বাংলা ভাষার ব্যবহারে প্রধানত দুইটি রীতি প্রচলিত—সাধু রীতি ও চলিত রীতি। সাধু রীতি ছিল প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে প্রচলিত, যার বাক্যগঠন, শব্দচয়ন ও ক্রিয়াপদ ছিল বেশ গম্ভীর, দীর্ঘ ও সংস্কৃতঘেঁষা। আর চলিত রীতি হলো সাধারণ মানুষের কথ্যভাষার ভিত্তিতে গঠিত সহজ-সরল রূপ। এই চলিত রীতিই আজকের আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ও দৈনন্দিন জীবনে বেশি ব্যবহৃত হয়।
চলিত রীতি ভাষার সেই ধরন, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও রাজনীতির পরিবর্তনের প্রভাবে বিবর্তিত হয়। তাই এটি পরিবর্তনশীল। নতুন শব্দের আগমন, বিদেশি ভাষার প্রভাব, নতুন প্রজন্মের কথাবার্তার ধরন, ইন্টারনেট-ভাষা ইত্যাদি বিষয় চলিত রীতিকে ধীরে ধীরে রূপান্তরিত করে।
উদাহরণস্বরূপ:
এক সময় “তোমার নাম কী?” বলা হতো “তোমার নাম কী হইবে?”—এটি সাধু রীতি। কিন্তু এখন বলি “তোমার নাম কী?”—এটি চলিত রীতি। আবার কেউ কেউ বলে “তোর নাম কী?” বা “তোমার নামটা কী?”, এমনকি চ্যাটে “ur name?”—এই পরিবর্তনশীলতাই ভাষার বিবর্তনের দৃষ্টান্ত।
বাংলার চলিত রীতির জনক হিসেবে প্রমথ চৌধুরী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশেষভাবে স্মরণীয়। প্রমথ চৌধুরী তাঁর ‘সবুজ পত্র’ পত্রিকার মাধ্যমে চলিত ভাষার সাহিত্যিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন।
ভাষা একটি জীবন্ত বিষয়। ভাষার রীতি যদি স্থির ও জড় হতো, তবে তা কালের চাহিদা মেটাতে পারত না। চলিত রীতি তার প্রাণবন্ততার মাধ্যমে ভাষাকে জীবন্ত রাখে। এই কারণে ভাষাতত্ত্ববিদরা বলেন—চলিত রীতি পরিবর্তনশীল, আর এটাই ভাষার প্রকৃত শক্তি।
Please login or Register to submit your answer