সকল প্রশ্ন‘বিষাদসিন্ধু’ কী ধরনের রচনা?
Preparation Staff asked 3 days ago

বিষাদসিন্ধু’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি অনন্য কীর্তি, যার রচয়িতা ছিলেন মির মশাররফ হোসেন (১৮৪৭–১৯১২)। এটি একটি ইতিহাস আশ্রয়ী উপন্যাস, যার কাহিনির মূলভিত্তি হযরত ইমাম হোসেন (রা.) ও কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা। যদিও ঘটনাটি ইসলামী ইতিহাসভিত্তিক, লেখক উপন্যাসটিকে সাহিত্যিক রূপ দিয়ে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতোভাবে উপস্থাপন করেছেন।

‘বিষাদসিন্ধু’ মূলত তিন খণ্ডে রচিত হয়:
১. নবী-পরিবারের পরিচয় ও পরিস্থিতি,
২. কারবালার যাত্রা ও সংঘাত,
৩. কারবালার যুদ্ধ ও শহীদদের বিয়োগান্ত পরিণতি।

উপন্যাসটির নাম থেকেই বোঝা যায়—এটি বেদনা ও বিয়োগের এক গভীর "সিন্ধু" বা মহাসাগর। লেখক ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে চরিত্রগুলিকে প্রাণবন্ত করেছেন। আলী, হোসেন, জয়নব, ইয়াজিদের মতো চরিত্রগুলো শুধুই ধর্মীয় নয়, সাহিত্যিক দিক থেকেও অত্যন্ত জীবন্ত ও নাটকীয়।

এই উপন্যাসটি শুধু ইসলামি ইতিহাস নয়, মানবতার চরম আদর্শ, আত্মত্যাগ, অধিকার প্রতিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এক চিরন্তন দলিল। বাংলার মুসলিম সমাজে এটি যেমন ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত, তেমনি এটি বাংলা সাহিত্যের ধর্মনিরপেক্ষ পাঠকের কাছেও এক সাহিত্যিক সম্পদ।

‘বিষাদসিন্ধু’-র ভাষা অলঙ্কারসমৃদ্ধ, বর্ণনাভঙ্গি নাটকীয় এবং আবেগঘন। মির মশাররফ হোসেন বাংলা সাহিত্যে উপন্যাস রচনার এক নবদিগন্ত উন্মোচন করেন এবং প্রমাণ করেন, ইতিহাস আশ্রয়ী সাহিত্যও পাঠকের মনে দারুণ প্রভাব ফেলতে পারে।