদার মাধ্যমে তারা পৃথিবীতে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
শ্রমশীল ব্যক্তির দৃষ্টান্ত
বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বদের জীবনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং সাধনা। জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, এবং বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ তাদের সফলতার জন্য নিরলস পরিশ্রমের পথ অনুসরণ করেছেন।
ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ছিলেন অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী। তিনি বলেছেন—
“নিজ হাতে কাজ করার মতো পবিত্র জিনিস আর কিছু নেই।”—আল হাদিস
বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইনও শ্রমের গুরুত্ব এবং মর্যাদাকে অকুণ্ঠচিত্তে সম্মান দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “একজন কঠোর পরিশ্রমী ব্যক্তি একজন অলস পণ্ডিতের চেয়ে বেশি মূল্যবান।”
আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার একসময় ছিলেন একটি ছোট বাদাম বিক্রেতা। তাঁর জীবনের কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা তাঁকে বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মান, প্রেসিডেন্টের পদে পৌঁছে দিয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, শ্রমই প্রকৃত সাফল্যের চাবিকাঠি। তাঁর জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি যে, পরিশ্রমের মাধ্যমে একজন সাধারণ ব্যক্তি বিশ্ব নেতায় পরিণত হতে পারেন।
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে শ্রম
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রমের গুরুত্ব অস্বীকার করা সম্ভব নয়। প্রতিটি ধর্মেই শ্রমের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ধর্মের প্রবর্তকগণ শুধু নিজেরাই পরিশ্রম করতেন না, বরং তাদের অনুসারীদেরও নিজেদের কাজ নিজে করার নির্দেশ দিতেন।
পৃথিবীর প্রাণীকূলের মধ্যে শুধুমাত্র মানুষই শ্রম দেয় এমনটা নয়, বরং অনেক প্রাণীও পরিশ্রমী। উদাহরণস্বরূপ, পিপীলিকা (অ্যান্ট) একটি খুবই পরিশ্রমী প্রাণী, যা নিজের দেহের ওজনের প্রায় ৪০ গুণ ভার বহন করতে সক্ষম। এছাড়া মৌমাছি (বী) বছরের পর বছর পরিশ্রম করে মধু সংগ্রহ করে, কখনো অলসতা বা বিরতি নেয় না।
এ কারণে, আমাদের সকলকে শ্রম দেওয়া কর্তব্য হিসেবে পালন করতে হবে, কারণ পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে—
“মানুষ তাই পায় যা সে করে।”
তাহলে আমাদের ভাগ্য তৈরি করতে হবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে।
শ্রম ও লিঙ্গভেদ
বিশ্বে পুরুষ ও নারী উভয়ে একে অপরের পরিপূরক। তারা তাদের শারীরিক ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করেন, তবে নারীর শ্রমের কোন অংশই পুরুষের শ্রমের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। নারী তার শ্রমের মাধ্যমে দিগন্তে এক আলোকিত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম।
তবে, অনেক অবগ্রসর দেশেই নারীর শ্রমকে তেমন মূল্যায়ন করা হয় না। এর ফলে শ্রমের ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হয় যা শ্রমের মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করতে বাধা সৃষ্টি করে।
আমাদের দেশে তৈরি পোশাক শিল্পে নারীদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তাদের শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাই, নারী ও পুরুষের শ্রমের সমান মূল্যায়ন এবং মর্যাদার প্রতিষ্ঠা জরুরি।
শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ
প্রত্যেক নাগরিকের উচিত শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তোলা। শ্রমই আমাদের জীবনে গৌরব এবং সাফল্য নিয়ে আসে। শ্রমজীবী মানুষ তাদের শ্রমের মাধ্যমে দেশ এবং সমাজের কল্যাণে অবদান রাখে।
কোনও কাজ ছোট বা তুচ্ছ নয়। প্রতিটি কাজেরই একটি মর্যাদা আছে। যে ব্যক্তি শ্রমের মর্যাদা দিতে জানে না, সে কখনোই সময়ের মূল্য বুঝতে পারে না এবং নিজের মর্যাদাও প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় না।
শ্রমশীল ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ
শ্রমের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম, তেমনি শ্রমশীল ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধাবোধও আমাদের সকলের কর্তব্য। চাষি, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, কুলি, মজুর, শ্রমিক— এ সকল মানুষ কখনোই ঘৃণার চোখে দেখা উচিত নয়। কারণ, দেশ এবং জাতির উন্নতি ও রক্ষার দায়িত্ব তাদের কাঁধে থাকে। যে ব্যক্তি শ্রমের মর্যাদা দিতে জানে, সেই ব্যক্তি জীবনের অবসর সময়টুকু সুচিন্তিতভাবে কাজে লাগাতে পারে, ফলে তার জীবন সুন্দর ও গতিশীল হয়ে ওঠে। শ্রম আনে গতি, আর অলস্য আনে স্থিতি। মনে রাখতে হবে—
“জন্ম হউক যথা, কর্ম হউক ভালো।”
শ্রমই উন্নতির মূল
ব্যক্তিগত ও জাতীয় উন্নতির মূল হচ্ছে শ্রম ও কঠোর সাধনা। পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। বিশ্বব্যাপী শ্রমের মর্যাদা এবং গুরুত্ব ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং আমরাও এর থেকে পিছিয়ে থাকতে পারি না। শ্রম বিনিয়োগের সাথে সাথে আমাদেরও উন্নয়ন এবং অগ্রগতির পথ রচনা করতে হবে।
শ্রমের উপকারিতা
শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। কথায় আছে, “শ্রম ছাড়া শ্রী হয় না।” যে জাতি বেশি পরিশ্রমী, সেই জাতি বেশি উন্নত। পরিশ্রম কখনও আত্মসম্মানের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং এটি ব্যক্তিগত এবং জাতীয় কল্যাণের জন্য অপরিহার্য। দৈহিক এবং মানসিক উভয়ভাবে পরিশ্রমের মাধ্যমে একটি দেশ এবং তার জনগণ মাথা উঁচু করে চলতে পারে। শ্রমবিমুখ জাতির ধ্বংস অনিবার্য। পৃথিবীর মহান কীর্তি গুলির পেছনে রয়েছে মানুষের সূক্ষ্ম চিন্তা, পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়।
শ্রমবিমুখতার পরিমাণ
অদৃষ্টবাদী, অলস এবং শ্রমবিমুখ লোকেরা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ব্যর্থ হয়ে থাকে। ঈশ্বর কারো হাতে সম্পদ তুলে দেন না। অলস ব্যক্তিরা সাধারণত দৈবের দোহাই দিয়ে সময় কাটাতে থাকে, যার ফলে তারা চিরকাল পরাজিত হয়ে থাকে। সম্পদ বা সাফল্য কখনোই সহজে পাওয়া যায় না—এটি অর্জন করতে হয় নিরলস পরিশ্রম এবং সংগ্রামের মাধ্যমে। অলসতা মানসিক উন্নতির এক বড় বাধা। যেমন একটি প্রবাদ বলে—
“An idle brain is the devil’s workshop।”
অর্থাৎ, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।”
অলস ব্যক্তি অনেক সময় থাকে, কিন্তু সেই সময়টাকে কাজে লাগানোর পরিবর্তে তারা অপকর্মে লিপ্ত হয়। যে ছাত্র পরিশ্রম করে না, সে কখনো পরীক্ষায় সফল হতে পারে না। যে কৃষক কঠোর পরিশ্রম করে না, তার ফসলও ভালো হবে না। পরবর্তীতে তারা পরনির্ভরশীল হয়ে পড়বে। তাই তাদের মনে রাখতে হবে—
“খেটে খাটায় লাভের গাঁতী,
তার অর্ধেক কাঁধে ছাতি,
ঘরে বসে পুঁছে বাত,
তার কপালে হা-ভাত।”
শ্রমবিমুখতা জীবনে দুঃখ-বেদনা নিয়ে আসে, এবং শ্রমহীন জীবনে ব্যর্থতা সহজেই এসে গ্রাস করে ফেলে। যেমনটি বলা হয়েছে—
‘পরিশ্রমে ধন আনে, পুণ্য আনে সুখ।’
এটি একেবারে সত্য। যে ব্যক্তি শ্রমকে অবজ্ঞা করে, তার জীবনে কোনো মূল্য নেই।
উপসংহার
যেমন একটি বৃক্ষ নীরবে পরিশ্রম করে ফুল ও ফল দেয়, ঠিক তেমনি মানুষকেও নিষ্ঠাবান কর্মের মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে অংশ নিতে হবে। শ্রমের ফসলের সম্ভার নিয়েই ব্যক্তি, সমাজ ও দেশ এগিয়ে যায় সমৃদ্ধির পথে। তাই, জাতীয় উন্নয়ন এবং অগ্রগতির জন্য শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।
সবশেষে, এটি বলা যায়— মানুষ একদিকে যেমন সভ্যতার স্রষ্টা, তেমনি নিজের ভাগ্যের নির্মাতা। নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য পরিশ্রমই হলো তার প্রধান হাতিয়ার।