• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

ইসলাম ও ব্যক্তিজীবন- Islam and Personal Life

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইসলাম ও ব্যক্তিজীবন- Islam and Personal Life

ইসলামের বুনিয়াদি আমলসমূহের ফজিলত- Merits of Basic Actions of Islam

পৃথিবীতে মানবজাতি পাঠানোর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদত করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আমি জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমার ইবাদতের জন্য' (সুরা আয-যারিয়াত: ৫৬)। আর এই ইবাদতের মধ্যে রয়েছে পরম সুখ ও কল্যাণ। পৃথিবীতে যতদিন বাঁচতে হবে, কেবল আল্লাহর ইবাদত করার জন্যই বাঁচতে হবে, তবেই জীবন
ধন্য হবে।

ইসলামের মৌলিক বা প্রধান কতগুলো আমলকে বুনিয়াদি আমল বলা হয় । ইসলামের বুনিয়াদ পাঁচটি। মহানবি (স) বলেছেন-

بنِي الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَآنَ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولَهُ وَإِقَامِ الصَّلوةِ وَايْتَاءِ الزَّكوةِ وَالْحَجّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

অর্থ: ইসলাম পাঁচটি বুনিয়াদের (ভিত্তি) ওপর প্রতিষ্ঠিত। সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (স) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল, সালাত কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, হজ পালন করা এবং রমজানের সাওম পালন করা (বুখারি ও মুসলিম)।

ইসলামের বুনিয়াদের মধ্যে প্রথমটি হলো ইমান। এটি মানুষের অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত। বাকি চারটি ইসলামের বুনিয়াদি আমল । এছাড়া দৈনন্দিন জীবনে পালনীয় কিছু আমলও আছে । চারটি বুনিয়াদি আমলের মাধ্যমে প্রথম বুনিয়াদটি দৃঢ় হয়।

প্ৰথম বুনিয়াদি আমল: সালাত-এর ফজিলত

সালাত ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তির ওপর ফরজ। আল্লাহ বলেন,

অর্থ: নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের ওপর ফরজ (সুরা আন-নিসা: ১০৩)।

ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল ইবাদতের মধ্যে সালাত সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে অনেকবার সালাত কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
অর্থ: তোমরা সালাত কায়েম কর এবং জাকাত প্রদান কর (সুরা আল-বাকারা: ৪৩)। কুরআন মাজিদে এ বাক্যটিই বিভিন্ন সুরার অনেক স্থানে উল্লেখ রয়েছে। এ থেকে সালাতের অত্যধিক ফজিলত প্রমাণিত হয়। এছাড়া

অর্থ: 'তুমি সালাত কায়েম কর' বাক্যটিও অনেক আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন আয়াতে আরও বিভিন্ন বাক্যের মাধ্যমে সালাত কায়েমের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুমিন জীবনে বাস্তব সাফল্যের জন্য যেসব কাজ করতে হয়, সেগুলোর মধ্যে সালাত কায়েম করা অন্যতম। যারা সঠিকভাবে সালাত আদায় করে, কিয়ামতের দিন সালাত তাদের জন্য নুর হবে। মহানবি (স) বলেছেন— مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاتًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ .

অর্থ: যে ব্যক্তি সালাত সংরক্ষণ করে, কিয়ামতের দিন সালাত তার জন্য নুর (আলো), হিদায়াতের দলিল এবং মুক্তির উপায় হবে (বায়হাকি)।

কুরআন মাজিদে সঠিকভাবে সালাত আদায়কে মুমিন ব্যক্তির জীবনে সাফল্যের অন্যতম শর্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ .

অর্থ: নিশ্চয়ই সফলকাম ঐ সব মুমিন; যারা নিজেদের সালাতে বিনয়াবনত (সুরা মুমিনুন: ১-২)।

সালাত আদায় না করে প্রকৃত ইমানদার হওয়া যায় না। রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন- بَيْنَ الْكُفْرِ وَ الْإِيْمَانِ تَرْكُ الصَّلوة .

অর্থ: কুফর ও ইমানের মধ্যে পার্থক্যকারী হচ্ছে সালাত (সহিহ মুসলিম)। এর মর্মার্থ হলো, সালাত ইমানের চিহ্ন। যে ব্যক্তি সঠিকভাবে সালাত আদায় করে তার মধ্যে ইমান বিদ্যমান। যে সালাত আদায় করে না তার মধ্যে ইমানদারের বৈশিষ্ট্য নেই, বরং তার বিপরীত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। অন্য একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন- مَنْ تَرَكَ الصَّلوةَ مُتَعَمِّدًا فَقَدْ كَفَرَ .

অর্থ: যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত পরিত্যাগ করল সে যেন কুফরি করল (সহিহ ইবনে হিব্বান)। অর্থাৎ সালাতের প্রতি গুরুত্বারোপ না করা কুফরির সমতুল্য। পৃথিবীতে থাকাকালীন যারা সালাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিন তাদেরকে সিজদা করতে বলা হবে, কিন্তু তারা তা করতে পারবে না। ফলে তারা চরমভাবে অপমানিত হবে। অবশেষে তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে ।

দ্বিতীয় বুনিয়াদি আমল: জাকাত-এর ফজিলত

ইসলামের বুনিয়াদি আমলসমূহের মধ্যে সালাতের পরেই জাকাতের স্থান। কুরআন মাজিদের যত স্থানে সালাতের কথা · বলা হয়েছে তার অধিকাংশ স্থানে পাশাপাশি জাকাতের কথাও বলা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে,,,, - অর্থ: তোমরা সালাত কায়েম করো এবং জাকাত প্রদান করো (সুরা আল-বাকারা: ৪৩)। এ কথাটি কুরআন মাজিদে অনেক স্থানে উল্লেখ আছে।
সঠিকভাবে জাকাত আদায় করলে সম্পদ পবিত্র হয় এবং আল্লাহ তায়ালা গুনাহসমূহ মাফ করে দেন। আল্লাহ বলেন, لَئِنْ أَقَمْتُمُ الصَّلوةَ وَأَتَيْتُمُ الزَّكوةَ وَمَنْتُمْ بِرُسُلِي وَعَزَّرْتُمُوهُمْ وَاَقْرَضْتُمُ اللهَ قَرَضًا حَسَنًا لَّا كَفِّرَةً عَنْكُمْ

অর্থ: যদি তোমরা সালাত কায়েম করো, জাকাত প্রদান করো, আমার রাসুলগণের প্রতি ইমান আনো, তাদেরকে সম্মান করো এবং আল্লাহকে কর্জে হাসানা দাও, তাহলে আমি তোমাদের পাপসমূহ মার্জনা করব (সুরা আল-মায়িদা: ১২)।

خُذُ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُظهِرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِها .

অর্থ: তাদের সম্পদ থেকে সদকা (জাকাত) গ্রহণ করুন; এর মাধ্যমে আপনি তাদেরকে পবিত্র এবং পরিশোধিত করুন (সুরা আত-তওবা: ১০৩)।
জাকাত ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ জাকাত প্রদান না করে, তাহলে সে অবশ্যই ইমান পরিপন্থি কাজে লিপ্ত । আল্লাহ তায়ালা জাকাত প্রদান না করাকে কাফির মুশরিকদের বৈশিষ্ট্য বলে অভিহিত করেছেন। আল্লাহ বলেন- وَيْلٌ لِلْمُشْرِكِيْنَ الَّذِيْنَ لَا يُؤْتُونَ الزَّكُوةَ وَهُمْ بِالْأُخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ .

অর্থ: মুশরিকদের জন্য দুর্ভোগ অনিবার্য, যারা জাকাত দেয় না এবং তারা আখিরাতেও অবিশ্বাসী বা কাফির (সুরা হা-মীম আস-সিজদা: ৬-৭)। এ আয়াতে জাকাত প্রদান না করাকে শিরক ও কুফরের মতোই জঘন্য পাপ বলা হয়েছে ।

তৃতীয় বুনিয়াদি আমল: সাওম-এর ফজিলত

সাওম ইসলামের চতুর্থ বুনিয়াদ এবং বুনিয়াদি আমলের মধ্যে তৃতীয়। রমজানের সাওম ইমানদার ব্যক্তির ওপর ফরজ। পূর্ববর্তী উম্মতের ওপরও সাওম ফরজ ছিল। আল্লাহ বলেন- يأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ .

অর্থ: হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার (সুরা আল-বাকারা: ১৮৩)।

সাওম সাধনার মাধ্যমে মুসলিম ব্যক্তি সহজেই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে। সাওমের মধ্যে রিয়ার (লোক দেখানো মনোভাব) উপস্থিতি কম থাকে। কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য সাওম পালন করা হয় । সঠিকভাবে রমজানের সাওম পালন করলে আল্লাহ তায়ালা আগের সব গুনাহ মাফ করে দেন। মহানবি (স) বলেছেন- مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيْمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ .

অর্থ: যে ব্যক্তি ইমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রমজানের সাওম পালন করে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় (বুখারি ও মুসলিম)। সাওম তাকওয়া অর্জনের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেছেন, الصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ

অর্থ: সাওম আমার জন্য, এর প্রতিদান আমিই দেব (সহিহ বুখারি)। অর্থাৎ রোজাদার ব্যক্তি কেবল আল্লাহর ভয়েই রোজা রাখে, আল্লাহ এর জন্য অফুরন্ত পুরস্কার দেবেন।
সাওম কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য শাফায়াত করবে। রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন- الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يُشَفَعَانِ لِلْعَبْدِ .

অর্থ: সিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য (কিয়ামতের দিন) শাফায়াত করবে (বায়হাকি)।

কেউ বিনা ওজরে রমজান মাসের সাওম পালন না করলে আখিরাতে তার জন্য বিপর্যয় অনিবার্য। রাসুলুল্লাহ (স) তিন ব্যক্তির ব্যাপারে মারাত্মক বিপর্যয়ের কথা বলেছেন। তারা হলো- (ক) যে ব্যক্তি মাতাপিতার খিদমত করে না, (খ) যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও যথাযথভাবে সাওম পালনের মাধ্যমে গুনাহ মাফ করাতে পারে না, (গ) যে ব্যক্তি মুহাম্মদ-এর নাম শোনার পর 'সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম' বলে না ।

চতুর্থ বুনিয়াদি আমল: হজ-এর ফজিলত

হজ ইসলামের পঞ্চম বুনিয়াদ এবং বুনিয়াদি আমলের মধ্যে চতুর্থ। কতিপয় শর্তসাপেক্ষে মুসলমানদের জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। আল্লাহ বলেন,

অর্থ: আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাবাঘরে হজ করা সেসব মানুষের জন্য ফরজ, যারা সেই ঘর পর্যন্ত যাওয়ার সামর্থ্য রাখে (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)।
রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন,

অর্থ: হে মানবমণ্ডলী, আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ কর (সহিহ মুসলিম)। হজ উত্তম আমলসমূহের মধ্যে অন্যতম। রাসুলুল্লাহ (স) আরও বলেছে—
أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ عِنْدَ اللهِ الْإِيْمَانُ لَا شَكَ فِيْهِ وَغَزْوَةٌ لَا غُلُوْلَ فِيْهِ وَحَجٌ مَبْرُورٌ .

অর্থ: আমলসমূহের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম আমল হলো ইমান তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এরপর উত্তম আমল হলো এমন জিহাদ যার গনিমতের মাল বন্টনের আগে চুরি হয় না এবং কবুল হজ (মুসনাদে আহমাদ)। হজের মাধ্যমে মানুষের গুনাহ মাফ হয়। হজ কবুল হলে আল্লাহ তায়ালা হজকারীর সব গুনাহ মাফ করে দেন। মহানবি (স) বলেছেন, مَنْ حَجَّ الْبَيْتَ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقُ رَجَعَ كَيَوْمٍ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ

অর্থ: যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করল এবং নির্লজ্জ কথা ও ফাসেকি কাজ করল না, সে এমন নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরল যে, তার মা যেদিন তাকে জন্ম দিয়েছেন সেদিন সে যেরূপ নিষ্পাপ ছিল (সহিহ বুখারি)।

জেনে রাখো:

ইসলাম পাঁচটি বুনিয়াদের উপর প্রতিষ্ঠিত। এগুলো হলো— ১. ইমান, ২. সালাত, ৩. জাকাত, ৪. সাওম এবং ৫. হজ। এর মধ্যে প্রথমটি মানুষের অন্তরের সাথে সম্পর্কিত এবং বাকি চারটি ইসলামের বুনিয়াদি আমল ।

পূর্ববর্তীপরবর্তী