প্রবন্ধ আলোচনা

ইতিহাসের বাঁকবদলে মার্চ

মার্চ আমাদের কাছে সুখের মাস, শোকের মাস এবং আনন্দের মাস। মার্চ মাস যেমন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ও ভাষা আন্দোলনের বীজ বপনের মাস— তেমনি স্বাধীনতা সংগ্রামও এ মাসেই শুরু হয় । তাই বাঙালির ইতিহাসের বাঁকবদলে এ মাসটি অনন্য।

ইতিহাসের বাঁকবদলে মার্চ

২৩ মার্চ ১৯৪০: লাহোরে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের ২৭তম বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ‘লাহোর প্রস্তাব’ উত্থাপন করেন। এ প্রস্তাবে প্রথম মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমির কথা বলা হয় ।

২ মার্চ ১৯৪৮ : রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।

৩ মার্চ ১৯৪৮ : রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে ভাষার দাবিতে ১১ মার্চ পূর্ব বাংলায় প্রথম হরতাল পালিত হয় ৷

১২-১৫ মার্চ ১৯৪৮ : পূর্ব বাংলায় টানা চার দিনের ধর্মঘট পালিত হয়।

১৫ মার্চ ১৯৪৮ : সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে খাজা নাজিমুদ্দিন বৈঠকে বসেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদানসহ ৮টি বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি হয় ৷

২১ মার্চ ১৯৪৮ : মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত গণসংবর্ধনায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করেন ।

২৪ মার্চ ১৯৪৮ : জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নাকচ করেন দেন ৷

৮-১২ মার্চ ১৯৫৪ : পূর্ব বাংলার আইনসভার নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট নৌকা প্রতীকে অংশগ্রহণ করে ৩০৯টি আসনের মধ্যে ২২৮ আসনে বিজয়ী হয়।

২৩ মার্চ ১৯৫৬ : পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং পূর্ববঙ্গের নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান’ করা হয়।

১৮-১৯ মার্চ ১৯৬৬ : আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভায় শেখ মুজিবকে সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠিত হয়।

২৩ মার্চ ১৯৬৬ : আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা উত্থাপন করেন।

১ মার্চ ১৯৭১: পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে দেশব্যাপী কারফিউ জারি করেন।

১ মার্চ ১৯৭১ : বিকেল ৩টায় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তৎকালীন ইকবাল হলে (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক) ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ জরুরি সভায় মিলিত হন ৷

২ মার্চ ১৯৭১ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশে স্বাধীনতার প্রস্তাব পাঠ করেন ছাত্রলীগের তৎকালীন দফতর সম্পাদক এম এ রশীদ সংগঠনের চার নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন এবং শাজাহান সিরাজ সম্মিলিতভাবে স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন ।

৩ মার্চ ১৯৭১ : পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগ এবং শ্রমিক লীগের যৌথ সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ ঘোষণা করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ ইশতেহারটি পাঠ করেন।

৩ মার্চ ১৯৭১ : স্বাধীন দেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি প্রস্তাব করা হয়। একইসঙ্গে গৃহীত হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এতে ছিল সবুজ জমিনের মধ্যে লাল সূর্য এবং এর মাঝখানে সোনালি রঙের বাংলাদেশের মানচিত্র।

৩ মার্চ ১৯৭১: পল্টনের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পাশাপাশি স্বাধীনতার প্রথম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

৭ মার্চ ১৯৭১: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ভাষণে ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা ও আসন্ন সংগ্রামের বিষয়ে সুস্পষ্ট কর্মসূচি।

২৩ মার্চ ১৯৭১ : পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবসে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের পতাকার বদলে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।

২৫ মার্চ ১৯৭১ : মধ্যরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করে। পাশাপাশি ‘অপারেশন বিগ বার্ড’-এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয় ৷

২৬ মার্চ ১৯৭১ : গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বেই রাতের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ইপিআরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেন। চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button