- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- নবম-দশম শ্রেণি
- আমাদের সম্পদ
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
আমাদের সম্পদ
মাটির গঠন
তোমরা কি বলতে পার মাটি আমাদের কী কী কাজে লাগে?
প্রথমত, মাটিতে গাছপালা জন্মায়, আর সেই গাছপালা থেকেই আমরা খাদ্যশস্য পাই। অক্সিজেন ছাড়া আমরা এক মিনিটও বেঁচে থাকতে পারব না, সেই অত্যাবশ্যকীয় অক্সিজেন গ্যাসও আমরা পাই সেই গাছপালা থেকে। মাটি না থাকলে গাছপালা জন্মাতে পারত না, আমরা খাদ্যশস্য আর অক্সিজেন পেতাম না। দ্বিতীয়ত, মাটিতেই আমরা ঘরবাড়ি, অফিস, রাস্তাঘাট তৈরি করি। শুধু তা-ই নয়, মাটির নিচ থেকে জীবনধারণের জন্য দরকারি পানির বড় একটি অংশ আসে। এছাড়াও আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানির (যেমন- তেল, গ্যাস, কয়লা) সিংহভাগ আমরা আহরণ করি মাটির নিচ থেকে। একইভাবে সোনা, রূপা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম, লোহাসহ নানা রকম খনিজ পদার্থ এই মাটিরই অংশ। এখন আমরা আমাদের অতি প্রয়োজনীয় এই মাটির গঠন সম্পর্কে জেনে নিই।
মাটি হলো নানারকম জৈব আর অজৈব রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ। বিভিন্ন এলাকার মাটির গঠন ভিন্ন হয়। মাটিতে বিদ্যমান পদার্থগুলোকে সাধারণত চার ভাগে ভাগ করা হয়। এরা হলো খনিজ পদার্থ, জৈব পদার্থ, বায়বীয় পদার্থ আর পানি। তবে এসব পদার্থ বেশিরভাগ সময়েই একটি আরেকটির সাথে মিশে একধরনের জটিল মিশ্রণ তৈরি করে। তাই একটিকে আরেকটি থেকে সহজে পৃথক করা যায় না। মাটিতে বিদ্যমান খনিজ পদার্থগুলো অজৈব যৌগ হয়।
মাটিতে বিদ্যমান প্রধান প্রধান খনিজ পদার্থ বা অজৈব পদার্থগুলো হলো ক্যালসিয়াম (Ca), অ্যালুমিনিয়াম (Al), ম্যাগনেসিয়াম (Mg), লোহা (Fe), সিলিকন (Si), পটাশিয়াম (K) ও সোডিয়াম (Na), অল্প পরিমাণে ম্যাংগানিজ (Mn), কপার (Cu), জিংক (Zn), কোবাল্ট (Co), বোরন (B), আয়োডিন (1) এবং ফ্লোরিন (F)। এছাড়া মাটিতে কার্বোনেট, সালফেট, ক্লোরাইড, নাইট্রেট এবং ক্যালসিয়াম (Ca), ম্যাগনেসিয়াম (Mg), পটাসিয়াম (K), সোডিয়াম (Na) ইত্যাদি ধাতুর জৈব লবণও পাওয়া যায়।
মাটিতে বিদ্যমান জৈব পদার্থ হিউমাস (Humus) নামে পরিচিত। হিউমাস আসলে অ্যামিনো এসিড, প্রোটিন, চিনি, অ্যালকোহল, চর্বি, তেল, লিগনিন, ট্যানিন এবং অন্যান্য অ্যারোমেটিক যৌগ নিয়ে গঠিত একটি বিশেষ জটিল পদার্থ। এটি দেখতে অনেকটা কালচে রঙের হয়। এই হিউমাস তৈরি হয় মৃত গাছপালা আর প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে।
আয়তন অনুসারে মাটিতে বিদ্যমান পদার্থগুলো ৮.০১ চিত্রে দেখানো হলো
মাটিতে বিদ্যমান পানির ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে গাছপালার জন্য। তোমাদের কি মনে প্রশ্ন জেগেছে যে মাটিতে পানি কোথায় আর কীভাবে থাকে? মাটিতে পানি থাকে মাটির কণার মাঝে থাকা ফাঁকা জায়গাগুলোতে বা রন্ধ্রে। এই রন্ধ্রের আকার-আকৃতির উপর নির্ভর করে মাটির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা। তোমরা বলো দেখি, বালি আর কাদামাটির মধ্যে কোনটির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি? নিঃসন্দেহে কাদা মাটির। এর কারণ হলো, কাদামাটির বেলায় মাটির কণাগুলোর ফাঁকে ফাঁকে থাকা রন্ধ্র খুব সূক্ষ্ম, যা পানি ধরে রাখে। অন্যদিকে বালি মাটির বেলায় রন্দ্রগুলো বড় বড়, যে কারণে পানি আটকে থাকে না বা ধরে রাখতে পারে না।
ফাঁকা স্থান বা রন্দ্র ছাড়াও মাটির কণায় শোষিত অবস্থায়ও পানি থাকতে পারে। মাটিতে থাকা হিউমাস পানি শোষণ করে রাখতে পারে। হিউমাসে শোষিত পানি সহজে গাছপালায় স্থানান্তরিত হয় না।
মাটিতে পানি না থাকলে কী সমস্যা হতো? মাটিতে পানি না থাকলে কী সমস্যা হতো তার বড় প্রমাণ হলো মরুভূমি যেখানে দু-একটি বিশেষ প্রজাতির গাছ ছাড়া আর কিছুই জন্মায় না। অর্থাৎ মাটিতে পানি না থাকলে গাছপালা জন্মাতে পারত না এবং জন্মালেও বেড়ে উঠতে পারত না। তোমরা জনো যে, উদ্ভিদকোষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রোটোপ্লাজম, আর এই প্রোটোপ্লাজমের শতকরা ৮৫-৯৫ ভাগই হলো পানি, যা আসে মাটি থেকে। গাছ পাতায় থাকা স্টোমাটা (Stomata) দিয়ে কিছু পানি গ্রহণ করলেও বেশির ভাগই গাছের মূলের মাধ্যমে মাটি থেকে আসে। মাটি থেকে পাওয়া পানির সাহায্যেই গাছপালা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে নিজেদের খাবার তৈরি করে আর আমাদেরকে অক্সিজেন দেয়। গাছপালা তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি (যেমন- খনিজ পদার্থ, নাইট্রোজেন, ফসফরাস ইত্যাদি) মাটি থেকে সরাসরি গ্রহণ করতে পারে না। এগুলো গ্রহণ করে মূলের সাহায্যে এবং এক্ষেত্রে পানি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। কাজেই পানি না থাকলে উদ্ভিদ মাটি থেকে এসব পুষ্টিও গ্রহণ করতে পারত না, ফলে এদের বেড়ে ওঠাও সম্ভব হতো না।
এবারে আসা যাক মাটিতে থাকা বায়বীয় পদার্থের প্রসঙ্গে। মাটির কণার মধ্যকার ফাঁকা স্থান বা রন্ধ্রে যেমন পানি থাকতে পারে, তেমনি বায়বীয় পদার্থ বা বাতাসও থাকতে পারে। মাটিতে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন আর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস থাকে।
মজার ব্যাপার হলো, মাটিতে থাকা গ্যাসের সাথে কিন্তু সবসময় বায়ুমণ্ডলে থাকা গ্যাসের বিনিময় হতে থাকে। অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের গ্যাস মাটিতে যায় এবং মাটিতে থাকা গ্যাস বায়ুমণ্ডলে চলে আসে। এই প্রক্রিয়াকে মাটির বায়বায়ন (Soil Aeration) বলে। এখন প্রশ্ন হলো, মাটিতে থাকা গ্যাস কি কোনো কাজে লাগে? হ্যাঁ, অবশ্যই এটি কাজে লাগে। মাটিতে নানারকম উপকারী অণুজীব (Microorganism) থাকে। এর মধ্যে কিছু অণুজীবের জন্ম আর বেড়ে ওঠার জন্য অক্সিজেন অত্যাবশ্যক, অক্সিজেন না থাকলে এরা বাঁচতে পারে না। আবার অক্সিজেন পানিতে অদ্রবণীয় অনেক খনিজ পদার্থকে ভেঙে দ্রবণীয়
পদার্থে পরিণত করে, যা পরে মাটিতে থাকা পানিতে দ্রবীভূত হয় এবং পরে উদ্ভিদে স্থানান্তরিত হয়। ৮.০২ চিত্রে মাটির কণা, পানি আর বাতাস কীভাবে থাকে সেটি দেখানো হলো।
আমরা যদি কোনো একটি স্থানের মাটির গভীরে যেতে থাকি, তাহলে কী পাব? সব জায়গায় কি মাটির গঠন একই হবে, নাকি ভিন্ন হবে? নিচের দিকে মাটির গঠন পরীক্ষা করে দেখা যায় যে মাটি ৪টি সমান্তরাল স্তরে বিভক্ত। প্রতিটি স্তরকে দিগ্বলয় বা হরাইজোন (Horizon) বলে। সবার উপরে যে স্তরটি থাকে, তাকে বলে হরাইজোন A (Horizon A) বা টপ সয়েল (Top Soil)। এই স্তরেই উদ্ভিদ আর প্রাণীর মরা দেহে পচন শুরু হয় এবং উৎপাদিত পদার্থ, বিশেষ করে হিউমাসসহ অন্যান্য জৈব পদার্থ এই স্তরেই থাকে। এই স্তরে সাধারণত খনিজ পদার্থ থাকে না, সেগুলো পানির সাথে প্রবাহিত হয়ে নিচের স্তরে চলে যায়।
প্রথম স্তরের মাটি সাধারণত বালুময় হয়। মাটির দ্বিতীয় স্তরটিকে সাবসয়েল (Sub Soil) বা হরাইজোন B (Horizon B) বলে। এ স্তরে সামান্য পরিমাণ হিউমাস থাকে। তবে এই স্তর ওপরের স্তর থেকে আসা খনিজ পদার্থে ভরা থাকে। মাটির তৃতীয় স্তরটিকে হরাইজোন C (Horizon C) বলে। মাটি তৈরি হয় শিলা থেকে, যেখানে জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়া জড়িত। মূল শিলা আস্তে আস্তে নরম হয়ে এক পর্যায়ে মাটির কণায় পরিণত হয়। মূল শিলা থেকে পরিবর্তিত হয়ে প্রথমে যে নরম শিলা তৈরি হয়, সেগুলো হরাইজোন C-তে থাকে। এই নরম শিলা মূল শিলা থেকে নরম কিন্তু মাটির কণা থেকে অনেক গুণ শক্ত। এই নরম শিলাই পরবর্তী সময়ে পরিবর্তিত হয়ে মাটির কণায় পরিণত হয়। এই স্তরের নিচে থাকে Horizon D বা মূল শিলা যা খুবই শক্ত। ৮.০২ (খ) চিত্রে মাটির এই উল্লম্ব গঠন দেখানো হলো।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ