• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য

মূল্যবোধ | Values

পৌরনীতির আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মূল্যবোধ (Values) মূল্যবোধ সমাজ কাঠামোর অপরিহার্য উপাদান। মানুষের আচার-আচরণ, রীতিনীতি, কার্যক্রম, দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা-চেতনা প্রভৃতি মূল্যবোধ অনুযায়ী পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। একজন আদর্শ নাগরিকের মধ্যে মূল্যবোধ বিদ্যমান থাকা উচিত। কেননা মূল্যবোধ মানুষকে উচিত-অনুচিত সম্পর্কে শিক্ষা দেয় এবং যা কিছু মন্দ তা পরিত্যাগ করে, যা কিছু ভালো তা গ্রহণের দিকে তাড়িত করে। এজন্য নাগরিক জীবনে মূল্যবোধের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মূল্যবোধ মানুষের জীবনে ঐক্য ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করে, সমাজিক জীবনকে সুদৃঢ় করে এবং ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে যথার্থ সম্পর্ক নির্ণয় করে। মূল্যবোধ সামাজিক মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। সামাজিক শৃঙ্খলা, সংহতি ও সম্প্রীতি বজায় রেখে সামাজিক উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে।

মূল্যবোধের ধারণা (Concept of values)

যেসব চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য আদর্শ মানুষের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড ও আচার-ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে তাকেই সাধারণত মূল্যবোধ বলা হয়। মূল্যবোধ সমাজের ভিত্তি। প্রত্যেক সমাজে ভালো-মন্দের একটি মানদণ্ড আছে। এই মানদণ্ডের আলোকে ভালো-মন্দ আচরণের বিচার করা হয়। মূলত মূল্যবোধ হলো রীতিনীতি, আদর্শ ও আচার-আচরণের সমষ্টি যা সমাজ জীবনকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালিত করে এবং সমাজে ঐক্য ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে। সমাজ জীবনে মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি, আদর্শ, কর্মকাণ্ড যেসব নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, সে সবের সমষ্টিকে মূল্যবোধ বলা হয়। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সামাজিক মূল্যবোধের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন। যেমন-

স্টুয়ার্ট সি. ডড (Stuart C. Dodd)-এর মতে, "সামাজিক মূল্যবোধ ঐ সব রীতিনীতির সমষ্টি যা ব্যক্তি সমাজের নিকট থেকে প্রত্যাশা করে এবং যা সমাজ ব্যক্তির নিকট থেকে লাভ করে।"

সমাজবিজ্ঞানী এম. আর. উইলিয়াম (M.R. William) বলেন, "মূল্যবোধ মানুষের ইচ্ছার একটি মানদণ্ড যার আদর্শে মানুষের ব্যবহার ও রীতিনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সমাজে মানুষের কাজের ভালো-মন্দের বিচার করা হয়।"

এইচ. ডি. স্টেইন বলেন, "জনগণ যার সম্পর্কে আগ্রহশীল, যা তারা কামনা করে, যাকে তারা অত্যাবশ্যক বলে মনে করে, যার প্রতি সকলের অগাধ শ্রদ্ধা আছে এবং যা সম্পাদনের মাধ্যমে তারা আনন্দ উপভোগ করে তাকে সামাজিক মূল্যবোধ বলে।"

এম. ডব্লিউ পাম্পফ্রে (M.W. Pumphrey)-এর মতে, "ব্যক্তি বা সামাজিক দলের প্রত্যাশিত আচার-আচরণের সুবিন্যস্ত প্রকাশই হলো মূল্যবোধ।" (Formulation of performed behaviour held by Individual or social group.)

তবে সামাজিক মূল্যবোধের সবচেয়ে সুন্দর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন নিকোলাস রেসার। তিনি বলেন, "সামাজিক মূল্যবোধ বলতে সে সব গুণাবলিকে বোঝায় যা ব্যক্তি নিজের সহকর্মীদের মধ্যে দেখে খুশি হয় এবং নিজের সমাজ, সংস্কৃতি ও পরিবেশে মূল্যবান মনে করে খুশি হয়।"

উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি, মূল্যবোধ সেই সব বিশ্বাস, আদর্শ, রীতিনীতির সমষ্টি, যা মানুষের আচার-ব্যবহার, কার্যাবলি, সিদ্ধান্ত ও দৃষ্টিভঙ্গীকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালিত করে।

বস্তুত সামাজিক মূল্যবোধ হলো সামাজিক শিষ্টাচার, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, সহানুভূতি প্রভৃতি মানবিক সুকুমার বৃত্তির সমষ্টি। তবে ক্ষেত্রবিশেষে মূল্যবোধ পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবোধ থাকতে পারে। সামাজিক পরিবর্তনের ফলে মূল্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটে।

মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of values)

সামাজিক মূল্যবোধের ধারণা বিশ্লেষণ করলে কতকগুলো বৈশিষ্ট্য মূর্ত হয়ে ওঠে। বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:

১. সামাজিক মানদণ্ড সামাজিক মূল্যবোধ মানুষের আচার-আচরণ বিচারের মানদণ্ড। মূল্যবোধের মাপকাঠিতে মানুষের কাজের ভালো-মন্দ বিচার করা হয়। মূল্যবোধ মানুষের ব্যবহার, রীতিনীতি পরিমাপ ও নিয়ন্ত্রণ করে।

২. সামাজিক সেতুবন্ধন: মূল্যবোধের চেতনা সমাজের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে। মূল্যবোধ সমাজের মানুষের আচার-আচরণ, রীতিনীতি, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদির মধ্যে যোগসূত্র ও সেতুবন্ধন রচনা করে।

৩. পরিবর্তনশীলতা: মূল্যবোধ পরিবর্তনশীল। সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মূল্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটে। কারণ মানুষের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, চাহিদা ইত্যাদি সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ মানুষের মননশীলতার ওপর মূল্যবোধ নির্ভরশীল।

৪. বিভিন্নতা: স্থান-কালভেদে মূল্যবোধ বিভিন্ন রকম হতে পারে। অর্থাৎ একেক সমাজে মূল্যবোধ একেক ধরনের। যেমন-মুসলিম সমাজের মূল্যবোধ আর খ্রিস্টান সমাজের মূল্যবোধ এক নয়। আবার হিন্দু সমাজের মূল্যবোধ এবং খ্রিস্টান সমাজের মূল্যবোধ এক নয়।

৫. নৈতিক প্রাধান্য: মূল্যবোধ আইন নয় বরং কতকগুলো রীতিনীতি, আচার-আচরণের সমষ্টি যা নৈতিকতা থেকে উৎসারিত এবং সমাজের মানুষের স্বীকৃতির ফলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়। এগুলো লঙ্ঘন করলে শাস্তির বিধান নেই তবে সামাজিক ঘৃণা কুড়াতে হয়।

৬. সমষ্টির প্রভাব: মূল্যবোধ সমাজের মানুষের সামগ্রিক ধ্যান-ধারণার সমষ্টি। এজন্য মূল্যবোধ ব্যক্তিগত আগ্রহ-অনাগ্রহকে প্রভাবিত করে না। এখানে ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা গৌণ হয়ে পড়ে বিধায় ব্যক্তি সমষ্টিগত মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়।

৭. আপেক্ষিকতা: সামাজিক মূল্যবোধ যেমন সমাজভেদে ভিন্ন হয়। তেমনি একই মূল্যবোধ সমাজভেদে ইতিবাচক ও নেতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তাই সামাজিক মূল্যবোধ একটি আপেক্ষিক প্রত্যয়।

বস্তুত ব্যক্তি ও সমষ্টির কাছে কোনটি উচিত আর কোনটি উচিত নয় তা মূল্যবোধের মানদণ্ডেই গ্রহণীয় কিংবা বর্জনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

পূর্ববর্তী

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

মূল্যবোধ | Values | পৌরনীতি ১ম পত্র - Preparation BD | Preparation