• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • পলিমার
পলিমার

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

পলিমার

তন্তুর বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার

একটি পোশাক আরামদায়ক কি না তা নির্ভর করে এটি কী ধরনের কাপড় দিয়ে তৈরি তার ওপর। আবার কাপড় তৈরি হয় সুতা থেকে, যা আসে তন্তু থেকে। কাজেই তন্তুর বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে এখন ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম তনুর বৈশিষ্ট্যগুলো জেনে নেওয়া যাক।

তুলা

গরমের দিনে আমরা সুতির পোশাক পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কারণ সুতির তাপ পরিবহণ এবং পরিচলন ক্ষমতা কম। তাই সুতির কাপড় গরম কালে বাইরের গরমকে ভিতরে ঢুকতে বাধা দেয় ফলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং শীতকালে শরীরে তাপ বাইরে যেতে পারে না তাই শরীর গরম থাকে।

প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ তন্তুর মধ্যে প্রধান হলো সুতা। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে (চিত্র ৬.০১) সুতির তন্তুকে অনেকটা নলের মতো দেখায়। নলের মধ্যে যে সরু পদার্থটি থাকে তা প্রথম অবস্থায় 'লুমেন' (Lumen) নামক পদার্থে পূর্ণ থাকে। পরে আঁশগুলো ছাড়িয়ে নেওয়ার পর রোদের প্রভাবে শুকিয়ে যায় এবং নলাকৃতি তদুটি ধীরে ধীরে চ্যাপ্টা হয়ে ক্রমে একটি মোচড়ানো ফিতার মতো রূপ ধারণ করে।

এই ফিতার মতো সুতির আঁশে ১০০ থেকে ২৫০টি পর্যন্ত পাক বা মোচড় থাকে। বস্ত্র বা কাপড় তৈরির সময় এই মোচড়ানো অংশ একে অপরের সাথে সুন্দরভাবে মিশে যায় বলে সুতি বস্ত্র টেকসই হয়। আপাতদৃষ্টিতে সুতি তেমন উজ্জ্বল নয়। তবে ময়েশ্চারাইজেশনের (moisturization) মাধ্যমে একে উজ্জ্বল ও চকচকে করে তোলা যায়। সুতি তনুকে রং করা হলে সেটি পাকা রং হয় এবং তাপ ও ধোঁয়ার ফলে রঙের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। অজৈব এসিডের সংস্পর্শে সুতি তন্ধু নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু অন্যান্য এসিডের সংস্পর্শে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। সুতির বস্ত্র ব্যবহারের তেমন বিশেষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হয় না বলে এর অনেক ধরনের ব্যবহার রয়েছে। সুতি বস্ত্রের একটি প্রধান সীমাবদ্ধতা হচ্ছে এটি সংকুচিত হয়ে যায়।

রেশম (Silk)

আগেকার দিনের রাজা-রানির পোশাক বলতে আমরা সিল্কের বা রেশমি পোশাকই বুঝতাম। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, বিলাসবহুল বস্ত্র তৈরিতে রেশম তনু ব্যবহৃত হয়। রেশমের প্রধান গুণ হচ্ছে এর সৌন্দর্য। তিন শতাধিক রঙের রেশম পাওয়া যায়। রেশম বা পলু পোকা নামে এক প্রজাতির পোকার গুটি থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রেশমের তনু আহরণ করা হয়। রেশম মূলত ফাইব্রেয়ন (Fibroin) নামের এক ধরনের প্রোটিন-জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি। প্রাকৃতিক প্রাণিজ তনুর মধ্যে রেশম সবচেয়ে শক্ত এবং দীর্ঘ। বিভিন্ন গুণাগুণের জন্য রেশমকে তনুর রানি বলা হয়। সূর্যালোকে রেশম দীর্ঘক্ষণ রাখলে এটি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। রেশম হালকা কিন্তু অনেক বেশি উষ্ণ এবং খুবই অল্প জায়গায় রেশমি বা সিল্কের কাপড় রাখা যায়।

পশম (Wool)

আমরা শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য যে পোশাকের কথা সবার আগে ভাবি, সেটি হচ্ছে পশম বা উলের পোশাক। তাপ কুপরিবাহী বলে পশমি পোশাক শীতবস্ত্র হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয়। নমনীয়তা, স্থিতিস্থাপকতা, কুঞ্চন প্রতিরোধের ক্ষমতা, রং ধারণক্ষমতা-এগুলো হচ্ছে উল বা পশমের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এই তনুর মাঝে ফাঁকা জায়গা থাকে যেখানে বাতাস আটকে থাকতে পারে। বাতাস তাপ অপরিবাহী তাই পশম বা উলের কাপড় তাপ কুপরিবাহী। পশমি কাপড় পরে থাকলে শীতের দিনে শরীর থেকে তাপ বেরিয়ে যেতে পারে না, তাই এটি গায়ে দিলে আমরা গরম অনুভব করি। লঘু এসিড এবং ক্ষারে পশমের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তবে মথ পোকা খুব সহজে পশম তন্তু নষ্ট করে। এছাড়া কিছু ছত্রাক পশম তনুকে খুব সহজে আক্রান্ত করে নষ্ট করে দিতে পারে।

পশম একটি অতি প্রাচীন তন্তু। বিভিন্ন জাতের ভেড়া বা মেষের লোম থেকে পশম উৎপন্ন হয়। প্রায় ৪০ জাতের মেষ থেকে ২০০ ধরনের পশম তৈরি করা হয়। জীবন্ত মেষ থেকে লোম সরিয়ে যে পশম তৈরি করা হয়, তাকে বলে 'ফ্লিস উল' (Fleece wool)। মৃত বা জবাই করা মেষ থেকে যে পশম তৈরি করা হয়, তাকে বলে 'পুন্ড উল' (Pulled wool)। মানুষের চুল ও নখে যে প্রোটিন থাকে, অর্থাৎ কেরাটিন (Keratin), সেটি দিয়ে গঠিত পশম তনুর মধ্যে আলপাকা, মোহেরা, কাশ্মিও, ভিকুনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

নাইলন

কৃত্রিম নন-সেলুলোজিক তন্তুর মধ্যে নাইলন সর্বপ্রধান। সাধারণত এডিপিক এসিড এবং হেক্সামিথিলিন ডাই অ্যামিন নামক রাসায়নিক পদার্থের পলিমারকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাইলন তৈরি হয়। নাইলনকে প্রধানত দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়- নাইলন ৬৬ এবং নাইলন ৬।

নাইলন খুব হালকা ও শক্ত। ভিজলে এর স্থিতিস্থাপকতা দ্বিগুণ হয়। এটি আগুনে পোড়ে না, তবে গলে গিয়ে বোরাক্স বিডের Borax Bead-এর মতো স্বচ্ছ বিড গঠন করে। কার্পেট, দড়ি, টায়ার, প্যারাসুটের কাপড় ইত্যাদি তৈরি করতে নাইলন ব্যবহৃত হয়।

রেয়ন

কৃত্রিম তন্তুর মধ্যে রেয়ন (চিত্র ৬.০২) হলো প্রধান এবং প্রথম তন্তু। উদ্ভিজ্জ সেলুলোজ ও প্রাণিজ পদার্থ থেকে রেয়ন তৈরি করা হয়। তিন প্রকারের প্রধান রেয়ন হলো (১) ভিসকোস, (২) কিউপ্রামোনিয়াম এবং (৩) অ্যাসিটেট। এগুলো শুধু সুন্দর, উজ্জ্বল, মনোরম, অভিজাত এবং আকর্ষণীয় নয়, মোটামুটি বেশ টেকসই। লঘু এসিডের সাথে তেমন কোনো বিক্রিয়া করে না কিন্তু ধাতব লবণে রেয়ন সহজে বিক্রিয়া করে। অধিক উত্তাপে রেয়ন গলে যায়। তাই রেয়ন কাপড়ে বেশি গরম ইস্ত্রি ব্যবহার করা যায় না।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ