সম্পদে যাঁদের ঠেকে না চরণ / মাটির মালিক তাঁহারাই হন

এ যেন সমাজের নির্মম পরিহাস!
যার হাত মাটির ঘামে ভেজে, তার নেই মাটির মালিকানার অধিকার;
আর যার পা মাটিতে পড়ে না, সে-ই ঘোষণা করে—“এই ভূমি আমার”।

এই দুঃখজনক বৈপরীত্যটি আজকের সমাজব্যবস্থায় গভীরভাবে প্রোথিত। যে শ্রমিক সকালে সূর্যের সঙ্গে জাগে, মাথায় ঝুড়ি তোলে, চাষ করে, ঘাম ঝরায়—সে মাটির সন্তান, প্রকৃত প্রস্তাবে ভূমির আসল পরিচারক। অথচ তার কোনো জমি নেই, নেই তার ঘর বাঁধার স্থায়ী ঠিকানা। সে কেবল খাটে—ভূমির হৃদয় জুড়ে জীবন ফোঁটে, কিন্তু তার নিজের নামে কিছুই থাকে না।

অন্যদিকে, যে মানুষটি কোনোদিন মাটিতে পা রাখে না, যার জুতা মাটি স্পর্শ করে না, যার নখেও নেই শ্রমের কোনো দাগ—সেই মানুষই ভূমির মালিক। তার হাতে জমির দলিল, সম্পদের পাহাড়, আর সে রাজার মতো হুকুম চালায়। তার মুখে অম্লান হাসি, অথচ তার ধনদৌলতের ভিত্তি নির্মিত হয়েছে অসংখ্য শ্রমজীবীর রক্ত-ঘামে।

সমাজে এই বৈষম্য একটি গভীর সংকট। এখানে শ্রমের মূল্য নেই, আছে পুঁজি ও ক্ষমতার দাপট। মাটিতে যারা জন্ম নেয়, তাদের স্থান হয় মাটির নিচে—অথচ মাটিকে যারা শুধু ‘সম্পত্তি’ বলে গণ্য করে, তারাই উপর দিয়ে হাঁটে সিংহাসনের ভঙ্গিমায়।

এ দৃশ্য বড়ো বেদনার, বড়ো বেমানান। যে কৃষকের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে ধানী জমি সবুজ হয়, শস্যে ভরে ওঠে দেশের গোলা, তার নিজের পাতে দু’বেলা খাবার জোটে না। পক্ষান্তরে যার আঙুলে কাঁচা ধানের গন্ধ কোনোদিন লাগেনি, তার জন্যে সাজানো থাকে পাঁচতারা হোটেলের বিলাসী ভোজ।

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন জাগে—আসলেই কে মাটির মালিক? কাগজে যাদের নামে দলিল, না কি যাদের ঘামে সেই মাটি সঞ্জীবিত হয়?

বস্তুত, ভূমির প্রকৃত মালিক সেই শ্রমজীবী, যিনি নিজের রক্ত-মাংস দিয়ে ভূমিকে রক্ষা করেন, ফসল ফলান, সমাজকে বাঁচিয়ে রাখেন। সমাজ যদি ন্যায়ের পথে চলে, তবে এই ভূমির মালিকানার যোগ্যতা হবে শ্রম ও ভালোবাসা, কাগুজে কৌশল নয়।

তাই বলতে হয়—

ধনীর নয়, ভূমির অধিকারীর আসন হওয়া উচিত শ্রমিকের কাঁধে।

সেই মানুষদের, যাঁদের হৃদয় এখনো মাটির ঘ্রাণে সজীব হয়, যাঁদের পা মাটিতে ঠেকে বলে মাটির ভাষা বোঝে।

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ : “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: অর্থ সম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞান সম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: মিথ্যা শুনিনি ভাই / এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: যাহা চাই ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল

✅ আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে