অস্থিসন্ধিতে প্রদাহজনিত ব্যথাকেই সাধারণভাবে আমরা বাত বলে। জানি। আমাদের দেহে অনেক সন্ধি বা Joint আছে। নানা কারণে এসব অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ হতে পারে। এ প্রদাহের ফলে সন্ধি এবং এর চারপাশের যেসব লিগামেন্ট, ক্যাপসুল ও তরুণাস্থি থাকে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রােগীরা চলাচলে ব্যথা অনুভব করেন।
বাতের নানান রকমফের আছে। গেঁটেবাত তার মধ্যে অন্যতম। সাধারণত মধ্যবয়সিরা এ রােগে বেশি আক্রান্ত হন। পুরুষরা মহিলাদের চেয়ে এ রােগে বেশি ভােগেন। গেঁটেবাতের পােশাকি নাম Gout বা Couty Arthritis। এটি একটি বিপাকজনিত রােগ। পিউরিন ” নামে একটি জৈব রাসায়নিক পদার্থের বিপাকের বিঘ্ন ঘটার ফলে এটি হয়ে থাকে।
মানবদেহে নাইট্রোজেনের প্রয়ােজনীয়তা মেটে প্রােটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার থেকে। এসব প্রােটিন জাতীয় খাবার বিপাকের ফলে শরীরে তৈরি হয় পিউরিন। এই পিউরিন পরিবর্তিত হয়ে পরিণত হয় ইউরিক এসিডে। এছাড়াও আমাদের শরীর নিজেই তৈরি করে এই পিউরিন। শরীরে তৈরি হওয়া ইউরিক এসিডের বেশির ভাগ কিডনি দিয়ে নিঃসরিত হয় প্রস্রাবের মাধ্যমে আর বাকিটা বের হয় পায়খানার মাধ্যমে।
পিউরিন থেকে ইউরিক এসিড তৈরি এবং শরীর থেকে তার নিঃসরণের মাঝে একটা সমতা থাকে, ফলে শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। কোনাে কারণে ইউরিক এসিড তৈরির হার বেড়ে গেলে বা শরীর থেকে ইউরিক এসিডের নিঃসরণ কমে গেলে রক্তে এর মাত্রা বৃদ্ধি। পেতে থাকে। শরীরে দীর্ঘদিন উচ্চমাত্রায় ইউরিক এসিড থাকলে এগুলাে কেলাসিত (crystalised) হয়ে দানাদার Urate Crystal তৈরি করে।
এসব Urate Crystal অস্থিসন্ধি বা Joint এ জমা – হয়ে প্রদাহের সৃষ্টি করে। ফলে শুরু হয় প্রচণ্ড ব্যথা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই Gout এর ব্যথা পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের Joint কে আক্রান্ত করে। তবে অন্যান্য বড় বড় অস্থিসন্ধি বা Joint গুলােও আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত Joint ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়।
এসব ক্রিস্টাল কিডনিতে জমে তৈরি করতে পারে কিডনির পাথর। দীর্ঘদিন চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় থাকলে এসব ক্রিস্টাল কানে ও চামড়াতেও জমা হতে পারে।
তাই যারা গাউটের রােগী বা যাদের রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি, কিন্তু এখনাে গাউটের রােগী | হিসেবে চিহ্নিত হয়নি, তাদের বলা হয় পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার। না খাওয়ার জন্য।