অন্যান্য

ম্যালেরিয়া কী? ম্যালেরিয়ার টিকা অনুমােদন

বিশ্বের অন্যতম পুরােনাে এবং প্রাণঘাতী সংক্রামক রােগ ম্যালেরিয়া। ৬ অক্টোবর ২০২১ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রথম ম্যালেরিয়ার টিকা অনুমােদন দেয়। একশ বছরের বেশি সময় চেষ্টার পর ম্যালেরিয়ার একটি কার্যকর টিকা তৈরির বিষয়টি চিকিৎসা শাস্ত্রের জন্য বড় এক অর্জন।

ম্যালেরিয়া কী?

ম্যালেরিয়া মশাবাহিত একটি সংক্রামক রােগ। ম্যালেরিয়ার মূলে রয়েছে । প্লাজমােডিয়াম গােত্রের পরজীবী। যে পাচ প্রজাতির প্লাজমােডিয়ামের কারণে ম্যালেরিয়া হয়, তার মধ্যে মৃত্যুর কারণ হলাে প্লাজমােডিয়াম। ফ্যালসিপেরাম, প্লাজমােডিয়াম ভাইভ্যাক্স, প্লাজমােডিয়াম ওভাল এবং প্রাজমােডিয়াম ম্যালেরি। ম্যালেরিয়ার জীবাণু মানুষের শরীরে পৌঁছায়। স্ত্রী-অ্যানােফিলিস মশার মাধ্যমে। এ মশা গ্রীষ্ম-বর্ষায় বেশি জন্মায় এবং এ সময়ে রােগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।

এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন

ইতিহাস

ইতালিয় শব্দ mal (অর্থ দূষিত) ও aria (অর্থ বায়ু) থেকে আগত ম্যালেরিয়া (Malaria) শব্দের অর্থ দূষিত বায়ু। চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক হিসেবে বিবেচিত হিপােক্রেটিস প্রথম ম্যালেরিয়া রােগের লক্ষণগুলাের বর্ণনা দেন। ১৬০০ সালে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা প্রথম শুরু হয় পেরুর সিনকোনা গাছের বাকল ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে।

আরো পড়ুন: সেপ্টেম্বর মাসের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসসমূহ

১৬৪৯ সালে ইংল্যান্ডে এটা জেসুইট পাউডার’ নামে পাওয়া যেত। ১৭৫১ সালে । ইতালির ফ্রান্সেসকো টট্টি ম্যালেরিয়া শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। ১৮৮০ সালে চার্লস ল্যাভেরন লােহিত রক্তকণিকা থেকে ম্যালেরিয়ার কারণ | হিসেবে একটিমাত্র কোষবিশিষ্ট পরজীবী প্রােটোজোয়াকে চিহ্নিত করেন।

ভারতের কলকাতার পিজি হাসপাতালে কর্মরত ব্রিটিশ ডাক্তার স্যার। রােনাল্ড রস ১৮৯৭ সালে প্রমাণ করেন যে, স্ত্রী অ্যানােফিলিস মশা এ রােগের। বাহক হিসেবে কাজ করে। ১৯০২ সালে তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নােবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৮২০ সালে ফরাসি বিজ্ঞানীরা দেখান যে সিনকোনা । গাছের ছালে কুইনাইন নামে একটা পদার্থ ম্যালেরিয়া রােগ প্রতিরােধে সক্ষম।

১৯৩৪ সালে ক্লোরাকুইন আবিষ্কারের পর এর ব্যবহার শুরু হয়। এরপর চীনের নারী বিজ্ঞানী তু ইউইউ সুইট ওয়ার্মউড গাছের নির্যাস থেকে তৈরি করেন আরটিমিসিনিন’ নামে কার্যকরী ওষুধ। সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে যুক্তরাজ্যের ওষুধ কোম্পানি GSK ম্যালেরিয়া টিকা উদ্ভাবন করে ।

ম্যালেরিয়ার টিকা অনুমােদন

দীর্ঘ গবেষণা আর প্রাণান্তকর চেষ্টার পর অবশেষে মশাবাহিত প্রাণঘাতী রােগ ম্যালেরিয়ার প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কারে। সফলতার মুখ দেখেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান GlaxoSmithKline (GSK) বিশ্বে প্রথমবারের মতাে এ রােগের টিকা আবিষ্কারে সক্ষম হয়।

৬ অক্টোবর ২০২১ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) টিকাটির অনুমােদন দেয়। RT’S.S/AS01 টিকাটির বাণিজ্যিক নাম Mosquirix । ২০১৯ সাল থেকে একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় ঘানা, কেনিয়া ও মালাবিতে আট লাখ শিশুর শরীরে। ২০ লাখের বেশি ডােজ ম্যালেরিয়ার টিকা প্রয়ােগ করা হয়। প্রকল্পের কর্মসূচির ফলাফলের ভিত্তিতে WHO এ সিদ্ধান্ত নেয়।

ম্যালেরিয়া মুক্ত দেশ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নিয়ম অনুযায়ী, কোনাে দেশ কিংবা ভূখণ্ডে পরপর তিন বছর ম্যালেরিয়া রােগী শনাক্ত না হলে ম্যালেরিয়ামুক্ত দেশ হিসেবে স্বীকৃতির জন্য তারা আবেদন করতে পারে। পরে প্রয়ােজনীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের পর WHO তাদের স্বীকৃতি দেয়। সর্বশেষ ৩০ জুন ২০২১ বিশ্বের ৪০তম অঞ্চল হিসেবে চীনকে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। WHO’র ৬১টি দেশের আলাদা একটি তালিকা রয়েছে। এ তালিকার দেশগুলােয় কখনােই ম্যালেরিয়া ছিল না কিংবা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ছাড়াই রােগটি নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি

কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষকরা বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১২৩ প্রজাতির মশার খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই ১৪টি প্রজাতির মশা পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মশাবাহিত পাঁচটি রােগের কথা জানা যায়। এর মধ্যে রয়েছে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং জাপানিজ এনসেফালাইটিস।

বর্তমানে বাংলাদেশের ১৩টি জেলার ৭২টি থানায়। ম্যালেরিয়া রােগের উপস্থিতি রয়েছে। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলাতেই ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। অর্থাৎ ম্যালেরিয়া আক্রান্তের ৯০ শতাংশই পার্বত্য তিন জেলায়। এই দশকে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ৮৭.৬ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশও : ম্যালেরিয়ামুক্ত হবে বলে আশা করা যায়। আর পুরাে বিশ্ব ম্যালেরিয়ামুক্ত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ২০৫০ সাল।

টিকার কার্যকারিতা

অনুমােদন পাওয়া RTS,s টিকা। শিশুদের শরীরে প্লাজমােডিয়াম ফ্যালসিপেরামের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ ক্ষমতা তৈরি করবে। ২০১৫ সালে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা যায়, এ টিকা প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জনের শরীরে ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরােধ ক্ষমতা তৈরি করে। তবে কার্যকর সুরক্ষা পেতে এ টিকার চারটি ভােজ নিতে হয়। শিশুর বয়স পাচ মাস হলে এক মাস অন্তর প্রথম তিনটি ভােজ দিতে হবে। আর চতুর্থ বুস্টার ডােজটি দিতে হবে ১৮ মাস বয়স হওয়ার পর।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button