অন্যান্য

আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ

আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সেনারা বিরােধপূর্ণ ভূখণ্ড নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে কয়েক দশকের পুরােনাে শত্রুতার জেরে আবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ এই লড়াই শুরু হয়। সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ২১০ ছাড়িয়ে গেছে। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ দুই দেশের পক্ষ থেকে এই হালনাগাদ তথ্য জানানাে হয়েছে। আজারবাইজান ভূখণ্ডের মধ্যে থাকা নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে প্রতিবেশী দুটি দেশ এখন পর্যন্ত দুবার পুরােদমে যুদ্ধে জড়িয়েছে। পাশাপাশি তিন দশক ধরে নিয়মিত বিরতিতে ছােটখাটো সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুই দেশের সেনারা।

যুদ্ধের কারণ

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা অনুযায়ী নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ। তবে সেখানকার বাসিন্দারা জাতিগতভাবে আর্মেনীয়। সােভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর সেই কারাবাখ অঞ্চল আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনী দখল করে নিয়েছিল। দুটো দেশই এই এলাকাকে তাদের নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। আর্মেনিয়া ১৯৯২-৯৪ সালে যখন এই নাগর্নো-কারাবাখ দখল করে নেয়, তখন সেখান থেকে প্রায় ১০ লাখ আজেরি উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছিল।

এতে ওই অঞ্চলের পাশাপাশি নিজেদের বিশাল ভূখণ্ড হারায় আজারবাইজান। এর পর থেকে এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে দুটো দেশের মধ্যে গত কয়েক দশকে বারবার কূটনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, হুমকি দেওয়া হয় একে অপরকে আক্রমণের। ব্রাসেলসভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বা আইসিজি বলছে, ২০১১ সালে নাগর্নো-কারাবাখ শান্তি আলােচনা থেমে যাওয়ার পর দুটো দেশের মধ্যে অস্ত্র প্রতিযােগিতা বৃদ্ধি পায়।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে আরো পড়ুন :

এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পুরােদমে যুদ্ধে জড়ায় দেশ দুটি। ছয় সপ্তাহের লড়াইয়ে নিহত হয় প্রায় ৬ হাজার ৫০০ মানুষ। পরে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি হয়। এ লড়াইয়ে ১৯৯২-৯৪ সালে হারানাে ভূখণ্ড উদ্ধার করে আজারবাইজান। তবে চুক্তিতে নাগর্নো-কারাবাখের ‘স্ট্যাটাস’ অনিষ্পন্ন ছিল। আলােচনার মাধ্যমে সেটি নির্ধারণ করার কথা বলা হয় চুক্তিতে। মস্কো সেখানে দুই হাজার শান্তিরক্ষী মােতায়েন করে। কিন্তু শান্তিপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে আর্মেনিয়া গড়িমসি করে বলে অভিযােগ করে আজারবাইজান।

এই যুদ্ধের বিপদ কী

আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের বাহিনীর মধ্যে যতবারই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, কয়েক দিন পরেই সেগুলােকে নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। কিন্তু লন্ডনে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান চ্যাটাম হাউসে দক্ষিণ ককেশাস-বিশেষজ্ঞ ও গবেষক লরেন্স ব্রোয়ার্স বলছেন, বর্তমান যুদ্ধের যে তীব্রতা, সেটা দেখে ধারণা করা যায় যে এবার হয়তাে সে রকম সম্ভব হবে।

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুরু হওয়া যুদ্ধেই নাগনো-কারাবাখের জন-অধ্যুষিত এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ও বােমা হামলা চালানাে হয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের পর সেখানে এই প্রথম এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটল। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের বেসামরিক এলাকাতেও হামলা চালানাে হয়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে। এই যুদ্ধ যদি দীর্ঘ সময় ধরে চললে বাইরের আরও অনেক শক্তি জড়িয়ে পড়বে, যার ফলে আরও বৃহত্তর পরিসরে আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।

যুদ্ধে তুরস্কের ভূমিকা কী

ভৌগােলিক কৌশলগত কারণে আজারবাইজান তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এ কারণে তুরস্ক বহু আগে থেকেই আজারবাইজানকে নৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তুরস্কের পক্ষ থেকে আজারবাইজানকে বিভিন্ন রকমের সামরিক সহযােগিতাও দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধে যে তুরস্কের অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে, এ বিষয়ে তেমন একটা সন্দেহ নেই। আজারবাইজানের প্রতি তুরস্কের এই অকুণ্ঠ সমর্থনের নিন্দা করেছে আর্মেনিয়া। তারা বলেছে, এর ফলে সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।

যুদ্ধে রাশিয়ার ভূমিকা কী

এই সংঘাতে রাশিয়ার ভূমিকা নানা রকমের এবং কখনাে কখনাে সেসব ভূমিকা পরস্পরবিরােধী। আর্মেনিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। সে দেশে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তাজনিত সংস্থা কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে মস্কো আর্মেনিয়াকে নিরাপত্তা সহযােগিতা প্রদান করে থাকে।

আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া—উভয় পক্ষের কাছেই অস্ত্র সরবরাহ করে রাশিয়া। আজারবাইজানের সঙ্গেও রাশিয়ার সম্পর্ক ভালাে। তবে এই যুদ্ধ যদি দীর্ঘায়িত হয় এবং তাতে তুরস্ক আরও বেশি করে জড়িয়ে পড়ে, তখন ওই অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্য খর্ব হওয়ার আশঙ্কার কথা বিবেচনা করে রাশিয়া সেখানে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button