বিসিএস প্রস্তুতি সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী

সিঙ্গাপুর দেশ পরিচিতি : ভৌগোলিক অবস্থা, ইতিহাস ও নামকরণ

সিঙ্গাপুর দেশ পরিচিতি : ভৌগোলিক অবস্থা, ইতিহাস ও নামকরণ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ-দেশ সিঙ্গাপুর পৃথিবীর গুটিকয় নগর-রাষ্ট্রের অন্যতম। পরিকল্পিত সব উদ্যান আর পথপার্শ্বের তরু-সারির জন্য সিঙ্গাপুর সিটিকে ‘উদ্যান নগরী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক, সমুদ্র-বাণিজ্য ও বিমান চলাচলের কেন্দ্র হিসেবে দেশটির গুরুত্ব অপরিসীম।

ভৌগোলিক অবস্থা

মূল ভূখণ্ড তথা সিঙ্গাপুর আইল্যান্ড, সন্নিহিত ৬৩টি ক্ষুদ্র দ্বীপ এবং একটি দূরবর্তী দ্বীপ নিয়ে রাষ্ট্রটি গঠিত। সিঙ্গাপুর আইল্যান্ডের অবস্থান মালয় উপদ্বীপের দক্ষিণ বিন্দুতে। দেশটির পশ্চিমে মালাক্কা প্রণালি, দক্ষিণে সিঙ্গাপুর প্রণালি, দক্ষিণ-পূর্বে দক্ষিণ চীন সাগর এবং উত্তরে জোহর প্রণালি । জলবায়ু ক্রান্তীয় বৃষ্টিবহুল ।

ইতিহাস ও নামকরণ

‘সিঙ্গাপুর’ নামটি এসেছে মালয় শব্দ ‘সিনাপুরা’ থেকে। এই শব্দের উৎস মূলত সংস্কৃত শব্দ ‘সিংহপুর’ তথা সিংহের নগরী থেকে। তবে খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকে এলাকাটির নাম ছিল ‘পুলাউ উজং’। অন্যদিকে, ‘তেমাসেক’ (Temasek) নামটি পাওয়া যায় চৌদ্দ শতকের জাভানিজ রচনাবলি থেকে। এই শব্দের অর্থ ‘সি-টাউন’ তথা সমুদ্র-নগরী।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মালয় উপদ্বীপের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সিঙ্গাপুরের ইতিহাস। পর্তুগিজ ইতিহাসমতে, সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতার নাম পরমেশ্বর (১৩৮৯-১৩৯৮)। তাঁর আরেক নাম শ্রী ইস্কান্দর শাহ । চৌদ্দ শতকের পরের কয়েকশ’ বছর সিঙ্গাপুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ‘মাজাপাহিত’ ও ‘সিয়ামিজ’ সাম্রাজ্যের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে ।

আরও পড়ুন :  সিরিয়া-ইয়েমেন : ইতিহাসের ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয়

১৮৬৭ সালে অঞ্চলটি সরাসরি ব্রিটিশ শাসনাধীনে আসে। স্বশাসন পায় ১৯৫৯ সালে । ১৯৬৩ সালে মালয়েশিয়ান ফেডারেশনে যুক্ত হলেও আদর্শগত বিভেদের ফলে ১৯৬৫ সালে এটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হয় ।

একনজরে

নামরিপাবলিক অব সিঙ্গাপুর
জনসংখ্যা৫৯ লাখ ৬৮ হাজার ।
সরকারি ভাষা৪টি (ইংরেজি, মালয়, মান্দারিন ও তামিল)।
সরকার ব্যবস্থাপার্লামেন্টারি
স্বাধীনতা লাভ৯ আগস্ট ১৯৬৫।
মাথাপিছু জিডিপি১৩৩,১০৮ মার্কিন ডলার (বিশ্বে তৃতীয়)।
মুদ্রাসিঙ্গাপুরি ডলার।
সদর দপ্তরএশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (APEC)।

বিস্ময়কর অগ্রগতি

দ্বীপ-রাষ্ট্রটিতে তেমন কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ ও পশ্চাদভূমি নেই । তবু স্বাধীনতার পরের কয়েক দশকে এশিয়ার উদীয়মান চার টাইগারের (দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান) অন্যতম হিসেবে স্বীকৃতি পায় দেশটি । বাজার অর্থনীতি, বিদেশি বিনিয়োগ ও রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন ছিল এই সমৃদ্ধির চালিকাশক্তি। দেশটির সামাজিক অগ্রগতিও অতুলনীয়।

আরও পড়ুন :  ডিজিটাল ব্যাংক অনুমোদন

শিক্ষায় বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর দেশগুলোর অন্যতম এটি স্বাস্থ্যসেবার মানে বিশ্বে অবস্থান ষষ্ঠ (২০২০)। সর্বোচ্চ গড় আয়ুর দেশ (নারীদের ৮৭.৬ ও পুরুষদের ৮৪.৮ বছর)। ইন্টারনেটের গতিতে সর্বোচ্চদের তালিকায় থাকা সিঙ্গাপুর সর্বনিম্ন দুর্নীতির দেশ।

বৈশ্বিক উদ্ভাবনী সূচকে ২০২৩ সালে ছিল পঞ্চম অবস্থানে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে থাকে সিঙ্গাপুর সিটি। চাঙ্গি বিমানবন্দর বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম। সিঙ্গাপুর বন্দর বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স বেশ কয়েকবার বৈশ্বিক শীর্ষস্থানে ছিল।

অর্থনীতি

সিঙ্গাপুরের সমাজের বস্তুবাদিতার উল্লেখ করতে ৫টি C এর কথা বলা হয়। এগুলো হলো— Cash, Car, Credit Card, Condominium, Country Club membership বাণিজ্যের স্বর্গ সিঙ্গাপুর বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ অর্থনৈতিক কেন্দ্ৰ। আর্থিক সেবা, উৎপাদন, ও তেল শোধনাগার অর্থনীতির অগ্রাধিকার খাত।

প্রধান রপ্তান পণ্য: পরিশোধিত তেল, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ও কম্পিউটার।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো : ইলেকট্রনিক্স, রাসায়নিক পণ্য, কারিগরি প্রকৌশল ও বায়োমেডিক্যাল সায়েন্স । বিশ্বের সেমিকন্ডাক্টর বাজারের ১১ শতাংশ দেশটির দখলে ।

আরও পড়ুন :  মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২১-২২

পর্যটন স্পট

পর্যটক আকর্ষণের দিক থেকে সিঙ্গাপুর শহরের অবস্থান পৃথিবীতে পঞ্চম । প্রধান পর্যটন স্থান : মেরিনা বে স্যান্ডস, স্কাই পার্ক, গার্ডেনস বাই দ্য বে, সিঙ্গাপুর জু, নাইট সাফারি, বার্ড প্যারাডাইজ, রিভার ওয়ান্ডার্স, অরচার্ড রোড, সেন্তোসা রিসোর্ট আইল্যান্ড, ন্যাশনাল গ্যালারি, সিঙ্গাপুর ফ্লায়ার, এসপ্লানেড, মাদাম তুসোর জাদুঘর, ইউনিভার্সাল স্টুডিও, বোটানিক গার্ডেন ।

জাতীয় সংগীত ও প্রতীক

দেশটির জাতীয় সংগীত মালয় ভাষায় লিখিত ‘মাজুলাহ সিঙ্গাপুর’। এর অর্থ ‘আগুয়ান সিঙ্গাপুর’। সরকারি মাসকট ‘মারলিয়ন’। এটি হলো সিংহের মস্তক ও মাছের শরীর নিয়ে তৈরি একটি প্রতিকৃতি ।

জনগোষ্ঠী

জনঘনত্বের দিক থেকে বিশ্বে মোনাকোর পরই সিঙ্গাপুরের অবস্থান (দ্বিতীয়)। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করেন ৮,০৫৮ জন (২০২৩)। ২০২০ সালের জনশুমারির হিসাবে, জনসংখ্যার ৭৪.৩ শতাংশ চীনা-বংশোদ্ভূত, ১৩.৫ শতাংশ মালয়-বংশোদ্ভূত এবং ৯ শতাংশ ভারতীয়-বংশোদ্ভূত ।

Leave a Reply