আত্মজা ও একটি করবী গাছ : হাসান আজিজুল হক

আত্মজা ও একটি করবী গাছ : হাসান আজিজুল হক

আত্মজা ও একটি করবী গাছ

বাংলা ছোটগল্পের বরপুত্র বলা হয়ে থাকে হাসান আজিজুল হককে। ঔপন্যাসিক হিসেবে তিনি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। বাংলা সাহিত্য যেসব সাহিত্যিকের কারণে বিকশিত হয়েছে, তাঁদের মধ্যে হাসান আজিজুল হকের অবদান অসামান্য। একজন দার্শনিক ও সমাজচিন্তক হিসেবেও তিনি খ্যাত। তাঁর প্রবন্ধ, অনুবাদ ও মুক্ত গদ্য সাহিত্যপিপাসুদের তৃষ্ণা মিটিয়েছে। অবিভক্ত বঙ্গের রাঢ় অঞ্চল হাসান আজিজুল হকের অধিকাংশ লেখার প্রধান বিষয়বস্তু।

সাম্প্রদায়িকতা, দেশভাগ, দাঙ্গা, মহামারি, অনাহারী মানুষ ও জনপদ, সমাজ-সংস্কৃতি তাঁর লেখায় বারবার ফিরে এসেছে। মানুষের সামগ্রিক জীবন তিনি তাঁর লেখায় গভীর পর্যবেক্ষণের সঙ্গে স্পর্শ করতে চেয়েছেন। তাঁর একেকটি গল্প ও উপন্যাস অসাধারণ নৈপুণ্যগুণে চির উজ্জ্বল। এ রকম তাঁর একটি অনবদ্য গল্প-সংকলন হচ্ছে ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’।

বইটি প্রকাশিত হয়েছে ১৯৬৭ সালের নভেম্বর মাসে। লেখক হাসান ফেরদৌস ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ বই নিয়ে লিখেছেন, ‘কলেজের প্রথম বর্ষে হাতে আসে অতি কৃশকায় একটি গল্পগ্রন্থ “আত্মজা ও একটি করবী গাছ”। সব মিলিয়ে মোট আটটি গল্পের সংকলন।

আরও পড়ুন :  ক্লিফ অব মােহর সম্পর্কিত তথ্য

নিঃস্ব, অভাবী ও একাকী কিছু মানুষের গল্প। তাঁরা সবাই আমাদের আশপাশের, অথচ অধিকাংশ‍ই আমাদের অপরিচিত। অনেকে জীবনযুদ্ধে পর্যুদস্ত, অথচ বাঁচার জন্য, স্বপ্ন দেখার জেনেছিলাম, জন্য কী অফুরান চেষ্টা। এ বই পড়ে স্বপ্ন দেখার মানুষের পরাজয় হয়, কিন্তু মানবের স্বপ্নের পরাজয় হয় না।’ অন্যদিকে প্রখ্যাত লেখক হায়াৎ মামুদ হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে লিখেছেন, ‘হাসান আজিজুল হক প্রায় এক ক্ষমাহীন বিশ্বকে উপস্থিত করলেন।…নিরাসক্ত নন, নিষ্ঠুর তান্ত্রিক তিনি।

কাহিনি সংক্ষেপ

‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ বইয়ে মোট আটটি গল্প সংকলিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’, ‘পরবাসী’, ‘সারাদপুর’, ‘অন্তর্গত নিষাদ’, ‘মারী’, ‘উটপাখি’, ‘সুখের সন্ধানে’ ও ‘আমৃত্যু আজীবন’। এসব গল্পে হাসান আজিজুল হক জীবন ও সমাজকে ছেঁকে দেখেছেন।

‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ গল্পে ইনাম, সুহাস ও ফেকু নামের তিন বেকার সহচরের অপকর্ম আর জীবনযাপনের ফিরিস্তি দেওয়া হয়েছে। এসব তরুণ এক তরুণী রুকুর কাছে যান। এই রুকু মূলত দেশভাগের শিকার উদ্বাস্তু এক প্রবীণের আত্মজা। ঘরোয়াভাবে দেহ ব্যবসায় কন্যাকে কাজে লাগিয়ে ওই প্রবীণের সংসার চলে।

আরও পড়ুন :  বাংলা রচনা ইন্টারনেট

ওই প্রবীণ জেনেবুঝে আত্মজার কাজে সহায়তা করলেও গ্লানি আর দুঃখে করবী গাছের বীজ খেয়ে আত্মহনন কামনা করেন। দেশভাগের করুণ পরিণতিতে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে রচিত হয়েছে ‘পরবাসী’ গল্প। বশির আর ওয়াজদ্দি এ গল্পের মূল চরিত্র। দাঙ্গায় আপনজন হারানোর নির্মম দুর্ভোগ সইতে হয়েছে এসব চরিত্রের। অন্যদিকে এক লেখককে কেন্দ্র করে হাসান আজিজুল হক লিখেছেন ‘উটপাখি’ গল্প।

‘অন্তর্গত নিষাদ’ গল্পে একজন কেরানির জীবনসংগ্রামের চিত্র উঠে এসেছে। ‘মারী’ গল্পের বিষয়বস্তুও দাঙ্গা। একইভাবে প্রতিটি গল্পে মূলত মানুষের জীবনের গল্পই দারুণ মুনশিয়ানায় হাসান আজিজুল হক উপস্থাপন করেছেন। অনুসন্ধানী পর্যবেক্ষণশক্তি দিয়ে লেখক তাঁর প্রতিটি চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছেন। তাই এসব গল্প পাঠে জীবনের বাস্তবতার স্বাদ উপলব্ধি করা যায়।

আরও পড়ুন :  রম্যলেখক আতাউর রহমান: বাস্তবতার চিত্রকল্প

প্রশ্ন-উত্তর

১. হাসান আজিজুল হকের জন্ম কবে ও কোথায় ?
উত্তর : ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের যবগ্রামে।

২. হাসান আজিজুল হকের সক্রিয় সাহিত্যচর্চা করে থেকে শুরু?
উত্তর : ১৯৬০ সালে।

৩. হাসান আজিজুল হক কী কী পুরস্কার পেয়েছিলেন?
উত্তর : স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার, আনন্দ সাহিত্য পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।

৪. হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম লিখুন।
উত্তর: ‘আগুনপাখি’, ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’, ‘নামহীন গোত্রহীন’, ‘শিউলি’, ‘শামুক’, ‘সমুদ্রের স্বপ্ন’, ‘শীতের অরণ্য’, ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘পাতালে হাসপাতালে’, ‘আমরা অপেক্ষা করছি’, ‘রোদে যাবো’, ‘মা-মেয়ের সংসার’, ‘কথাসাহিত্যের কথকতা’, ‘ছড়ানো ছিটানো’, ‘ফিরে যাই ফিরে আসি’, ‘উঁকি দিয়ে দিগন্ত’, ‘টান’, ‘লাল ঘোড়া আমি’, ‘ফুটবল থেকে সাবধান’, চালচিত্রের খুঁটিনাটি’, ‘করতলে ছিন্নমাথা’, ‘সক্রেটিস’ ও ‘লন্ডন ডায়রি’ উল্লেখযোগ্য।

৫. হাসান আজিজুল হকের মৃত্যু কবে ও কোথায়?
উত্তর : ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর, রাজশাহীতে।

Leave a Reply