• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি
  • সামাজিকীকরণ
সামাজিকীকরণ

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

সামাজিকীকরণ

ব্যক্তির সামাজিকীকরণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা

জনগণের কাছে সংবাদ, মতামত ও বিনোদন পরিবেশন করা হয় যেসব মাধ্যমে তাকেই বলা হয় গণমাধ্যম। যেমন- সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র। আর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলতে বোঝায় সেই প্রযুক্তি যার সাহায্যে তথ্য সংরক্ষণ ও তা ব্যবহার করা যায়। যেমন ইন্টারনেট, ফোন প্রভৃতি। গণমাধ্যম এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যক্তির সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আজকের দিনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এর গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে।

সংবাদপত্র: সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে সংবাদপত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সংবাদপত্র জনশিক্ষার একটি প্রধান মাধ্যম। আপন সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে তা মানুষের মনের সংকীর্ণতা দূর করে। তাদের মধ্যে পারস্পরিক সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও বিশ্বজনীনতার বোধ সৃষ্টি করে।

বেতার বা রেডিয়ো: বেতার কেবল সংবাদই পরিবেশন করে না, শিক্ষা ও বিনোদনমূলক নানা অনুষ্ঠানও প্রচার করে। এর ফলে গণসচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং মানুষের মধ্যে সংস্কৃতিবোধ সৃষ্টি হয়।

টেলিভিশন: আজকের দিনে সারা পৃথিবীতেই টেলিভিশন সবচেয়ে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় গণমাধ্যম। মানুষের চিন্তাভাবনা ও জীবনযাপনকে এটি নানাভাবে প্রভাবিত করে। টেলিভিশন বিনোদন এবং তথ্য ও শিক্ষামূলক নানা ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করে নাগরিকদের আনন্দ ও শিক্ষা দেয়। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের উপর টেলিভিশনের প্রভাব খুব বেশি। এই প্রভাব ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই রকমই হতে পারে। টেলিভিশনে যদি বেশি করে আকর্ষণীয় শিক্ষা ও তথ্যমূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় তবে তা মানুষকে আলোকিত করে তুলতে পারে। আপন দেশ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে নবীন প্রজন্মের মানুষকে পরিচিত করে তোলার মাধ্যমে টেলিভিশন তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে পারে। এর ফলে সামাজিকীকরণের কাজটি সহজ হয়। অন্যদিকে টেলিভিশনের মিথ্যাচার বা সহিংসতার চিত্রায়ণ দেখলে সমাজের বিশেষ করে শিশু-কিশোর মনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত বা রাত জেগে টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখার ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হয়।

চলচ্চিত্র: সুস্থ, রুচিশীল ও শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র মানুষকে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের মধ্যে মূল্যবোধ, মানবিকতা ও সহমর্মিতার বোধ জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে সামাজিকীকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সামাজিকীকরণে সহায়তা করার পাশাপাশি মিথ্যা তথ্য বা সহিংসতা দেখালে অপরাধ প্রবণতা ও বিশৃঙ্খলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব

ইন্টারনেট প্রযুক্তি বর্তমানে দেশ বা দেশের বাইরে একজনের সঙ্গে অন্যজনের যোগাযোগকে খুবই সহজ করে দিয়েছে। আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ভাববিনিময়, পরস্পরের খোঁজখবর নেওয়া কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষের সঙ্গে পণ্যবিনিময় সংক্রান্ত আলোচনা, চুক্তি ইত্যাদি এখন ঘরে বসে অল্প সময়েই করা যায়। কিছুদিন আগেও যা ভাবা যেত না। এভাবে ব্যক্তির সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ইলেক্ট্রনিক মেইল: ই-মেইলের সঙ্গে আমরা সবাই আজকাল পরিচিত। ই-মেইল হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক মেইল এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এর মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে ও বিনা খরচে দেশে-বিদেশে চিঠি ও তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। ই-মেইল পৃথিবীব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। ব্যক্তির সামাজিকীকরণের মাধ্যমে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে বর্তমানে ই-মেইলের কোনো বিকল্প নেই।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব: যেকোনো বিষয় সম্পর্কে এই তথ্যসম্ভার বা জালে সব রকম তথ্য পাওয়া যায়। ফলে শহরের একমাথা থেকে আরেক মাথায় পৌঁছানোর মানচিত্র থেকে শুরু করে কোথায় কোন জিনিস কত দামে পাওয়া যায় বা আজ কোথায় কী ঘটছে অথবা আবহাওয়া কেমন কিংবা এনসাইক্লোপিডিয়া সুদ্ধ দুনিয়ার তথ্যভাণ্ডার আজ www এর দুনিয়ায় উন্মুক্ত। যা মানুষের শিক্ষা ও সামাজিকীকরণকে ব্যাপক প্রভাবিত করছে।

ইলেক্ট্রনিক কমার্স: ইলেক্ট্রনিক কমার্সকে সংক্ষেপে বলে ই-কমার্স। এ পদ্ধতিতে অনলাইনে ক্রেতা- বিক্রেতার মধ্যে পণ্য লেন-দেন করা যায়।

ফেসবুক ও টুইটার: ফেসবুক ও টুইটারের সাহায্যে খুব সহজে দেশে বা বিদেশে যে কোনো মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি এবং মতামত ও ছবি বিনিময় করা যায়। আধুনিক বিশ্বে এটি সামাজিক যোগাযোগের একটি কার্যকর মাধ্যম হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। আর দিন দিন এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিজ্ঞানের অন্য অনেক আবিষ্কারের মতো ইন্টারনেট, ফেসবুক ও টুইটারেরও কিছু মন্দ বা নেতিবাচক দিক আছে। মানুষের হাতে এগুলোর অপব্যবহার ব্যক্তি ও সমাজ দুইয়ের জন্যই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। আজকাল প্রায়ই তরুণ সমাজের উপর ইন্টারনেট ও ফেসবুকের নেতিবাচক প্রভাবের কথা শোনা যায়। এ বিষয়ে আমাদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ