জানাজার নামাজের নিয়ম, দোয়া ও ফজিলত

জানাজার নামাজ ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মৃত মুসলমানের জন্য দোয়া করার বিশেষ পদ্ধতি। এটি ফরজ কিফায়া, অর্থাৎ কিছু লোক আদায় করলে বাকিদের দায়িত্বমুক্ত করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের জানাজায় উপস্থিত হয়ে নামাজ পড়ে, তার জন্য এক কিরাত সওয়াব রয়েছে। আর যে ব্যক্তি দাফন পর্যন্ত সঙ্গে থাকে, তার জন্য দুই কিরাত সওয়াব রয়েছে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩২৫)
জানাজার নামাজের নিয়ম
জানাজার নামাজের চারটি তাকবির রয়েছে এবং এতে কোনো রুকু বা সিজদা নেই। নিচে বিস্তারিত নিয়ম দেওয়া হলো:
১. নিয়ত করা
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ عَلَى هَذَا الْمَيِّتِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ لِلَّهِ تَعَالَى
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া আলা হাজাল মাইয়িতি ফারদাল কিফায়াতি লিল্লাহি তা’আলা।
অর্থ: আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ফরজ কিফায়া হিসেবে এই মৃত ব্যক্তির জন্য জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম।
২. প্রথম তাকবির ও সানা পাঠ
প্রথম তাকবির বলে “সুবহানাকাল্লাহুম্মা…” দোয়া পাঠ করতে হয়:
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা, ওয়ালা ইলাহা গাইরুক।
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র, তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মহিমা মহান, তোমাকে ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।
৩. দ্বিতীয় তাকবির ও দরুদ শরিফ পাঠ
দ্বিতীয় তাকবির বলার পর দরুদ শরিফ পড়তে হয়:
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর রহমত বর্ষণ কর, যেমন তুমি ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর রহমত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসার যোগ্য ও মহিমান্বিত।
আরো পড়ুন : খাদ্য গ্রহণের উপর ইসলাম কি বলে: ব্যাখ্যামূলক বিশ্লেষণ
৪. তৃতীয় তাকবির ও দোয়া পাঠ
তৃতীয় তাকবিরের পর মৃত ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের দোয়া পড়তে হয়:
মৃত ব্যক্তি | আরবি দোয়া | বাংলা অর্থ |
---|---|---|
পুরুষ | اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَعَافِهِ وَاعْفُ عَنْهُ | হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা কর, দয়া কর, তাকে নিরাপদ রাখ এবং তার ভুলত্রুটি ক্ষমা কর। |
নারী | اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهَا وَارْحَمْهَا وَعَافِهَا وَاعْفُ عَنْهَا | হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা কর, দয়া কর, তাকে নিরাপদ রাখ এবং তার ভুলত্রুটি ক্ষমা কর। |
শিশু | اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ ذُخْرًا لِوَالِدَيْهِ وَفَرَطًا وَشَفِيعًا لَهُمَا | হে আল্লাহ! তাকে তার বাবা-মায়ের জন্য পুণ্যের সঞ্চয়, অগ্রগামী ও সুপারিশকারী কর। |
৫. চতুর্থ তাকবির ও সালাম
চতুর্থ তাকবির বলার পর ডান ও বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে জানাজার নামাজ শেষ করতে হয়:
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
অর্থ: তোমাদের ওপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
জানাজার নামাজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক
- জানাজার নামাজে রুকু ও সিজদা নেই।
- নামাজ আদায়ের জন্য অজু ও পবিত্র পোশাক থাকা জরুরি।
- মৃত ব্যক্তি পুরুষ হলে “لَهُ”, নারী হলে “لَهَا” ব্যবহার করতে হবে।
- জানাজার নামাজ মসজিদে আদায় করা সুন্নাত নয়, খোলা জায়গায় পড়াই উত্তম।
- জানাজার নামাজ দাঁড়িয়ে পড়তে হয় এবং দ্রুত পড়া উত্তম।
- জানাজার নামাজের সময় কাতার যত লম্বা হয়, ততই বেশি ফজিলত পাওয়া যায়।
- মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা মুমিনদের দায়িত্ব, এতে দোয়া সংক্ষেপে ও আন্তরিকভাবে পড়তে হবে।
- জানাজার নামাজের পর মৃতের জন্য মাগফিরাত কামনা করা এবং তার পরিবারের প্রতি সহানুভূতি দেখানো উত্তম আমল।
উপসংহার
জানাজার নামাজ একজন মৃত মুসলিমের জন্য সর্বশেষ সম্মানসূচক দোয়া। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল, যার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাত চাওয়া হয়। আমাদের উচিত যত বেশি সম্ভব জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করা এবং মৃতদের জন্য দোয়া করা।