বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বাঙালি জাতির ইতিহাসে অন্যতম উল্লেখযােগ্য ঘটনা । ছাত্রসমাজের ১১ দফা এবং আওয়ামী লীগের ৬ দফার ভিত্তিতে শিক্ষার সুযােগ-সুবিধা বৃদ্ধি, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন, জরুরি আইন প্রত্যাহার প্রভৃতি দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হয়।
কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ছাত্রসমাজের ১১ দফা এবং জনতার ৬ দফা দাবিকে রাষ্ট্রবিরােধী দাবি বলে ঘােষণা করে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা সাজিয়ে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে। এর ফলে সমগ্র বাংলাদেশে ছাত্র-জনতা আন্দোলনের রুদ্ররােষে ফেটে পড়ে এবং ধীরে ধীরে এ আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। ছাত্র-জনতার ১১ দফা ও আওয়ামী লীগের ৬ দফা দাবি উপেক্ষিত হলে ১৯৬৯ সালে দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন শুরু হয়।
সরকার এ আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা ও ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্র-জনতা একে অমান্য করে রাস্তায় নেমে পড়লে শুরু হয় প্রচণ্ড আন্দোলন ও বিক্ষোভ মিছিল। এ সময়ে সরকারি নির্দেশে মিছিলের ওপর গুলি চালালে আসাদুজ্জামানসহ নিহত হয় বহু সাধারণ মানুষ।
ফলে আন্দোলন আরাে তীব্র আকার ধারণ করে এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এ মৌলিক অধিকার আদায়ের শপথ নিয়ে ৮ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে ‘গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। এমনকি পূর্ব পাকিস্তানের মতাে পশ্চিম পাকিস্তানেও আইয়ুববিরােধী আন্দোলন গড়ে উঠে। ফলে দেশের সর্বত্র চলতে থাকে আইয়ুববিরােধী গণআন্দোলন।
এভাবে প্রচণ্ড আন্দোলনের ফলে আইয়ুব খান বাধ্য হয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে আইয়ুব খান এক গােলটেবিল বৈঠক আহ্বান করেন। শেখ মুজিব বৈঠকে। যােগ দেন; কিন্তু পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি না মানায় তিনি এ বৈঠক বর্জন করেন।
ফলে পুনরায় শুরু হয় তীব্র আন্দোলন ও গণবিক্ষোভ। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ক্রমাবনতি রােধ করতে ব্যর্থ হয়ে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ সকল ক্ষমতা প্রধান সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের হাতে অর্পণ করে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। দ্বিতীয়বার দেশে জারি হয় সামরিক আইন। এভাবে ‘৬৯ সালে গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয় এবং এর পথ ধরেই ‘৭১ সালে অর্জিত হয় বাংলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।