ধর্ম

তারাবির নামাজের নিয়ম ও ফজিলত: পূর্ণাঙ্গ গাইড (বাংলা অর্থ ও আরবি উচ্চারণসহ)

রমজান মাস মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ রহমতের মাস। এই মাসে ইবাদতের পরিমাণ ও গুরুত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। তারাবির নামাজ রমজান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা রাতে এশার নামাজের পর আদায় করা হয়। এটি সুন্নাতে মুআক্কাদা (শক্তভাবে পালনীয় সুন্নত) এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এই নামাজ পড়েছেন ও অন্যদের পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তারাবির নামাজ মূলত কিয়ামুল লাইল বা রাতের নামাজের একটি বিশেষ অংশ।


তারাবির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
উচ্চারণ: “মান ক্বামা রমাদ্বানা ঈমানান ওয়া ইহতিসাবান গুফিরা লাহু মা তাকাদ্দামা মিন দম্ভিহি।”
বাংলা অর্থ: “যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশা নিয়ে রমজানে কিয়াম (তারাবি) করে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (বুখারি: ৩৭)

তারাবির নামাজ আদায় করলে—

  • আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়।
  • গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
  • আত্মশুদ্ধি ঘটে।
  • ঈমান মজবুত হয়।
  • জান্নাতের পথ সুগম হয়।

তারাবির নামাজের নিয়ম

১. তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা

তারাবির নামাজ সাধারণত ২০ রাকাত হয়ে থাকে। তবে ৮ রাকাত পড়লেও তা যথেষ্ট। তবে সাহাবায়ে কেরাম ও ইসলামের অনেক বড় বড় আলেম ২০ রাকাত পড়েছেন এবং এটি অধিক ফজিলতপূর্ণ বলে গণ্য হয়।

তারাবির রাকাত সংখ্যাসুন্নাহ অনুযায়ী
৮ রাকাতজায়েজ (যথেষ্ট)
২০ রাকাতঅধিক ফজিলতপূর্ণ

২. তারাবির নামাজের নিয়ত

উচ্চারণ: “উসাল্লি সুন্নাতাত তারাবীহি রক’আতাইনি লিল্লাহি তা’আলা।”
বাংলা অর্থ: “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ত করছি।”


৩. তারাবির নামাজের রাকাত পড়ার পদ্ধতি

১. নিয়ত করা:

নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে তারাবির নামাজের নিয়ত করতে হবে। মুখে বলা জরুরি নয়, তবে বলা যায়:
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ سُنَّةَ التَّرَاوِيحِ رَكْعَتَيْنِ لِلَّهِ تَعَالَى
উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া সুন্নাতাত্তারাওয়ীহি রাকআতাইনি লিল্লাহি তা‘আলা।”
অর্থ: আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দুই রাকাত তারাবির সুন্নত নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম।


২. তাকবিরে তাহরিমা:

নিয়তের পর “আল্লাহু আকবার” বলে হাত বাঁধতে হবে।


৩. সানা পড়া:

তারপর “সুবহানাকা” পড়তে হবে:
📖 سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلٰهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ: “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তা’আলা যাদ্দুকা, ওয়ালা ইলাহা গাইরুকা।”
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করছি, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মহিমা মহান, এবং তুমি ছাড়া কোনো সত্যিকারের ইলাহ নেই।


৪. সূরা ফাতিহা পড়া:

📖 الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ۝ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ۝ مٰلِكِ يَوْمِ الدِّينِ ۝ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ۝ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ ۝ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ ۝ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ ۝
উচ্চারণ:
“আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল ‘আলামীন। আর-রাহমানির রাহীম। মালিকি ইয়াওমিদ্দীন। ইয়া-কানা’বুদু ওয়া ইয়া-কানাস্তাঈন। ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম। সিরাতাল্লাযিনা আন’আমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দাল্লীন। আমীন।”
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। দয়াময়, পরম করুণাময়। বিচার দিবসের মালিক। আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করো—তাদের পথে যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছো, যারা তোমার ক্রোধের শিকার হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।


৫. অন্য কোনো সূরা পড়া (উদাহরণস্বরূপ সূরা ইখলাস):

📖 قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ۝ اللَّهُ الصَّمَدُ ۝ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ۝ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ ۝
উচ্চারণ:
“কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুস সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ। ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।”
অর্থ: বলুন, তিনি আল্লাহ, এক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি, কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি। এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।


৬. রুকু:

তারপর “আল্লাহু আকবার” বলে রুকুতে যেতে হবে এবং তিনবার পড়তে হবে:
📖 سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ
উচ্চারণ: “সুবহানা রাব্বিয়াল ‘আযীম।”
অর্থ: মহিমান্বিত আমার মহান প্রতিপালক।


৭. সিজদা:

রুকু থেকে উঠে “সামি‘আ আল্লাহু লিমান হামিদাহ, রব্বানা লাকাল হামদ” বলার পর “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদায় যেতে হবে।

📖 سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى
উচ্চারণ: “সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা।”
অর্থ: মহিমান্বিত আমার সর্বোচ্চ প্রতিপালক।

প্রথম সিজদার পর বসে “রব্বিগফিরলি” বলা এবং তারপর দ্বিতীয় সিজদা করতে হবে।


৮. দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানো:

দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠে প্রথম রাকাতের মতো একইভাবে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়তে হবে।


৯. তাশাহহুদ পড়া:

📖 اَلتَّحِيَّاتُ لِلّٰهِ وَالصَّلَوٰتُ وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ، اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللّٰهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ


১০. সালাম ফেরানো:

“আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলে ডান ও বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।


তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা:

✔ সাধারণত ২০ রাকাত পড়া হয় (১০ বার দুই রাকাত করে)।
✔ কেউ যদি ৮ রাকাত পড়তে চান, তাহলে ৪ বার দুই রাকাত করে পড়তে হবে।

এভাবে পুরো তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহিহ-শুদ্ধভাবে নামাজ আদায়ের তৌফিক দান করুন। আমিন! 🤲


তারাবির নামাজের পরে বিতির

তারাবির নামাজের পর ৩ রাকাত বিতির নামাজ পড়তে হয়। বিতির নামাজ পড়ার নিয়ম:

রাকাত সংখ্যাবিতির পড়ার পদ্ধতি
৩ রাকাতপ্রথম দুই রাকাত স্বাভাবিকভাবে পড়তে হয়। তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর “সুরা ইখলাস” পড়ে, হাত তুলে কুনুত দোয়া পড়তে হয়।

আরো পড়ুন : আয়াতুল কুরসি ফজিলত: সুরক্ষা, শান্তি এবং বরকত লাভের উপায়

তারাবির নামাজের সময়সূচি

নামাজের ধরণসময়
এশার ফরজ নামাজএশার সময়ের পরে
তারাবির নামাজএশার পর থেকে শেষ রাত পর্যন্ত
বিতির নামাজতারাবির পর অথবা তাহাজ্জুদের সাথে

তারাবির নামাজের কিছু সুন্নত ও আদব

  • খুশু-খুজুর সাথে নামাজ পড়া।
  • জামাতে নামাজ আদায় করা (বেশি সওয়াব পাওয়া যায়)।
  • ধীরস্থিরভাবে কেরাত পড়া।
  • নামাজের মাঝে মুনাজাত করা।
  • ধৈর্য সহকারে পড়া এবং দীর্ঘ সময় কিয়াম করা।

তারাবির নামাজের পরে বিশেষ দোয়া

اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي فِيهِ مِنَ المُتَوَكِّلِينَ عَلَيْكَ وَاجْعَلْنِي فِيهِ مِنَ الفَائِزِينَ لَدَيْكَ وَاجْعَلْنِي فِيهِ مِنَ المُقَرَّبِينَ إِلَيْكَ بِإِحْسَانِكَ يَا غَايَةَ الطَّالِبِينَ
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মাজআলনি ফিহি মিনাল মুতোয়াক্কিলিনা আলাইকা, ওয়াজআলনি ফিহি মিনাল ফায়িজিনা লাদাইকা, ওয়াজআলনি ফিহি মিনাল মুকাররাবিনা ইলাইকা বিইহসানিকা ইয়া গায়াতাত ত্বালিবীন।”
বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাকে তোমার উপর নির্ভরশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর, আমাকে তোমার নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত কর এবং তোমার রহমতের মাধ্যমে আমাকে বিজয়ীদের অন্তর্ভুক্ত কর।”


তারাবির নামাজ সম্পর্কিত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর 


প্রশ্ন ১: তারাবির নামাজের গুরুত্ব কী?

উত্তর:

তারাবির নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে:

📖 হাদিস:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
উচ্চারণ: “মান ক্বামা রমাদ্বানা ঈমানান ওয়া ইহতিসাবান গুফিরা লাহু মা তাকাদ্দামা মিন দম্ভিহি।”
বাংলা অর্থ: “যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশা নিয়ে রমজানে কিয়াম (তারাবি) করে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।”
📚 (বুখারি: ৩৭, মুসলিম: ৭৫৯)

মূল ব্যাখ্যা:
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করা গুনাহ মাফের একটি বড় সুযোগ। এটি আত্মশুদ্ধির মাধ্যম এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়।


প্রশ্ন ২: তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা কত হওয়া উচিত?

উত্তর:

📖 হাদিস:
হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً
উচ্চারণ: “কান রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইউসাল্লী মিনাল লাইলি সালাসা আশরাতা রাক‘আত।”
বাংলা অর্থ: “রাসূলুল্লাহ (সা.) রাতে ১৩ রাকাত নামাজ পড়তেন।”
📚 (বুখারি: ৯৪৫, মুসলিম: ৭৩৮)

মূল ব্যাখ্যা:

  • রাসূলুল্লাহ (সা.) সাধারণত রাতের নামাজে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন রাকাত পড়েছেন।
  • সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীদের সময় থেকে ২০ রাকাত পড়ার প্রচলন রয়েছে।
  • ৮ রাকাতও পড়া জায়েজ, তবে অধিক ফজিলতের জন্য ২০ রাকাত উত্তম।

📖 হাদিস:
হযরত উমর (রা.) বলেন:
إِنَّ أَهْلَ زَمَانِنَا قَدْ أَجْمَعُوا عَلَى عِشْرِينَ رَكْعَةً فِي الْقِيَامِ فِي رَمَضَانَ
বাংলা অর্থ: “আমাদের সময়ে মানুষ রমজানে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়ায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।”
📚 (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৭৭৫৯)


প্রশ্ন ৩: তারাবির নামাজ ব্যক্তিগতভাবে পড়া উত্তম, নাকি জামাতে?

উত্তর:

📖 হাদিস:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে কিয়াম করে এবং শেষ পর্যন্ত স্থির থাকে, তার জন্য সারারাত নামাজ আদায় করার সওয়াব লেখা হয়।”
📚 (তিরমিজি: ৮০৬, আবু দাউদ: ১৩৭৫)

মূল ব্যাখ্যা:

  • তারাবির নামাজ জামাতে পড়া উত্তম এবং অধিক সওয়াবের কাজ।
  • তবে কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে পড়তে চায়, তাহলে তা বৈধ, কিন্তু জামাতে পড়লে অধিক পূণ্যের আশা করা যায়।

প্রশ্ন ৪: তারাবির নামাজ কি ফরজ, ওয়াজিব, নাকি সুন্নাত?

উত্তর:

📖 হাদিস:
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“আল্লাহ তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করেছেন এবং আমি তোমাদের জন্য তারাবি নামাজ সুন্নত করেছি।”
📚 (নাসাঈ: ১৬০৪)

মূল ব্যাখ্যা:

  • তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুআক্কাদা, যা রাসূল (সা.) এবং সাহাবিরা গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন।
  • এটি ফরজ বা ওয়াজিব নয়, তবে নিয়মিত আদায় করা উত্তম।

প্রশ্ন ৫: তারাবির নামাজ কি এশার নামাজের আগে পড়া যাবে?

উত্তর:

📖 কুরআন:
“নিশ্চয়ই সালাত নির্দিষ্ট সময়ে আদায়ের জন্য মুসলিমদের ওপর ফরজ করা হয়েছে।”
📚 (সূরা আন-নিসা: ৪:১০৩)

মূল ব্যাখ্যা:

  • তারাবির নামাজ শুধুমাত্র এশার নামাজের পর আদায় করা যায়।
  • এশার নামাজের আগে তারাবি পড়লে তা শুদ্ধ হবে না।

প্রশ্ন ৬: নারীরা কি মসজিদে জামাতে তারাবির নামাজ আদায় করতে পারে?

উত্তর:

📖 হাদিস:
রাসূল (সা.) বলেন:
“তাদের (নারীদের) জন্য উত্তম হচ্ছে, তারা ঘরে নামাজ আদায় করুক।”
📚 (আবু দাউদ: ৫৭০, ইবনে মাজাহ: ৫.৫৮৬)

মূল ব্যাখ্যা:

  • নারীরা চাইলে মসজিদে যেতে পারে, তবে তাদের জন্য ঘরেই তারাবি আদায় করা উত্তম
  • যদি তারা মসজিদে যায়, তাহলে যথাযথ পর্দা রক্ষা করা উচিত।

প্রশ্ন ৭: তারাবির নামাজ দ্রুত পড়া কি জায়েজ?

উত্তর:

📖 কুরআন:
“নামাজে ধীরস্থিরতা ও একাগ্রতার সঙ্গে দাড়াও।”
📚 (সূরা বাকারা: ২:২৩৮)

মূল ব্যাখ্যা:

  • দ্রুত তারাবি পড়া জায়েজ নয়।
  • কেরাত, রুকু, সিজদা ধীরস্থিরভাবে পড়তে হবে।
  • ইমামদের দায়িত্ব হচ্ছে নামাজ ধীরে পড়ানো।

প্রশ্ন ৮: তারাবির নামাজের পর বিতির নামাজ পড়া কি বাধ্যতামূলক?

উত্তর:

📖 হাদিস:
“রাত্রির শেষ নামাজ হিসেবে বিতির নামাজ আদায় করো।”
📚 (বুখারি: ৯৯৭, মুসলিম: ৭৫১)

মূল ব্যাখ্যা:

  • বিতির নামাজ সুন্নাতে মুআক্কাদা এবং তারাবির পর আদায় করা উত্তম।
  • কেউ চাইলে তাহাজ্জুদের পর বিতির পড়তে পারে।

প্রশ্ন ৯: তারাবির প্রতি দুই রাকাত পর দোয়া পড়া কি জরুরি?

উত্তর:

এটি বাধ্যতামূলক নয়, তবে পড়া জায়েজ। কুরআন-হাদিসে সরাসরি এর নির্দেশনা নেই।


প্রশ্ন ১০: যারা তারাবির নামাজ পড়তে পারে না, তারা কীভাবে সওয়াব পাবে?

উত্তর:

📖 কুরআন:
“আল্লাহ কারো উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না।”
📚 (সূরা বাকারা: ২:২৮৬)

মূল ব্যাখ্যা:

  • অসুস্থ, বৃদ্ধ বা অন্য কারণে না পড়তে পারলে আল্লাহ তাদের নিয়তের ভিত্তিতে সওয়াব দেবেন।
  • তারা ঘরে বসে জিকির, তিলাওয়াত ও দোয়া করতে পারেন।

উপসংহার

তারাবির নামাজ রমজানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এটি মানুষকে আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সাহায্য করে। তাই আমাদের উচিত এই নামাজ গুরুত্বসহকারে আদায় করা এবং সঠিক নিয়ম মেনে পড়া। আল্লাহ আমাদের সকলকে তারাবির নামাজ নিয়মিত আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

এই বিভাগ থেকে আরও পড়ুন

Back to top button