শিক্ষা

উমাইয়া খলিফাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিজেতা কে ছিলেন? মুয়াবিয়াকে প্রথম রাজা বলা হয়কেন ?

১৩৩৮ সালে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ সোনারগাঁও এর স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বাংলার একটি অংশ তখনও তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। পরবর্তীতে হাজী ইলিয়াস বাংলা ভাষাভাষী সকল অঞ্চলকে একত্রিত করে ঐক্যবদ্ধ বাংলা গঠন করেন। বাংলাকে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাক্রমণ থেকে রক্ষা করেন। সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্ৰবৰ্তন, নিজ নামে খুতৰা পাঠ ও নিজস্ব মুদ্রা চালু করে তিনি বাংলাকে সুসংহত করেন। ফলে ২০০ বছর বাংলা দিল্লির অধীনতামুক্ত ছিল।

ক. উমাইয়া খলিফাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিজেতা কে ছিলেন?
খ. মুয়াবিয়াকে প্রথম রাজা বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোন উমাইয়া খলিফার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত খলিফা কেবল একজন দক্ষ শাসকই ছিলেন না স্থাপত্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষক হিসাবেও তার খ্যাতি ছিল পাঠ্যবইয়ের আলোকে মূল্যায়ন কর।

ক. উমাইয়া খলিফাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিলেতা ছিলেন আল ওয়ালিদ।

খ. মুয়াবিয়া উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রচলন করেন, তাই তাকে আরবদের প্রথম রাজা বলা হয়।

উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা উচ্চাভিলাষী মুয়াবিয়া খিলাফত লাভের সাথে সাথেই সাধারণতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটিয়ে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন। মুয়াবিয়া হযরত ইমাম হাসান (রা)-এর সাথে স্বাক্ষরিত সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে ৬৭৬ খ্রিস্টাব্দে বসরার শাসনকর্তা মুগিরার প্ররোচনায় তার জ্যেষ্ঠপুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের পথ সুগম করেন। এজন্য মুয়াবিয়াকে আরবদের প্রথম রাজা বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত হাজী ইলিয়াসের কার্যাবলির সাথে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিকের কার্যাবলির সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

ইসলামের ইতিহাসে রাজেন্দ্র নামে পরিচিত খলিফা আব্দুল মালিক সিংহাসনে আরোহন করেই সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন। সরকারি অফিসে আরবি ভাষার প্রচলন, অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন, বহিঃশত্রুর মোকাবিলার পাশাপাশি নিজ সাম্রাজ্যে স্বাতন্ত্র সৃষ্টিতে নানা সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যেমনটি উদ্দীপকের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়।

উদ্দীপকের হাজী ইলিয়াস শাহ বাংলা ভাষাভাষী সকল অঞ্চলকে এক এক করে ঐক্যবদ্ধ বাংলা গঠন করেন। সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রবর্তন, নিজ নামে খুতবা পাঠ ও নিজস্ব মুদ্রা চালু করে তিনি বাংলাকে সুসংহত করেন। অনুরূপভাবে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক আরব জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে আঞ্চলিক ভাষাসমূহের পরিবর্তে সমগ্র দেশে অফিস আদালতে দলিলপত্রাদি আরবি ভাষায় রক্ষিত করার ঘোষণার মাধ্যমে আরবি ভাষার প্রবর্তন করেন।

তাছাড়াও আরবি বর্ণমালার উন্নতি সাধন, আরবি মুদ্রার প্রচলন, টাকশাল নির্মাণ করে শাসন ব্যবস্থাকে সুসংহত করেন। তার শাসননীতি ও সংস্কারমূলক কার্যাবলি সাম্রাজ্যকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে আব্দুল মালিকের কর্মকাণ্ডেরই প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. উক্ত খলিফা অর্থাৎ আব্দুল মালিক কেবল একজন দক্ষ শাসকই ছিলেন না স্থাপত্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও তার বেশ খ্যাতি ছিল উক্তিটি যথার্থ।

মুয়াবিয়া উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করলেও তার দুর্বল উত্তরাধিকারীদের শাসনামলের শিশু উমাইয়া খিলাফত নানা দিক থেকে সংকটের আবর্তে নিপতিত হয়েছিল। আব্দুল মালিক তার অসামান্য নৈপুণ্য দ্বারা এ সাম্রাজ্যের সংহতি বিধান করেন, সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত করেন এর সীমানা সম্প্রসারণ করেন। শুধু শাসন ক্ষেত্রে নয় স্থাপত্য শিল্পেও তিনি অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। উমাইয়া খলিফাদের মধ্যে আব্দুল মালিক ছিলেন বিদ্যান ও মার্জিত রুচিসম্মত।

তিনি স্থাপত্য শিল্পের ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। দজলা নদীর পশ্চিম তীরে সামরিক শত্রু ‘ওয়াসিত’ ও আল আকসা মসজিদ তার স্থাপত্য প্রীতির উজ্জ্বল নিদর্শন। তবে স্থাপত্য শিল্পে তার সবচেয়ে বড় কীর্তি হচ্ছে ‘কুব্বাত আল সাখরা’ নামক একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ।

প্রতিদ্বন্দ্বী খলিফা আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের শাসনাধীন মক্কার কাবা গৃহের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আব্দুল মালিক ৬৯১ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেমে মহানবি (স)-এর মিরাজের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র পাথরের ওপর অক্টাকোণাকৃতির এ স্থাপত্য কীর্তিটি নির্মাণ করে তাঁর অনুসারীদের মক্কার পরিবর্তে এখানে হজ করার নির্দেশ দেন।

সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, স্থাপত্য ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতার মাধমে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক শুধু একজন সুশাসক হিসেবে নয়, একজন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব হিসেবেও কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।

এই বিভাগ থেকে আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button