• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • জীবনের জন্য পানি
জীবনের জন্য পানি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

জীবনের জন্য পানি

বাংলাদেশে পানির উৎসে হুমকি

বাংলাদেশে যে সকল পানির উৎস রয়েছে, (নদনদী, খালবিল, হাওর, হ্রদ) তোমরা কি মনে করো সেগুলো কোনো ধরনের হুমকির মধ্যে রয়েছে? হ্যাঁ, আমাদের পানির উৎসগুলো নিশ্চিতভাবেই বেশ কয়েকটি হুমকির মুখে রয়েছে। প্রথমেই বলা যায়, জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের ফলে হুমকি। আমরা ইতোমধ্যে বৈষ্ণিক উষ্ণতার কারণে জলবায়ুর পরিবর্তনে আমাদের দেশে পানির উৎস কীভাবে হুমকির মাঝে পড়তে পারে, সেটি আলোচনা করেছি। এখন অন্য কারণগুলো আলোচনা করা যাক।

বন্যা ও মাটির ক্ষয়জনিত কারণে সৃষ্ট হুমকি

বাংলাদেশ ভৌগোলিক কারণে বন্যাপ্রবণ একটি দেশ। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি নদনদীই খরস্রোতা, যার একটি ফল হলো নদীভাঙন। নদীভাঙনের ফলে সৃষ্ট মাটি কোথায় যায় বলতে পার? এই মাটি পানির স্রোতে মিশে যায় এবং এক পর্যায়ে নদীর তলায় জমা হয় ও ধীরে ধীরে নদী ভরাট হয়ে যায়। এতে একদিকে যেমন নদীর গতিপথ পাল্টে যায়, অন্যদিকে তেমনি নদী শুকিয়ে যেতে পারে বা মরেও যেতে পারে।

তোমরা কি জানো, আমাদের দেশের অনেক নদী ইতোমধ্যেই মরে গেছে? করতোয়া, বিবিয়ানা, শাখা বরাক-এ সব নদীই এখন মরা নদী। এমনকি একসময়ের খরস্রোতা পদ্মা নদীর অবস্থাও এখন সংকটাপন্ন। পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত পাকশী ব্রিজের নিচে গরুর গাড়ি চলার দৃশ্য তোমরা অনেকেই দেখে থাকবে। এর কারণ হলো, নদী ভরাট হয়ে যাওয়া। নদী শুকিয়ে যাওয়ার অর্থই হলো পানিসম্পদ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া।

নদী দখল

আজকাল নদী দখল করে নানা রকম স্থাপনা, এমনকি আবাসিক এলাকা পর্যন্ত গড়ে তোলা হচ্ছে। এর ফলে কী ঘটছে? নদীর গতিপথ সরু হয়ে যাচ্ছে এবং পানি ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে। যে কারণে একটু ভারী বর্ষণ হলেই বন্যা হয়ে যাচ্ছে। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যাসহ বেশ কয়েকটি নদী এভাবে দখল হয়ে যাওয়ার ফলে এখন এরা প্রায় মরতে বসেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এগুলোও মরা নদীতে পরিণত হবে।

নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ

তোমরা কি অনুমান করতে পার যে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও আমাদের পানিসম্পদের জন্য একটি হুমকি হতে পারে? হ্যাঁ, আসলেও কিন্তু ঠিক তাই। পদ্মা, যমুনাসহ বেশ কয়েকটি নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দেওয়ার ফলে এদের শাখা-প্রশাখায় পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। মনোজ, বড়াল এবং কুমার নদ এ কারণে শুকিয়ে মরে গেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মরিছাপ, হামকুড়া আর হরিহর নদীও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের জন্য মরে গেছে। কাজেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ আমাদের পানিসম্পদের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি।

অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

তোমরা কি জানো, শুধু ঢাকা শহরে দৈনিক কী পরিমাণ কঠিন বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয়? এর পরিমাণ দৈনিক প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন। এর মাত্র অর্ধেক পরিমাণ ঢাকা সিটি কর্পোরশন সংগ্রহ করে ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসে এবং বাকি অর্ধেক নর্দমা বা নালা দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে নদীতে গিয়ে পড়ে।

এছাড়া ঢাকার আশপাশের প্রায় সব শিল্পকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্যও নদীতে ফেলা হয়। এর পরিনাম কী? নদী এসব বর্জ্য দিয়ে ভরে উঠছে, নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিগগিরই বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী মরে যাবে। চট্টগ্রাম শহরের আশপাশের নদীগুলোরও একই অবস্থা।

পানির গতিপথ পরিবর্তন

১৯৭৫ সালে ভারত সরকার ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে গঙ্গার পানির গতিপথ পরিবর্তন করে। ১৯৭৭ সালে গঙ্গার পানি বন্টন নিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের একটি চুক্তি হয়। পরবর্তীকালে পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার জন্য ১৯৯৬ সালে আরেকটি চুক্তি হয়। গঙ্গার পানির এই গতিপথ পরিবর্তনের কারণেই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক নদী পানিশূন্য হয়ে পড়েছে, যা ঐ অঞ্চলকে অনেকটা মরুভূমিতে পরিণত করেছে। শুধু তা-ই নয়, ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে ভারতও কাঙ্খিত ফল পায়নি; বরং নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়া ভারত ব্রহ্মপুত্র নদের পানির গতিপথও পরিবর্তন করে শিলিগুড়ি করিডর দিয়ে পশ্চিমাঞ্চলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ বর্গকিলোমিটার হাওর এলাকাসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলে পানিসম্পদে বিপর্যয় নেমে আসবে। সম্প্রতি ভারত টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তাতেও বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকা পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে। অতএব এ কথা বলা যায় যে, পানির গতিপথ পরিবর্তন পরিবেশের জন্য একটি ভয়াবহ হুমকি।

পানি একটি মৌলিক অধিকার

পানি প্রকৃতির এমন একটি দান, যা প্রায় সব জীবের জন্য অপরিহার্য। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানুষ খাওয়া, গোসল, রান্নাসহ অন্যান্য সকল কাজে পানি ব্যবহার করে আসছে। মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকার হলো খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা। এর প্রত্যেকটিই পানির ওপর নির্ভরশীল। তাই পানি হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার। আর যেহেতু এটি প্রাকৃতিক সম্পদ, কোনো দেশ বা জাতি এটি সৃষ্টি করেনি, তাই পানির প্রতিটি ফোঁটার উপর পৃথিবীর সব মানুষের অধিকার রয়েছে। কাজেই আমরা যখন পানি ব্যবহার করি, তখন মনে রাখতে হবে যে আমরা পৃথিবীর সকল মানুষের একটি সম্পদ ভোগ করছি এবং এটি কোনোমতেই অপচয় করা উচিত হয়। অপচয় করার অর্থই হলো অন্যের অধিকার খর্ব করা, যেটি আমরা কিছুতেই করতে পারি না।

পানির উৎস সংরক্ষণ ও উন্নয়ন

আমরা সবাই জানি, আমাদের বিশাল একটি পানিসম্পদ আছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ব্যবহারযোগ্য পানিসম্পদের পরিমাণ কিন্তু খুবই সীমিত। এ অবস্থায় আমরা যদি পানির উৎস সংরক্ষণে সজাগ না হই, তাহলে একসময় হয়তো ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করতে হবে। যেকোনো ধরনের উন্নয়নকাজে, সেটি শিল্পকারখানা, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি বা নগরায়ণ-যা-ই হোক না কেন সবকিছুতেই পানির প্রয়োজন রয়েছে। আবার এই সকল উন্নয়নের কারণে যদি পানির উৎসগুলোই হুমকির মুখে পড়ে যায়, তাহলে প্রকৃতপক্ষে সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডই থমকে যাবে। কাজেই যেখানে-সেখানে শিল্প-কারখানা, নগরায়ণ না করে অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে সেগুলো করতে হবে, যেন কোনোভাবেই পানির উৎসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ