বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে দাবা (চেস) এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে নারীদের অংশগ্রহণ ও অর্জন উল্লেখযোগ্য হলেও তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত। এই অঙ্গনে যেসব নারী প্রতিভা দেখিয়েছেন, তাদের মধ্যে ওয়াদিফা আহমেদ একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি হলেন বাংলাদেশের চতুর্থ নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার (Woman International Master – WIM)। তাঁর এই অর্জন কেবল ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং এটি বাংলাদেশের নারী দাবা খেলোয়াড়দের জন্য এক অনুপ্রেরণার প্রতীক।
আন্তর্জাতিক মাস্টার উপাধি কী?
দাবা খেলায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিরোপা রয়েছে, যেগুলো বিশ্ব দাবা সংস্থা (FIDE) দ্বারা প্রদান করা হয়। নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার (WIM) উপাধিটি নারীদের জন্য একটি সম্মানজনক আন্তর্জাতিক শিরোপা, যা একজন খেলোয়াড়ের ধারাবাহিক দক্ষতা, রেটিং ও নির্দিষ্ট টুর্নামেন্টে কৃতিত্বের মাধ্যমে অর্জিত হয়।
ওয়াদিফা আহমেদের সাফল্যের পথ
ওয়াদিফা আহমেদ ছোটবেলা থেকেই দাবার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা ও কৌশল দিয়ে তিনি জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা শুরু করেন এবং নিজেকে প্রমাণ করেন। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় নর্ম ও রেটিং অর্জন করে WIM উপাধি লাভ করেন। তাঁর এই সফলতা বাংলাদেশের নারী দাবা খেলোয়াড়দের সম্ভাবনার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
পূর্ববর্তী তিনজন নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার
ওয়াদিফা আহমেদের আগে বাংলাদেশে আরও তিনজন নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার হয়েছেন। তাঁরা হলেন:
রানী হামিদ: বাংলাদেশের নারী দাবা অঙ্গনের পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত। তিনি শুধু প্রথম নারী আন্তর্জাতিক মাস্টারই নন, বরং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা নারী দাবাড়ু। বহুবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক পরিসরেও প্রশংসিত হয়েছেন।
শামীমা আক্তার লীনা: দ্বিতীয় নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার হিসেবে শামীমা আক্তার লীনা বাংলাদেশের নারী দাবা জগতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন। তাঁর ধারাবাহিক পারফরম্যান্স এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য।
শিরিন সুলতানা: তৃতীয় নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার হিসেবে শিরিন সুলতানাও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সফলভাবে। তাঁর অর্জনও দেশের গর্ব।
ওয়াদিফা আহমেদের গুরুত্ব
চতুর্থ নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার হিসেবে ওয়াদিফা আহমেদের স্থান অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, নারীরা ইচ্ছা, পরিশ্রম ও প্রতিভার মাধ্যমে দাবার মতো মানসিক ক্রীড়াতেও শীর্ষ স্থানে পৌঁছাতে পারেন। তাঁর এই সাফল্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
উপসংহার
ওয়াদিফা আহমেদের অর্জন শুধু একটি পদবী নয়; এটি বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এই ধরনের সাফল্য আরও বেশি নারীদের দাবা খেলায় উৎসাহিত করবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব বাড়াবে। ভবিষ্যতে আরও অনেক নারী দাবাড়ুর উত্থান ঘটুক এই কামনা করা যায়।
Please login or Register to submit your answer