পৌরনীতি ও নাগরিকতা

সমাজ কাকে বলে ও সমাজের গুরুত্ব

সমাজ বলতে সেই সংঘবদ্ধ জনগােষ্ঠীকে বােঝায়, যারা কোনাে সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একত্রিত হয়। অর্থাৎ একদল লােক যখন সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে, তখনই সমাজ গঠিত হয়। সমাজের এ ধারণাটি বিশ্লেষণ করলে এর প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যথা-

  • বহুলােকের সংঘবদ্ধভাবে বসবাস এবং
  • ঐ সংঘবদ্ধতার পেছনে থাকে সাধারণ উদ্দেশ্য।

তাছাড়া সমাজের সদস্যদের মধ্যে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়- ঐক্য ও পারস্পরিক সহযােগিতা, নির্ভরশীলতা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য ইত্যাদি। সমাজের সাথে মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। মানুষকে নিয়ে সমাজ গড়ে উঠে। আর সমাজ মানুষের বহুমুখী প্রয়ােজন মিটিয়ে উন্নত ও নিরাপদ সামাজিক জীবন দান করে। সমাজের মধ্যেই মানুষের মানবীয় গুণাবলি ও সামাজিক মূল্যবােধের বিকাশ ঘটে।

সমাজকে সভ্য জীবনযাপনের আদর্শ স্থান মনে করে বলে মানুষ তার নিজের প্রয়ােজনেই সমাজ গড়ে তােলে। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল যথার্থই বলেছেন, মানুষ স্বভাবগত সামাজিক জীব, যে সমাজে বাস করে না, সে হয় পশু, না হয় দেবতা। বস্তুত মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমাজে বসবাস করে এবং সামাজিক পরিবেশেই সে নিজেকে বিকশিত করে।

পণ্ডিতদের মতে সমাজ :

“সমাজ বলতে আমরা বুঝি এমন মানুষ যারা একটি সাধারণ কারণের জন্য একত্রিত হয়েছে” – সমাজবিজ্ঞানী গিডিংস

“সমাজ মানব বৈচিত্র্যের একটি বৈচিত্র্যময় রূপ” – ম্যাকআইভার

ইবনে খালদুনই প্রথম বিজ্ঞানী যিনি সমাজের বিভিন্ন দিক অধ্যয়ন করেন।

“সমাজ হল সামাজিক সম্পর্কের নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিদের সাধারণ জ্ঞান” – সমাজবিজ্ঞানী কিম্বল ইয়ং

সমাজের পরিধি ছোট বা বড় হতে পারে, এর কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। এমনকি সমাজ বিশ্বব্যাপী হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: রেড ক্রস সোসাইটি (বিশ্ব রেড ক্রস দিবস প্রতি বছর 8 মে পালিত হয়)।

একটি সমাজের উপাদান কি কি?

সমাজের প্রথম ও প্রধান উপাদান হল মানুষ। সমাজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল পরিবার। আর সমাজ অনেক পরিবার নিয়ে গঠিত। গড়ে ওঠে স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মন্দির, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। সমাজের মানুষের আরামের জন্য।

সমাজ কেন গুরুত্বপূর্ণ :

আমরা জানি যে সমাজ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আমাদের বিশ্বের উন্নতির জন্য একসাথে কাজ করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম এবং প্ল্যাটফর্ম দেয়। সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের জীবনযাত্রা ও সামাজিক অবস্থার উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছি। সম্মিলিত সামাজিক প্রচেষ্টার জন্য আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও, সমাজের সামাজিক বিশ্বাস, নিয়ম এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ নিয়ম রয়েছে যা লোকেদের কীভাবে আচরণ করা উচিত এবং কী ভুল তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে।

সমাজ গঠিত হয় নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতির ভিত্তিতে, যাতে মানুষ সহজেই সেখানে বসবাস করতে পারে, একে অপরের বিপদে এগিয়ে যেতে পারে। তাই সমাজকে সুসংগঠিত ও শাসন ভিত্তিক বলা যায়। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে কী করবে বা করবে না? এই বিষয়গুলোই নির্ধারণ করে তারা কোন সমাজে বেড়ে উঠছে। তাই প্রত্যেকের উচিত তাদের জীবন্ত সমাজকে একটি আদর্শ সমাজ হিসেবে গড়ে তোলা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button