‘ফিরিঙ্গি’ একটি বাংলা শব্দ, যা মূলত পশ্চিমী বা বিদেশী জাতির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে ইউরোপীয় পর্তুগিজ, ইংরেজ, ডাচ, ফরাসি ইত্যাদি বিদেশী নাগরিকদের জন্য। ‘ফিরিঙ্গি’ শব্দটি বাংলায় প্রথম ব্যবহৃত হয় পর্তুগিজ উপনিবেশের সময়কালীন, যখন পর্তুগিজরা উপমহাদেশে এসে স্থায়ী হতে শুরু করেছিল। শব্দটির উৎপত্তি মূলত আরবি ভাষা থেকে, যেখানে "ফারিংজি" শব্দটি ইউরোপীয়দের বা পাশ্চাত্য জাতির জন্য ব্যবহৃত হত।
এই শব্দটি মূলত পর্তুগিজদের জন্য ব্যবহৃত হলেও, পরে ইংরেজি, ফরাসি, ডাচ, স্প্যানিশ, বা অন্যান্য পশ্চিমী জাতির জন্যও ব্যবহৃত হতে শুরু করে। ভারতীয় উপমহাদেশে, বিশেষ করে বাংলা সাহিত্য এবং ইতিহাসে, ‘ফিরিঙ্গি’ শব্দটি প্রায়শই উপনিবেশকামী বিদেশী শাসক বা পরদেশী শাসকদের জন্য ব্যবহৃত হয়। অতীতের ইতিহাসে, যখন ইউরোপীয় শক্তিগুলি ভারতবর্ষে তাদের বাণিজ্যিক এবং উপনিবেশিক উদ্দেশ্যে আসতে শুরু করেছিল, তখন স্থানীয় জনগণ তাদেরকে ‘ফিরিঙ্গি’ বলে অভিহিত করত।
এছাড়া, এই শব্দটি প্রায়ই নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছিল, কারণ স্থানীয়রা তাদেরকে শোষক হিসেবে দেখতো। বিশেষ করে ব্রিটিশ শাসনামলে, ইংরেজ শাসকদের প্রতি বিরোধিতা বা বিদ্রোহের সময় 'ফিরিঙ্গি' শব্দটি প্রায়ই বিদ্বেষমূলকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। কিছু সাহিত্যকর্মেও, ‘ফিরিঙ্গি’ শব্দটি বিদেশী শাসকদের প্রতি মানুষের ক্ষোভ এবং বিদ্বেষের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
পরবর্তীকালে, বিশেষ করে স্বাধীনতার পর, এই শব্দটির নেতিবাচক ব্যবহার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, তবে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং তাৎপর্য আজও রয়ে গেছে।
Please login or Register to submit your answer