অন্যান্য

ধ্বনি ও বর্ণ | বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি নবম-দশম শ্রেণি

ধ্বনি ও বর্ণ

ভাষার ক্ষুদ্রতম একককে ধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় ৩৭টি মৌলিক ধ্বনি রয়েছে। এই ধ্বনিগুলােকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়: স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি। মৌলিক স্বরধ্বনি ৭টি: [ই], [এ], [অ্যা], [আ], [অ], [ও], উ]; এবং মৌলিক ব্যঞ্জনধ্বনি ৩০টি: [প], [ফ], [ব], [ভ], [থ], [দ], [ধ], [ট], [ঠ], [ড], [ঢ], [চ], [ছ], [জ], [ঝ], [ক], [খ], [গ], [ঘ], [ম],[ন],[ঙ] [স্], [শ], [হ্], [ল], [র], [ড়], [ঢ়]। এখানে তৃতীয় বন্ধনী দিয়ে ধ্বনি বা উচ্চারণ নির্দেশ করা হয়েছে। যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে বায়ু মুখগহ্বরের কোথাও বাধা পায় না, সেগুলােকে স্বরধ্বনি বলে। অন্যদিকে যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে বায়ু মুখের বাইরে বের হওয়ার আগে বাম্প্রত্যঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বাধা পায়, সেগুলােকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। ধ্বনির প্রতীককে বলা হয় বর্ণ। এই বর্ণ কানে শােনার বিষয়কে চোখে দেখার বিষয়ে পরিণত করে। ভাষার সবগুলাে বর্ণকে একত্রে বলা হয় বর্ণমালা। ধ্বনির বিভাজন অনুযায়ী বর্ণমালাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। স্বরধ্বনির প্রতীক স্বরবর্ণ। ব্যঞ্জনধ্বনির প্রতীক ব্যঞ্জনবর্ণ। বাংলা বর্ণমালায় মূল বর্ণের সংখ্যা ৫০টি। তবে মূল বর্ণের পাশাপাশি বাংলা বর্ণমালায় রয়েছে নানা ধরনের কারবর্ণ, অনুবর্ণ, যুক্তবর্ণ ও সংখ্যাবর্ণ। মূল বর্ণগুলাে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণে বিভক্ত।

আরো পড়ুন : ভাষা ও বাংলা ভাষা 

স্বরবর্ণ: অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ = ১১টি
ব্যঞ্জনবর্ণ:
ক খ গ ঘ ঙ
চ ছ জ ঝ ঞ
ট ঠ ড ঢ ণ
ত থ দ ধ ন
প ফ ব ভ ম
য র ল
শ ষ স হ
ড় ঢ় য়
ৎঃ = ৩৯টি

কারবর্ণ

স্বরবর্ণের মােট ১০টি সংক্ষিপ্ত রূপ রয়েছে, এগুলাের নাম কারবর্ণ: া,্ি,ী.ু,ূ,ৃ,্ে,াে,ৌ। কারবর্ণের স্বতন্ত্র ব্যবহার নেই। এগুলাে ব্যঞ্জনবর্ণের আগে, পরে, উপরে, নিচে বা উভয় দিকে যুক্ত হয়। কোনাে ব্যঞ্জনের সঙ্গে কারবর্ণ বা হসৃচিহ্ন না থাকলে ব্যঞ্জনটির সঙ্গে একটি অ আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন

অনুবর্ণ

ব্যঞ্জনবর্ণের বিকল্প রূপের নাম অনুবর্ণ। অনুবর্ণের মধ্যে রয়েছে ফলা, রেফ ও বর্ণসংক্ষেপ।

ফলা: ব্যঞ্জনবর্ণের কিছু সংক্ষিপ্ত রূপ অন্য ব্যঞ্জনের নিচে অথবা ডান পাশে ঝুলে থাকে, সেগুলােকে ফলা বলে, যেমন – ন-ফলা (,), ব-ফলা (), ম-ফলা (J), য-ফলা (), র ফলা (এ), ল-ফলা )।

আরো পড়ুন : ব্যাকরণ ও বাংলা ব্যাকরণ

রেফ: র-এর একটি অনুবর্ণ রেফ (‘)। বর্ণসংক্ষেপ: যুক্তবর্ণ লিখতে অনেক সময়ে বর্ণকে সংক্ষেপ করার প্রয়ােজন হয়। এগুলাে বর্ণসংক্ষেপ।
যেমন – ও, দ, ন, ম স স। ত্যাদি। এছাড়া ও বর্ণটি ত-এর একটি বর্ণসংক্ষেপ, যা বাংলা বর্ণমালায় স্বতন্ত্র বর্ণ হিসেবে স্বীকৃত।

যুক্তবর্ণ

একাধিক বর্ণ যুক্ত হয়ে যুক্তবর্ণ তৈরি হয়। যুক্ত হওয়া বর্ণগুলােকে দেখে কখনাে সহজে চেনা যায়, কখনাে সহজে চেনা যায় না। এদিক দিয়ে যুক্তবর্ণ দুই রকম: স্বচ্ছ ও অস্বচ্ছ। স্বচ্ছ যুক্তবর্ণ: ক, জ্ঞ, জ্ব, ঞ, জ্ঞ, ট, ণ্ঠ, দ, দ্ব, দ্ম, ঠ, ড, ন্স, স্ট, , , , জ, ব্দ, ফ, ল্ক,
ল্প, , , , , , , , ষ্ঠ, স্ফ, খ, স্ট, স্ফ ইত্যাদি। অস্বচ্ছ যুক্তবর্ণ: ক্ত (কৃ+ত), ক্স (কৃ+ম), ক্র (কৃ+র), ক্ষ (ক+ষ), ক্ষ্ম (ক++ম), ক্স (ক+স),
গু (গ+উ), গ্ধ (গ+ধ), ঙ্ক (+ক), ঙ্গ (ঙ+গ), জ্ঞ (জ+), ঞ্চ (ঞ+চ), ঞ্ছ (ঞ+ছ), ঞ্জ (ঞ+জ), উ (ট+ট), ও (+ত), খ (+থ), এ (ত্র), ও (ণ+ড), দ্ধ। (দ+ধ), ন্ধ (+ধ), ৰূ (বৃ+ধ), ভ ( র), জ ( +উ), রু (+উ), রূ (+উ),
শু (শ+উ), ষ্ণ (+ণ), হু (হ+উ), হৃ (হ+ঋ), হ্ন (হ+ন), হ্ম (হ্ম ) ইত্যাদি।

সংখ্যাবর্ণ

বাংলা ভাষায় সংখ্যা নির্দেশের জন্য দশটি সংখ্যাবর্ণ রয়েছে। যথা: ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ০।

অনুশীলনী

১. বাংলায় মৌলিক স্বরধ্বনি কয়টি?
ক. ৬
খ. ৭
গ. ১০
ঘ. ১১

২. কোন ধ্বনিগুলাে উচ্চারণের সময়ে মুখগহ্বরের কোথাও বাধা পায় না?
ক. স্বরধ্বনি
খ. ব্যঞ্জনধ্বনি
গ. মৌলিকধ্বনি
ঘ. যুগ্মধ্বনি

৩. ধ্বনির প্রতীককে বলা হয় –
ক. শব্দ
খ. বাক্য
গ. বর্ণ
ঘ. ভাষা

৪. ব্যঞ্জনের সঙ্গে কারবর্ণ বা হসৃচিহ্ন না থাকলে কোন ধ্বনি আছে বলে ধরে নেওয়া হয়?
ক. [অ]
খ. [আ]
গ. [ই]
ঘ. [ড]

৫. ষ্ণ যুক্তবর্ণটি কোন কোন বর্ণ দিয়ে তৈরি?
ক. ঞ ও ষ
খ. ষ ও ঞ
গ. ষ ও ণ
ঘ, ণ ও ষ

৬. স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে বলা হয় –
ক, কারবর্ণ
খ. অনুবর্ণ
গ. ফলা
ঘ. রেফ

৭. ব্যঞ্জনবর্ণের বিকল্প রূপের নাম –
ক. কারবর্ণ
খ. অনুবর্ণ
গ. ফলা
ঘ. রেফ

৮. নিচের কোন জোড়টি যুক্তবর্ণের রূপভেদকে প্রকাশ করে?
ক. স্বচ্ছ ও অস্বচ্ছ
খ. কার ও ফলা
গ. স্বচ্ছ ও যুক্ত
ঘ, অস্বচ্ছ ও উন্মুক্ত

৯. বাংলা কারবর্ণের সংখ্যা –
ক. ৯
খ. ১০
গ. ১১
ঘ. ১২

১০. বাংলা সংখ্যাবর্ণ কয়টি?
ক. ৭
খ. ৮
গ. ১০
ঘ. ১১

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button