• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • এসো বলকে জানি
এসো বলকে জানি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

এসো বলকে জানি

বলের প্রকৃতি (Nature of Force)

চারটি মৌলিক বল

পৃথিবীতে কত ধরনের বল আছে জিজ্ঞেস করা হলে তোমরা নিশ্চয়ই বলবে অনেক ধরনের। কোনো কিছুকে যদি ধাক্কা দিই, সেটা একটা বল, যে টানে ট্রাক বোঝা টেনে নিয়ে যায়, সেটা একটা বল, যে টানে ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে, সেটা একটা বল, চুম্বক যে টানে লোহাকে আকর্ষণ করে সেটা একটা বল, বোমা যে ধাক্কায় বিস্ফোরণে ঘরবাড়ি উড়িয়ে দেয়, সেটা একটা বল, ক্রেন যে টানে কোনো কিছুকে টেনে তোলে, সেটা একটা বল। একটুখানি সময় দিলেই এ রকম নানা ধরনের বলের তোমরা একটা বিশাল তালিকা তৈরি করতে পারবে।
কিন্তু চমকপ্রদ ব্যাপারটি কী জানো? প্রকৃতিতে মাত্র চার রকমের বল রয়েছে, ওপরে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোকে বিশ্লেষণ করা হলে দেখা যাবে, এগুলো ঘুরে-ফিরে এই চার রকমের বাইরে কোনোটা নয়। আসলে মৌলিক বল মাত্র চারটি। সেগুলো হচ্ছে: মহাকর্ষ বল, তড়িৎ চৌম্বক বা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল, দুর্বল নিউক্লীয় বল ও সবল নিউক্লীয় বল।

মহাকর্ষ বল (Gravitational Force)

এই সৃষ্টিজগতের সকল বস্তু তাদের ভরের কারণে একে অপরকে যে বল দিয়ে আকর্ষণ করে, সেটাই হচ্ছে মহাকর্ষ বল। এই মহাকর্ষ বলের কারণে গ্যালাক্সির ভেতরে নক্ষত্ররা ঘুরপাক খায় কিংবা সূর্যকে ঘিরে পৃথিবী ঘোরে, পৃথিবীকে ঘিরে চাঁদ ঘোরে। পৃথিবীর মহাকর্ষ বল যখন আমাদের ওপর কাজ করে, আমরা সেটাকে বলি মাধ্যাকর্ষণ। এই মাধ্যাকর্ষণ বল আমাদেরকে নিচের দিকে (পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে) টেনে রেখেছে এবং এর কারণেই আমরা নিজেদের ওজনের অনুভূতি পাই।
পদার্থবিজ্ঞানের একটি চমকপ্রদ বল হচ্ছে মহাকর্ষ বল। ভর আছে সেরকম যেকোনো বস্তু অন্য বস্তুকে মহাকর্ষ বল দিয়ে আকর্ষণ করে।

তড়িৎ চৌম্বক বল বা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল (Electromagnetic Force)

চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে সেটা দিয়ে কাগজের টুকরোকে আকর্ষণ করা বা চুম্বক দিয়ে অন্য চুম্বককে আকর্ষণ-বিকর্ষণ করার কাজ আমাদের অনেকেই কখনো না কখনো করেছি। যদিও তড়িৎ বা বিদ্যুৎ এবং চুম্বকের বলকে আলাদা ধরনের বল মনে হয়, আসলে দুটি একই বল শুধু দুভাবে দেখা যায়। মাধ্যাকর্ষণ বলের তুলনায় বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল অনেক বেশি শক্তিশালী (১০৩৬ গুণ বা ট্রিলিওন ট্রিলিওন ট্রিলিওন গুণ শক্তিশালী!) কথাটা যে সত্যি সেটা নিশ্চয়ই তোমরা সহজেই অনুমান করতে পারবে। কারণ যখন তুমি একটা চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে একটা কাগজকে আকর্ষণ করে তুলে নাও, তখন কিন্তু সেই কাগজটাকে পুরো পৃথিবী তার সমস্ত ভরের মাধ্যাকর্ষণ বল দিয়ে টেনে রাখার চেষ্টা করে, তবুও তোমার চিরুনির অল্প একটু আধান সেই বিশাল পৃথিবীর পুরো মাধ্যাকর্ষণকে হারিয়ে দেয়।

দুর্বল নিউক্লীয় বল (Weak Nuclear Force)

এটাকে দুর্বল নিউক্লিয় বল বলা হয় কারণ এটা তড়িৎ চৌম্বকীয় বল থেকে দুর্বল (প্রায় ট্রিলিওন গুণ) কিন্তু মোটেও মহাকর্ষ বলের মতো এত দুর্বল নয়। মহাকর্ষ এবং তড়িৎ চৌম্বকীয় বল যেকোনো দূরত্ব থেকে কাজ করতে পারে কিন্তু এই বলটা খুবই অল্প দূরত্বে (১০-১৮ "m") কাজ করতে পারে। তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে যে বেটা (৪) রশ্মি বা ইলেকট্রন বের হয় সেটার কারণ এই দুর্বল নিউক্লীয় বল।

সবল নিউক্লীয় বল (Strong Nuclear Force)

এটি হচ্ছে সৃষ্টি জগতের সবচেয়ে শক্তিশালী বল, তড়িৎ চৌম্বক বল থেকেও একশগুণ বেশি শক্তিশালী কিন্তু এটাও খুবই অল্প দূরত্বে (১০-১৫ "m") প্রধানতঃ কাজ করে। পরমাণুর কেন্দ্রে যে নিউক্লিয়াস রয়েছে তার ভেতরকার প্রোটন এবং নিউট্রনের নিজেদের মধ্যকার এই প্রচণ্ড শক্তিশালী বলের মাধ্যমে তারা নিজেদের আটকে রাখে। প্রচণ্ড বলে আটকে থাকার কারণে এর মাঝে অনেক শক্তি জমা থাকে তাই বড় নিউক্লিয়াসকে ভেঙে কিংবা ছোট নিউক্লিয়াসকে জোড়া দিয়ে এই বলের কারণে অনেক শক্তি তৈরি করা সম্ভব। নিউক্লিয়ার বোমা সে জন্য এত শক্তিশালী। সূর্য থেকে প্রাপ্ত আলো ও তাপ এই বলের কারণে তৈরি হয়।

বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, এই চার ধরনের বলের মূল এক জায়গায় এবং তাঁরা সবগুলোকে এক সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন। তড়িৎ চৌম্বক (বিদ্যুৎ চৌম্বকীয়) এবং দুর্বল নিউক্লিয়ার বলকে ইতোমধ্যে একই সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছে এবং সেটি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি আকাশছোঁয়া সাফল্য। (কাজেই তুমি ইচ্ছে করলে বলতে পার বল তিন ধরনের: মহাকর্ষ, ইলেকট্রো উইক (Electro-weak) এবং নিউক্লিয়ার বল (কেউ এটাকে ভুল বলতে পারবে না)। অন্যগুলোকেও একসূত্রে গাঁথার জন্য বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ