- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- নবম-দশম শ্রেণি
- দুর্যোগের সাথে বসবাস
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
দুর্যোগের সাথে বসবাস
দুর্যোগ সৃষ্টির কারণ, প্রতিরোধ, মোকাবিলার কৌশল এবং তাৎক্ষণিক করণীয়
বন্যা
নদীমাতৃক বাংলাদেশের জন্য বন্যা (চিত্র ৯.০৩) একটি নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিবছরই বন্যায় দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে ফসল, গবাদি পশু এবং অন্যান্য সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি হয়, যা মাঝে মাঝে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ১৯৭৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯০, ১৯৯৫, ২০০৪ এবং ২০০৭ সালের প্রলয়ংকরী বন্যায় দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ১৯৭৪ সালে এই ক্ষতির মাত্রা এত বেশি ছিল যে সেটি বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এখন প্রশ্ন হলো কেন বন্যা হয়, এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ কী? বন্যা হওয়ার পিছনে বেশ কিছু জটিল কারণ আছে। যার মাঝে অন্যতম কারণটি হচ্ছে নদ-নদীগুলোর পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়া। নদীভাঙন, বর্জ্য অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে নদ-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদ-নদীগুলোর পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। যে কারণে ভারী বর্ষণ বা উজানের অববাহিকা থেকে আসা পানি খুব সহজে সাগরে যেতে পারে না এবং নদী ভরে দুকূল ছাপিয়ে বন্যা সৃষ্টি করে। এছাড়া মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট জোয়ারের কারণে উজানের পানি অনেক সময় নদ-নদীর মাধ্যমে সাগরে যেতে পারে না। ফলে নদনদীর আশপাশের এলাকায় বন্যা সৃষ্টি হয়। আবার বাংলাদেশের বেশির ভাগ এলাকা সমতল হওয়ায় বৃষ্টির পানি সহজে নদ-নদীতে গিয়ে পড়তে পারে না। কাজেই বিস্তীর্ণ এলাকা, বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। যেমন- ঘূর্ণিঝড় আইলা ও সিডর এবং এদের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যার কথা আমরা সবাই জানি।
এখন আমরা এই বন্যা প্রতিরোধ, মোকাবিলার কৌশল, করণীয় ও উপায় সম্পর্কে জেনে নেই। যেহেতু বন্যা সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ হলো নদনদীসমূহের সীমিত পানি ধারণক্ষমতা। তাই বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে নদী খনন করে এদের পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে যেন, ভারী বর্ষণ বা উজানের পানি এলেও বন্যা না হয়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ১৯৬০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে প্রায় প্রতিবছরই অনেক জায়গায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙনের ফলে (বিশেষ করে সিরাজগঞ্জ জেলায়) বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। অনেক সময়েই এটি ঘটে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কিংবা ব্যক্তিদের অদক্ষতা বা অব্যবস্থাপনার কারণে।
নদী শাসন করেও বন্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া যায়। নদী শাসন হচ্ছে, নদীর পাড়ে পাথর, সিমেন্টের ব্লক, বালির বস্তা, কাঠ বা বাঁশের ঢিবি তৈরি করে এগুলোর মাধ্যমে বন্যা প্রতিরোধ করা। এছাড়া নদীর পাড়ে গাছ লাগানো, পানিপ্রবাহের জন্য লুইস গেট নির্মাণ-এগুলোও নদী শাসনেরই অংশ।
বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কবাণী
বন্যা সম্পর্কে আগাম পূর্বাভাস এবং সতর্কবাণী প্রচার করে বন্যাজনিত ক্ষতির পরিমাণ অনেকখানিই কমানো যেতে পারে। বাংলাদেশের ৫৮টি নদীর উৎপত্তিস্থল হচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটান। তাই সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া অনেক সময়েই সম্ভব হয় না। কাজেই আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে, যেন আগে থেকেই এ সংক্রান্ত সব তথ্য পাওয়া যায় এবং তার উপর ভিত্তি করে একটা ফলপ্রসূ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এছাড়া নিচু এবং বন্যাপ্রবণ এলাকায় যেন জনবসতি গড়ে উঠতে না পারে, সেজন্য ভূমি ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং করণীয় সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা বন্যা মোকাবেলায় অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। তাই এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ভয়াবহ বন্যা হলে সরকারি উঁচু ভবন কিংবা স্থাপনা যেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সাময়িক আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করতে পারে তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আবার উঁচু স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র বা মালামাল সংরক্ষণ কেন্দ্র, উঁচু রাস্তাঘাট, উঁচু স্থানে বাজার কিংবা স্কুল ইত্যাদি তৈরি করে বন্যা মোকাবেলা করা যায়। বন্যার সময় বেশির ভাগ রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যায়। তখন চলাচলের জন্য স্পিডবোট এবং নৌকার ব্যবস্থা রাখাও বন্যা মোকাবেলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
বন্যার আগাম প্রস্তুতিও বন্যা মোকাবিলার একটি কৌশল হিসেবে গণ্য করা হয়। বিপুল জনসংখ্যা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়লে এবং আগে থেকে পর্যাপ্ত খাদ্যদ্রব্য, পানি, ওষুধপত্র ইত্যাদির ব্যবস্থা করে না রাখলে তা ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। কোনো একটি এলাকা বন্যাকবলিত হলে তখন সেখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য জীবন যাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই তাদের পুনর্বাসনের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ