করিতে পারি না কাজ, সদা ভয়, সদা লাজ সংশয়ে সংকল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছুবলে।

করিতে পারি না কাজ, সদা ভয়, সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছু বলে।
সমাজে কিছু দুর্বল মনের মানুষ থাকে। ভয় ও সংকোচ তাদের প্রতিদিনের সঙ্গী। কথা বলতে তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে। কোনো কাজ করতে গেলেও তাদের মনে সংশয় থাকে। ফলে মনের কথাটা প্রয়োজন মতো বলা হয় না। আবার শুভ কাজটাও সঠিক সময়ে সঠিকভাবে করা হয় না।
সমাজে কিছু দুর্বল মনের মানুষ থাকে, যাদের মনে সব সময়ই সন্দেহ জাগে, কে কী মনে করবে, কে কী বলবে, কে কী সমালোচনা করবে। অর্থাৎ লোকে কী ভাববে, এ বিষয়টা নিয়েই তার যত পিছুটান। অথচ সে যা ভাবছে, যা চিন্তা করছে যা করতে যাচ্ছে তা সমাজের জন্য কল্যাণকর। মানুষ তা থেকে উপকৃত হবে। কেননা প্রতিটি মুহূর্তে শুভ চিন্তা, কল্যাণ ভাবনা, পরোপকারী কাজ তাকে তাড়া করে। সে সমাজের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে চায়। শক্তি-সামর্থ্য, অর্থ-বিত্ত তার আছে। কিন্তু উদ্যোগ নিতে গিয়েই দ্বিধা দ্বন্দ্ব, সমালোচনা-নিন্দার ভয় তাকে পিছু টানে। ফলে শুভ ও কল্যাণকর কাজটা করতে গিয়ে পন্ডশ্রম হয়। সুন্দর কথা ও সুন্দর কাজ মনের মধ্যেই থেকে যায় তা কোনো সুফল বয়ে আনতে পারে না।
প্রকৃতপক্ষে যেকোনো সুন্দর বা গঠনমূলক কথা বলতে বা শুভ কাজ করতে পিছুটান থাকা উচিত নয়। কল্যাণ, উন্নতি ও সমৃদ্ধির স্বার্থে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-ভয় বিসর্জন দিতে হয়। নিশ্চিন্ত নির্ভয়ে ও নিঃসংকোচে শুভ চিন্তা ও কল্যাণ ভাবনাকে কাজে লাগালেই উন্নতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত হয়।
এখানে “করিতে পারি না কাজ, সদা ভয়, সদা লাজ / সংশয়ে সংকল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছু বলে” এই বাণীটির ভাব সম্প্রসারণের তিনটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিচে তুলে ধরা হলো:
১. প্রথম দৃষ্টিভঙ্গি: আত্মবিশ্বাসের অভাব
এই উক্তিতে ব্যক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং নিজের কাজ করতে ভয়ের প্রকাশ ঘটেছে। সে ভাবে যে, যদি কিছু ভুল হয় বা অন্যরা সমালোচনা করে, তার সম্মান কমে যাবে। এই কারণে সে কোন কাজ শুরু করতে ভয় পায় এবং নিজের সংকল্প বা ইচ্ছা পূর্ণ করতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা অনুভব করে। এটি এমন একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে মানুষের নিজের প্রতি বিশ্বাসের অভাব থাকে এবং সে ক্রমাগত ভয় ও লজ্জায় ভোগে।
২. দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গি: সমাজের চোখে পড়ার ভয়
এখানে বলা হচ্ছে যে, ব্যক্তির কাজের প্রতি আগ্রহ বা সংকল্প চরম ভাবে ভেঙে যায়, কারণ সে ভয় পায় যে, যদি তার কাজটি সঠিক না হয় বা অন্যরা সেটি খারাপ ভাবে নেয়, তাহলে তার সম্মান ক্ষুণ্ন হবে। সমাজের বিচার এবং অন্যদের মন্তব্যের ভয় তাকে সংকল্প থেকে পিছিয়ে রাখে। এতে তার মানসিক শান্তি বিঘ্নিত হয় এবং সে সবসময় সামাজিক চাপের মধ্যে থাকে, যা তাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত করে।
৩. তৃতীয় দৃষ্টিভঙ্গি: ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও দমন
এখানে ব্যক্তির নিজের ভিতরে একটি অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্বের কথা বলা হচ্ছে, যেখানে সে নিজের ইচ্ছাকে পূর্ণ করতে চায় কিন্তু সমাজ বা অন্যদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত থাকে। সে মাঝে মাঝে সংকল্প নেয়, কিন্তু ভয় ও লজ্জার কারণে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়। এই দ্বন্দ্ব তাকে একটি অস্থির অবস্থায় রেখে দেয়, যার কারণে তার জীবনে অনেক সুযোগ হারাতে হতে পারে, কারণ সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মনের শান্তি পায় না।
এই ভাব সম্প্রসারণে মূলত ব্যক্তির মানসিক অবস্থা এবং তার দ্বিধা ও অনিশ্চয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে।