• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি
  • বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী
বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী

বাংলাদেশের চাকমা, মারমা, সাঁওতাল, রাখাইন নৃগোষ্ঠীর সাথে বাঙালি সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ও আদান-প্রদান

বাংলাদেশের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসেছে এবং সেই সকল সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান গ্রহণ করেছে। এক সংস্কৃতির সাথে অন্য সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানের বিনিময়ের ফলে তৈরি হয় সংস্কৃতির সংমিশ্রণ যা মানুষে-মানুষে সাংস্কৃতিক আন্তঃসম্পর্কের ভিত রচনা করে। এই আন্তঃসম্পর্ক যতটা ঘনিষ্ঠ এবং স্থায়ী হবে ততই বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সুষম যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীসমূহ বহুকাল থেকে বাঙালিদের সাথে এই ভূখণ্ডে বসবাস করে আসছে। জীবনের প্রয়োজনে এসব নৃগোষ্ঠীসমূহ যেমন বাঙালিদের অনেক কার্যাবলি গ্রহণ করেছে তেমনি বাঙালিরাও এসব নৃগোষ্ঠীসমূহের সংস্কৃতির অনেক উপাদান গ্রহণ করেছে। ফলে সকলের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে যা বাংলাদেশকে একটি বহুসংস্কৃতির দেশ হিসেবে বিশ্বে তুলে ধরেছে।

ভাষা

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দ কুড়ি, গণ্ডা, গণ, গোলমাল, হৈ-চৈ, আবোল-তাবোল, টা-টি, ঠন-ঠন, কন-কন, ভোঁ-ভোঁ প্রভৃতি বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর শব্দভাণ্ডার থেকে এসেছে। এছাড়া লাঙল, জোয়াল, টেকি, কুলা, মই, দড়ি, কান্তে, পাঁচনি, নিড়ানি, হাল, পাল, দাঁড়, লগি, বৈঠা, বাতা, মাছ ধরার উপকরণ- পলো, ডুলা, কোচ, চাঁই, বড়শি ইত্যাদি উপকরণগুলো নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি থেকে এসেছে। ভাষাতত্ত্ববিদগণের গবেষণা থেকে জানা যায় যে, চাকমা ভাষা বাংলা, পালি, ওড়িয়া এবং অহমিয়া প্রভৃতি ভাষার শব্দের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত ও সাদৃশ্যপূর্ণ।

উৎসব

নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য পালিত পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃগোষ্ঠীদের বৈসাবি বা বিজু আর বাঙালির পহেলা বৈশাখ আজ একই বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। নতুন ধান মাড়াইয়ে বাঙালির নবান্ন আর গারো নৃগোষ্ঠীর ওয়ানগালা একই সূত্রে গ্রোথিত।

খেলাধুলায়

বাংলাদেশের বিভিন্ন খেলাধুলায় ভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের জাতীয় মহিলা ফুটবল ও হকি দলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃগোষ্ঠীর নারী খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নৃগোষ্ঠীর সাথে বাঙালিদের সংমিশ্রণ ও বিনিময়কেই তুলে ধরে।

অর্থনীতি

বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষদের উৎপাদিত শস্য ও দ্রব্যাদি সারা দেশের মানুষের প্রয়োজন মিটাচ্ছে। খাসিয়াদের পান, খাসিয়া ও মণিপুরিদের কমলা, পাহাড়ের মসলা, উত্তরবঙ্গের ধান, গারোদের আনারস সবার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অবদান রাখছে জাতীয় অর্থনীতিতে। সিলেটের মণিপুরিদের উৎপাদিত মণিপুরি শাড়ি ও শাল আজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে যা আমাদের বৈদেশিক আয়ের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করছে।

সংস্কৃতিতে

বর্তমানে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক-পরিচ্ছদ, অলঙ্কার এবং খাদ্যাভাসে বাঙালিদের পোশাক (শার্ট, প্যান্ট, থ্রিপিস), অলঙ্কার (ইমিটেশন) এবং খাদ্যাভ্যাস (ভাত, মাছ, কোমল পানীয়) ইত্যাদি নিজেদের জীবনে ধারণ করছে। মণিপুরিদের নাচ সকলের নিকট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তাছাড়া সাঁওতালদের ঝুমুর নাচ, চাকমাদের বাঁশ নৃত্য, ত্রিপুরাদের বোতল নাচও সকলের নিকট জনপ্রিয়। এর ফলে একে অপরের মাঝে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের আদান প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের আন্তঃসম্পর্ক আরও দৃঢ় হচ্ছে।

রাজনৈতিক জীবনে

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে এদেশের নৃগোষ্ঠীদের অবদান অবিস্মরণীয় যা ঐ নৃগোষ্ঠীগুলোর ও বাঙালিদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ও আদান-প্রদানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধে চাকমা, মারমা, মং, রাখাইন, সাঁওতাল, ওঁরাও, মালপাহাড়ি, গারোসহ আরও অনেক নৃগোষ্ঠীর মানুষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল এবং অনেকে শহিদও হয়েছেন। এভাবে ভাষার ব্যবহার, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভিন্ন নৃগোষ্ঠী ও বাঙালিরা একে অপরের সান্নিধ্যে এসে নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।

পরবর্তী

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ